আলাপন সাহা: গৌতম গম্ভীর জমানার পর কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রতিবছরের কাহিনীটা ঠিক একই। কেকেআর প্রতিবার আইপিএল (IPL 2023) খেলবে। প্রথমদিকে একটা-দুটো জিতে তুমুল লম্ফঝম্ফ চলবে। তারপর দেদার হারবে। হারতে হারতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর আচমকা ঘুরে দাঁড়াবে। তারপর আবার থেঁতলানি খেয়ে তলিয়ে যাবে ব্যর্থতার সমুদ্র-অতলে। মাঝে মাত্র একবার এহেন ধ্বংসস্তূপ থেকে দু’দ্দাড়িয়ে ফিরে এসেছিল কেকেআর। ইয়ন মর্গ্যানের (Eion Morgan) ক্যাপ্টেন্সিতে। বাকি বছরের কাহিনি অবিকল এক। বছরের পর বছর ধরে যা নাইট সংসারে কাটা রেকর্ডের মতো বেজেই চলেছে। ব্যর্থতার কাটা ঘায়ে বারবার ছিটিয়ে চলেছে অপমানের নুন।
বৃহস্পতিবার ইডেনে (Eden Gardens) সেই একই হাহাকার, একই যন্ত্রণার চাপ চাপ ছবি পড়ে থাকল নাইটদের জন্য। পরিস্থিতি যা, তাতে নাইটদের উপর অলৌকিকের অফুরান আশীর্বাদ না বর্ষণ হলে, তারা প্লে অফ যাচ্ছে না। হাতে পড়ে দুটো ম্যাচ। বড়জোর ১৪ পয়েন্টে শেষ করা যাবে। আর শেষে নানা অঘটন, নানা যোগ-বিয়োগ ঘটে যদি কোনও একটা ১৪ পয়েন্টে কোয়ালিফাই করে, তবেই ছিটেফোঁটা সম্ভাবনা। কিন্তু সেখানে আবার বড় সমস্যা নেট রান রেট। যা এখন অনেকটা মাইনাসে। যার প্রভূত উন্নতি ঘটাতে হবে।
[আরও পড়ুন: দ্য কেরালা স্টোরি: শুভাপ্রসন্নকে নিশানা সায়নী ঘোষের, ‘ওর জন্ম কবে?’, পালটা প্রশ্ন শিল্পীর]
শুক্রবার নীতীশ প্রথম ওভার বল করতে এসেছিলেন যশস্বীকে চমকে দেবেন বলে। উলটে প্রথম ওভারে ২৬ রান দিয়ে ম্যাচটা তখনই তুলে দিয়ে গেলেন রাজস্থানের হাতে। আর সেটাই যেন নাইট ম্যানেজমেন্টের নির্বুদ্ধিতার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞাপন হয়ে থাকল! ম্যাচ শেষে অধিনায়কের করা ওই ওভারটাই কাল হয়ে গেল। সেকথা ম্যাচের শেষে মেনে নিয়েছেন ভেঙ্কটেশ আইয়ারও (Venkatesh Iyer)। তিনি মেনে নিয়েছেন, নীতীশের ওই ওভারেই ম্যাচ হাত থেকে বেরিয়ে গেল।
প্রশ্ন হচ্ছে, যে টিমে বরুণ চক্রবর্তী (Varun Chakravarty) নামের একজন এত ভাল বল করছেন, সেই টিম চমকের খোঁজে কালেভদ্রে বল করা নীতীশের শরণাপন্ন হবে? সুনীল নারিনকেও ভাববে না? সরি, সরি। নারিনের নাম করাটা ভুল হয়েছে। কেকেআরে এককালে নারিন নামে একজন খেলতেন। এখন যিনি খেলেন, তাঁকে নারিনের মতো শুধু দেখতে! টুর্নামেন্টের এগারোটা ম্যাচ এতটা প্রভাবহীন থাকার পর আগামী বছর ক্যারিবিয়ান স্পিনারের আইপিএল চুক্তি পাওয়াই উচিত নয়। উচিত নয়, কিন্তু টিমটার নাম আবার কেকেআর! এখানে অভিষেক নায়ার, ডেভিড হাসিদের মতো ‘বিদগ্ধরা’ রয়েছেন। নিশ্চয়ই আবার ফিরিয়ে আনবেন নারিনকে।
[আরও পড়ুন: যশস্বীর জয়গান বিরাট-সূর্যকুমারদের, শেষদিকে ‘কুকীর্তি’ ঘটিয়ে সমালোচিত তরুণ নাইট তারকা]
কেউ কেউ বলতে পারেন, শ্রেয়স আইয়ার না থাকাটা মারাত্মক ক্ষতির হয়ে গেল। মুশকিল হল, কেকেআরই একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি নয়, যাদের চোট-আঘাত ভুগিয়েছে। বেন স্টোকস চোট সারিয়ে ফিট হয়ে ডাগআউটে বসে, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের তাতে জিততে অসুবিধে হচ্ছে? জসপ্রীত বুমরা, জোফ্রা আর্চার ছাড়া মুম্বই জিতছে না? আসলে প্রতিটা টিমেরই রিজার্ভ বেঞ্চ বলে একটা বস্তু আছে। কেকেআরের সেখানে যা প্রথম টিম, তা-ই একমাত্র টিম। কারও লেগে গেলে পাতে দেওয়ার মতো একজনও পরিবর্ত নেই। আন্দ্রে রাসেল (Andre Russell) বা নারিনের মতো কেউ ‘সূর্যাস্তের’ দিকে চলে গেলে, তার কোনও বিকল্প নেই। কেকেআর ঘটা করে চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতকে কোচ করে এনেছিল। কে জানত, ঘরোয়া ক্রিকেটের দুঁদে কোচের এমন বেঘোরে বারোটা বাজবে। ডাঁটা-চচ্চরির মশলা দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করতে কেউ কখনও পারেনি, ইহকালে কেউ পারবেও না। তা সে রান্নার দায়ভার জগদ্বিখ্যাত পাচকের হাতে পড়ুক না কেন।