সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পেনাল্টি মারবেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo)। কিন্তু চাপের মুখেও মাথা ঠান্ডা রেখে পর্তুগিজ মহাতারকার শট থামিয়ে দিলেন আলিরেজা বেইরানভান্ড (Alireza Safar Beiranvand)। তারপরেই খবরের শিরোনামে তিনি। ২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে রোনাল্ডোকে পেনাল্টি থেকে গোল করতে দেননি আলিরেজা। জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নেমেই সিআর সেভেনের শট থামিয়ে দেওয়ার পরে ইরানের ফুটবল মহলে পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন তিনি। দেশের ফুটবলের মুখ আলিরেজা। ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপেও (Qatar World Cup 2022) তিনি শিরোনামে। এবার অবশ্য সম্পূর্ণ অন্য কারণে। দ্বিতীয় বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই সতীর্থের সঙ্গে সংঘর্ষে চোটের কবলে পড়লেন। সম্ভবত এবারের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল আলিরেজার।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ড দুরমুশ করেছে ইরানকে। তবে ম্যাচের শুরুতেই চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন ইরানের গোলকিপার আলিরেজা বেইরানভান্ড। সতীর্থের সঙ্গে ধাক্কা লেগে রক্তাক্ত হয়েও মাঠ ছেড়ে বেরতে চাননি তিনি। চোট পাওয়ার অব্যবহিত পরেই গোলকিক নেন আলিরেজা। তার পরেই তিনি উপলব্ধি করেন যে আর খেলতে পারবেন না। মাঠে শুয়ে পড়েন। চোট পাওয়ার পরেও তাঁকে নামতে দেওয়া হল কেন, সেই প্রশ্ন তোলেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ফুটবলার জেরমাইন জেনাস। গোটা ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ। রসিকতা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। এদিকে সরকারিভাবে কিছু না জানানো হলেও অনুমান করা যায়, বিশ্বকাপ থেকেই হয়তো ছিটকে গিয়েছেন ইরানের গোলকিপার।
কিন্তু ইরানের জাতীয় দলের গোলকিপার হওয়ার যাত্রাটা মোটেও সহজ ছিল না আলিরেজার। পেটের দায়ে সেই ছেলেবেলা থেকে পশুপালক হিসাবে কাজ করতেন আলিরেজা। তবে অবসর সময়ে ফুটবল খেলতেন। স্ট্রাইকার হিসাবেই শুরু করেছিলেন ফুটবলজীবন। ফুটবল মাঠে তাঁর কাজটা আচমকাই বদলে যায়। গোলকিপার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে গোল আগলাতে হত। সেই যে গোলকিপিং শুরু করলেন, বিশ্বকাপের মঞ্চে দেশের শেষ প্রহরী তিনি।
[আরও পড়ুন: ‘আমি বিশ্বকাপ জিতলেও সমালোচনা থামবে না’, সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্ফোরক রোনাল্ডো]
তবে পরিবারের বড় ছেলে ফুটবল খেলে কেরিয়ার তৈরি করুক, এটা একেবারেই পছন্দ ছিল না আলিরেজার বাবার। ফুটবল খেলা থামাতে ছেলের জিনিসপত্র পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ফুটবলের প্রতি ভালবাসা এতটাই যে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান ইরানের গোলকিপার আলিরেজা। তেহরানে পৌঁছে রাস্তায় ঘুমোতেন তিনি। অর্থ উপার্জনের জন্য রাস্তা ঝাঁট দিতেন, পিৎজার দোকানে কাজ করতেন। শেষ পর্যন্ত নাফত ক্লাবের হয়ে খেলার সুযোগ পান আলিরেজা। তবে চোটের কারণে এক সময়ে তাঁর ফুটবল কেরিয়ার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।
কিন্তু দুরন্ত প্রত্যাবর্তন করে ইরানের অনূর্ধ্ব-২৩ দলে জায়গা করে নেন আলিরেজা। সেখান থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ইরানের জাতীয় দলের প্রথম গোলকিপার হন। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে রোনাল্ডোর পেনাল্টি থামিয়ে সকলের নজরে পড়ে যান। ওই ম্যাচে ১ গোলে পিছিয়ে ছিল ইরান। সেই সময়ে রোনাল্ডোর শট বাঁচিয়ে দলের হার বাঁচান আলিরেজা। শেষ পর্যন্ত ইরান-পর্তুগাল ম্যাচ ১-১ গোলে শেষ হয়।
গিনেস বুকেও নাম রয়েছে ইরানের গোলকিপারের। রাশিয়া বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল ইরান। সেই ম্যাচে ৬১.২৬ মিটার দূরত্বে বল থ্রো করেন আলিরেজা। প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি দূরত্বের থ্রো হিসাবে ফিফা ও গিনেস বুক আলিরেজার এই কীর্তিকে মান্যতা দিয়েছে। রাস্তায় ঘুমনো থেকে জাতীয় দলের প্রতিনিধি হিসাবে ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া- রূপকথার চেয়ে কিছু কম নয় আলিরেজার এই যাত্রা। চোটের কারণে শেষ হয়ে যাবে এই রূপকথার নায়কের বিশ্বকাপ, এমনটা ভেবেই মনখারাপ ফুটবলপ্রেমীদের।