shono
Advertisement

মিটিয়ে দেব লেনাদেনা…এই নোটে

খুব শিগগিরি আমায় নাকি আর চোখেই দেখা যাবে না! আমি নাকি প্লাসটিকে পরিণত হব! The post মিটিয়ে দেব লেনাদেনা… এই নোটে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 01:33 AM Nov 30, 2016Updated: 08:52 PM Nov 29, 2016

‘ক্যাশলেস ইকোনমি’র পথে হাঁটছে এই দেশ৷ কতটা সাফল্য মিলবে? নগদ বলে কি সত্যিই কিছু থাকবে না? কিন্তু নগদ, সে কী চায়? ডিজিটাল ওয়ালেটকে কি স্বাগত জানাচ্ছে সে? তার মনের কথা জানার চেষ্টায় সুলয়া সিংহ৷

Advertisement

পাড়ার মোড়ে, চায়ের ঠেকে, ভিড় ট্রেনে, এটিএম-এর লাইনে, এমনকী সোশ্যাল সাইটেও এখন শুধু আমাকে নিয়েই আলোচনা হচ্ছে৷ কী চাহিদা আমার! জনপ্রিয়তায় তো শাহরুখ, সলমন, শচীনদেরও আমি এখন পিছনে ফেলে দিয়েছি৷ সারাক্ষণ শুধু আমার গোলাপি আর সবুজ রূপের বর্ণনা কানে আসছে৷ অনেকের তো আবার আমার চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে৷ আমি তো একই অঙ্গে নানা রূপ৷ এই যে সম্প্রতি আমার দুই রূপের বিলুপ্তি ঘটল, তাতে আমার অবশ্য কিছু যায় আসে না৷ কারণ আমার চাহিদা তাতে বেড়েছে বই কমেনি৷ তবে একটা বিষয় আমাকে খানিকটা ভাবাচ্ছে৷ কিন্তু ইদানীং যে একটু চিন্তার মধ্যে রয়েছি, তা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই৷ আজকাল যিনি আমার সবচেয়ে বেশি দেখভাল করছেন, আমার দুই রূপের বিলুপ্তি ঘটিয়ে নয়া দুই রূপের জন্ম দিয়েছেন, তাঁর মুখ থেকেই নতুন খবরটা পেলাম৷ খুব শিগগিরি আমায় নাকি আর চোখেই দেখা যাবে না! আমি নাকি প্লাস্টিকে পরিণত হব!

ব্যাপারটা আমার কাছে এখনও পুরোপুরি পরিষ্কারই নয়৷ যতটুকু বুঝেছি, অদূর ভবিষ্যতে নাকি আমার এই স্লিম রংচংয়ে চেহারার কোনও অস্তিত্বই থাকবে না৷ মানে প্রত্যক্ষভাবে নয়, আমি থেকে যাব পরোক্ষভাবে৷ সবাই মোবাইলে অথবা কার্ডেই আমায় নিয়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে যাবে৷ সবার মুখে শুনছি, সহজ ভাষায় একে বলে ‘ক্যাশনেস ইকোনমি৷’ কিন্তু প্রশ্ন হল, আমি যে দেশে থাকি, সেখানে কি এমনটা হওয়া সম্ভব? যাঁরা দিন আনে দিন খায়, তাঁরা আমায় হাতে না পেলে পারবে রোজকার সংসার চালাতে? সামান্য ফুচকা খেতে গেলেও কি আমাকে প্রয়োজন হবে না? শুনলাম গোয়াতে নাকি আমি নিশ্চিহ্ন হতে চলেছি৷ ওরা আমায় প্লাস্টিকেই ভরতে চলেছে৷ বাকি জায়গাতেও কি এমনই হবে? কী জানি বাবা! এসব ভেবেই অদ্ভূত লাগছে৷

আমার অস্বিত্ব রক্ষার জন্য অবশ্য অনেকেই লড়ছেন৷ আমি যাতে কোনওভাবেই হারিয়ে না যাই, তার দিকে কড়া নজর অনেকের৷ এই তো সেদিন ব্যাঙ্কের লাইনে এক সুন্দরী মহিলার হাতে বসে শুনতে পেলাম একজন বলছেন, ভারতের যা জনসংখ্যা, তাতে এই দেশকে ‘ক্যাশলেস’ দেশে পরিণত করা অসম্ভব৷ যেখানে প্রায় ২৬ শতাংশ মানুষ শিক্ষার আলো দেখতে পায়নি, সেখানে সবাইকে ‘ইন্টারনেট শিক্ষিত’ করে তোলা তো আর মুখের কথা নয়৷ তবে সোমালিল্যান্ডের কথা ভাবলেই বুকের ভিতরটা ছ্যাঁত করে ওঠে৷ সোমালিল্যান্ড হল আফ্রিকার সবচেয়ে গরিব দেশ৷ তা সত্ত্বেও সুইডেন, কেনিয়া, কানাডার মতোই সেখানেও আমার বিশেষ কদর নেই৷ ওরা সব ক্লিকেই কামাল করে৷

সব দোষ ওই লোকগুলোর৷ আমার কালি মাখা মুখটা যাদের খুব প্রিয়৷ ঝাঁ চকচকে ঘরে লুকিয়ে রেখে দিত আমাকে৷ আর যে-ই আমার বিলুপ্তি ঘটল, ওমনি আমায় কুটি কুটি করে ছিঁড়ে নদীতে ভাসিয়ে দিল, জ্বালিয়ে দিল৷ আরও না জানি কী কী সহ্য করতে হল আমায়! এখন ওদের জন্য আমার এই ফর্সা সুঠাম চেহারারও কোনও গুরুত্ব থাকছে না৷ আমাকে প্লাস্টিক বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে৷ আমাকে নিয়ে এতকিছু৷ কিন্তু আমি কী চাই, কেউ জানতেই চাইছে না৷ আচ্ছা, ‘ক্যাশলেস’ না করে দেশকে ‘লেস-ক্যাশ’-এ পরিণত করলে কেমন হয়? কালি মাখা মুখগুলোও থাকবে না, আর প্রত্যন্ত গ্রামের কুঁড়েঘরগুলোতে আমি স্বস্তির জীবনযাপনও করতে পারব৷ মানে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না৷

একজনকে বলতে শুনলাম, দেশের সিস্টেম না বদলালে কিছুই হবে না৷ আচ্ছা, বর্তমানে এ দেশে যা হচ্ছে, সেটাকে তাহলে কী বলে? সিস্টেম পাল্টাতে সময় তো লাগে৷ কালে কালে হয়তো আমিও ফ্যাকাসে হয়ে যাব৷ কিন্তু আগামীর জন্য যদি একটা ‘স্বচ্ছ’ দেশ দিয়ে যেতে পারি, তাহলে এই ক্ষতি কী? আমাকে না হয়, ইতিহাসের পাতায় বা কবিতাতেই মনে রেখো৷

The post মিটিয়ে দেব লেনাদেনা… এই নোটে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement