shono
Advertisement

রাখে মিলার, মারে কে! সতীর্থের ধুন্ধুমারে আস্থা রেখেই কাপ জয়ের স্বপ্নে বিভোর রশিদরা 

রাজস্থানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে, হুডখোলা বাসে করে গোটা শহর ঘোরানো হতে পারে হার্দিক পাণ্ডিয়াদের।
Posted: 02:29 PM May 29, 2022Updated: 03:07 PM May 29, 2022

আলাপন সাহা: গুগলে সার্চ করলে দেখাচ্ছে তাপামাত্রা প্রায় বিয়াল্লিশ ডিগ্রির কাছে। কিন্তু আদতে সেটা আটচল্লিশ-উনপঞ্চাশের মতো হবে। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর পর মনে হতে পারে গায়ে কেউ বুঝি ছ্যাঁকা-ট্যাঁকা দিচ্ছে! এখানে আইপিএল ফাইনালের আবহটাও তো ঠিক এখানকার আবহাওয়ার মতোই। সবাই প্রচণ্ড তেতে। না হলে গোটা শহরের সব হোটেল একসঙ্গে হাউসফুল কী করে?

Advertisement

ইডেনে প্লে অফে টিকিট নিয়ে হাহাকার দেখেছে কলকাতাবাসী। কিন্তু হোটেল নিয়ে হাহাকারের মাত্রাটা এমন জায়গায় পৌঁছতে পারে, সেটা বোধহয় এখানে না এলে বোঝা সম্ভব হত না। ‘নো ভ্যাকেন্সি বোর্ডের’ মতো ‘নো রুম অ্যাভেলেবল’ ঝোলানো। মাঝারি মানের যে সব হোটেলগুলোতে দেড় হাজারে ঘর পাওয়া যেত, তারা এখন দর হাঁকিয়ে প্রায় ডাবল করে দিয়েছে। কোথাও শনিবারের জন্য ঘর পাওয়া গেলেও, হোটেল কর্মীরা গোমড়া মুখ করে বলে দিচ্ছেন ‘দাদা, কাল কিন্তু এখানে থাকতে পারবেন না।’ বেশিরভাগ হোটেলে শনি-রবি দু’দিনই কোনও
ঘর নেই। 

[আরও পড়ুন:ওয়ার্নকে শ্রদ্ধা জানাতে বিশেষ উদ্যোগ, ফাইনালে প্রথম আইপিএলের চ্যাম্পিয়নদের আমন্ত্রণ রাজস্থানের]

শোনা গেল, আশপাশের শহর যেমন বরোদা-রাজকোট থেকে সবাই গাড়ি করে উইকএন্ডে আমেদাবাদ চলে আসছেন। অতীতে যে এখানে বড় ম্যাচ হয়নি, সেটা নয়। ভারত-পাক ক্রিকেট যুদ্ধ দেখেছে মোতেরা। এগারো বছর আগে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু হোটেল নিয়ে হাহাকারের মাত্রাটা এই পর্যায়ে পৌঁছয়নি বলেই শোনা গেল।

এখানে প্রথম আইপিএলের (IPL) মেগা ফাইনাল। ফাইনালের আগে এক ঘণ্টার জমকালো অনুষ্ঠান। এ আর রহমান, রণবীরের সিংয়ের পারফরম্যান্স। ফাইনালে থাকবেন অমিত শাহ এবং থাকতে পারেন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
স্টুডিওতে থাকবেন আমির খান। এদিন শোনা গেল, শুধু আমির একা নন তাঁর সঙ্গে থাকছেন বলিউডের আর এক তারকা—অক্ষয় কুমার।

এর সঙ্গে আবার ঘরের টিম নামছে। ফাইনালের টিকিট প্রায় নিঃশেষিত। গুজরাত টাইটান্সকে (Gujarat Titans) নিয়ে আবেগের মাত্রাটা মারাত্মক রকমের। চেন্নাই সুপার কিংসকে হারিয়ে কেকেআর প্রথমবার আইপিএল জেতার পর হুডখোলা বাসে করে শহরের রাস্তায় ঘুরেছিলেন গৌতম গম্ভীররা। আমেদাবাদেও সেরকমই পরিকল্পনা চলছে। খবর নিয়ে জানা গেল, রবিবার রাজস্থান রয়্যালসকে (Rajasthan Royals) হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে, হুডখোলা বাসে করে গোটা শহর ঘোরানো হতে পারে হার্দিক পাণ্ডিয়াদের।

এর বাইরে আরও আছে। পুরো টিমকে মুম্বইয়ে জমকালো সংবর্ধনা দেওয়া হবে। গুজরাত টিমের মালিকরা বেশিরভাগ সময়ই মুম্বইয়ে থাকেন। তাই সেখানে জমকালো একটা সংবর্ধনার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। সেটা অবশ্য ফাইনালে জেতা কিংবা হারার উপর নির্ভর করবে না।

এসব তো গেল মাঠের বাইরের ব্যাপার-স্যাপার। মাঠের যুদ্ধের উত্তাপটাও সমানভাবে ছড়াচ্ছে। ইডেনের প্লে অফ যুদ্ধের মতো এখানেও আবার সেই জস বাটলার বনাম মহম্মদ সামি, রশিদ বনাম সঞ্জু। ট্রেন্ট—মিলারের লড়াই। চব্বিশ ঘণ্টা আগেই আরসিবির বিরুদ্ধে বিধ্বংসী সেঞ্চুরি করে ‘জস দ্য বস’ বুঝিয়েছেন ফাইনালের আগে তিনি কী পরিমাণ তেতে। হুঙ্কার থাকছে গুজরাত শিবির থেকেও। রাজস্থানে যদি বাটলার থাকেন, গুজরাতে মিলার আছেন। যিনি ইডেনে শেষ ওভারে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণকে পরপর তিনটে ছয় মেরে ফাইনালের টিকিট কনফার্ম করেছিলেন। ফাইনাল-যুদ্ধের আগে সেই মিলারের পাশে বসেই ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে রশিদ খান প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে গেলেন প্রতিপক্ষ যা-ই টার্গেট দিক না কেন তাতে চিন্তার কিছু নেই। কারণ তাঁদের মিলার আছেন।

রশিদ বলছিলেন, “ডেভিডের মতো একজনের এরকম ফর্মে থাকা মানে টপ অর্ডারের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। টি-টোয়েন্টিতে চার, পাঁচ কিংবা ছয় নম্বর জায়গাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি এরকম ফর্মে থাকে, তাহলে টিমকে জিততে সাহায্য করে। বিপক্ষ কী টার্গেট দিচ্ছে, সেটা কোনও ব্যাপার নয়।”

একই সঙ্গে এটাও বলা হচ্ছে—এই টিম কোনও একজনের উপর নির্ভর করে না। দলের সবাই এক একজন তারকা। শুক্রবার ইউনিভার্সিটি মাঠে প্র্যাকটিসে নেমেছিলেন হার্দিকরা। এদিন সন্ধেতে মোতেরায়। ইডেনে যেরকম স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে প্র্যাকটিস দেখার সুযোগ ছিল, এখানে সেরকম কিছুই নেই। প্রচণ্ড কড়াকড়ি। গুজরাত ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে বলা হল, যেহেতু পুরোটাই বায়োবাবল জোন তাই কাউকেই বাইরে থেকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। দূর থেকেও প্র্যাকটিস দেখার সু়যোগ মিলবে না। রাজস্থানের অবশ্য ট্রেনিংয়ের কোনও ব্যাপার ছিল না। বাটলাররা বিশ্রামেই কাটালেন।

যা শোনা যাচ্ছে, তাতে এখানে গতির উইকেট হতে চলেছে। আইপিএল শুরুর আগে আমেদাবাদে কিছুদিন প্র্যাকটিস করেছিলেন হার্দিকরা। রশিদ খান সেটাও বলেও দিয়েছেন। বলছিলেন, তাঁরা এখানে বেশ কিছুদিন ট্রেনিং করেছিলেন। জানেন কীরকম উইকেট হতে চলেছে। এটাও শোনা গেল, টিমের বেশিরভাগ সবাই আরসিবি বনাম রাজস্থান ম্যাচ দেখেছেন। সেটা দেখার পর হার্দিকদের মনে হয়েছে, পেসাররা বাড়তি সাহায্য পাবেন। লকি ফার্গুসনকে হয়তো ফেরানো হতে পারে আলঝারি জোসেফের জায়গায়।

দাঁড়ান, এতক্ষণ তো বলাই হয়নি দু’জনের কথা। ঋদ্ধিমান সাহা আর মহম্মদ সামি। কেকেআর ফাইনালের ধারে কাছে নেই। বঙ্গ ক্রিকেটপ্রেমীদের ফাইনাল ঘিরে এখন যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে এই দু’জন। সামির এটাই প্রথম আইপিএল ফাইনাল। ঋদ্ধির অবশ্য ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আছে। কেকেআরের বিরুদ্ধে ফাইনালে সেঞ্চুরি করলেও ট্রফি অধরা থেকেই যায়। ঋদ্ধি এবার শাপমুক্তি চান। ঋদ্ধি একা কেন, গোটা গুজরাত চাইছে নতুন ইতিহাস লিখতে। সিএসকের পর প্রথম টিম হিসাবে ঘরের মাঠে আইপিএলের তাজ জিততে।

আগামী চব্বিশ ঘণ্টায় এখানে তাপমাত্রার পারদ বাড়ুক না বাড়ুক, উত্তেজনার পারদটা যে চড়চড় করে বাড়বে, সেটা লিখে দেওয়াই যায়!

আজ আইপিএলে– রাজস্থান রয়‌্যালস বনাম গুজরাত টাইটান্স
ফাইনাল, রাত ৮-০০, আমেদাবাদ, স্টার স্পোর্টস

[আরও পড়ুন: আইপিএলের বিপদ! আরও কমবে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ, উদ্বেগে খোদ আইসিসির চেয়ারম্যান]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement