সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজনৈতিক ডামাডোলে আবারও ভোটমুখী ইজরায়েল। এনিয়ে গত চার বছরে মোট পাঁচবার নির্বাচন হতে চলেছে দেশটিতে। বিশ্লেষকদের মতে, বিরোধীদের অন্তর্কলহে ফের ‘লিকুদ’ পার্টির প্রধান বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা জোরল হচ্ছে।
কেন নির্বাচনের পথে হাঁটছে ইজরায়েল? গত সোমবার ইজরায়েলের পার্লামেন্ট ভেঙে ফেলার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নফতালি বেনেট ও তাঁর জোট সঙ্গী তথা বিদেশমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ। একযোগে এক বিবৃতিতে তাঁরা জানিয়েছেন, আর জোট সরকার চালানো সম্ভব নয়। আগামী সপ্তাহেই পার্লামেন্ট ভেঙে ফেলার জন্য বিল আনা হতে পারে। তাতে সায় মিললে বর্তমান পালামেন্ট ভাঙা হবে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী অক্টোবরে ভোট হওয়ার কথা। ততদিনের জন্য ইজরায়েলের (Israel) প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন ‘ইয়ামিনা পার্টি’র প্রধান বেনেট এবং সেই পদ সামলাবেন ‘ইয়েশ য়াতিদ’ পার্টির প্রধান লাপিদ। সেটা হলে আগামী মাসে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার টেবিলে বসবেন লাপিদ-ই।
[আরও পড়ুন: আর্থিক সংকটে জেরবার শ্রীলঙ্কা, এবার একসঙ্গে ভারত ও চিনের সাহায্য চাইছে দ্বীপরাষ্ট্র]
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে নয়া সরকার গড়তে লাপিদের দল ‘ইয়েশ য়াতিদ’-কে সমর্থন দেয় ডানপন্থী দল ‘ইয়ামিনা পার্টি’। তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এবং বেনজির বিষয় হচ্ছে যে জোট সরকারকে সমর্থন জানায় ইজরায়েলে সংখ্যালঘু আরবদের দল ‘ইউনাইটেড আরব লিস্ট’। এছাড়া এই জোটে রয়েছে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গানৎজের দল ‘ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টি’। সব মিলিয়ে ইজরায়েলী সংসদ ‘নেসেট’-এ সংখ্যগরিষ্ঠতার দাবি পেশ করে বিরোধী ‘মহাজোট’। ফলে নজির গড়ে প্রায় ১২ বছর ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী থাকার পর কুরসি হারান বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। কিন্তু মতাদর্শের দিক থেকে ওই ‘রামধনু’ জোটের টিকে থাকাটাই ছিল আশ্চর্যের বিষয়।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বিগত চারটি নির্বাচনে ইজরায়েলে মূল প্রশ্ন ছিল দুর্নীতিতে অভিযুক্ত নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu) কি ক্ষমতায় থাকার যোগ্য? সেই প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট না মেলায় পরপর নির্বাচন হয় দেশটিতে। কিন্তু গত বছর ‘রামধনু’ জোট’ ক্ষমতায় আসায় পনেকেই মনে করছিলেন নেতানিয়াহুর দিন শেষ। কিন্তু নতুন সরকারের পথে সমস্যা ছিল বিস্তর। মোট আটটি ভিন্ন মতাদর্শের দলকে একত্রে নিয়ে জোট সরকার চালাতে কার্যত হিমশিম খেতে হচ্ছিল বেনেটকে। কারণ, সরকারের প্রায় কোনও বিষয়েই একমত হতে পারছিল না দলগুলি। সংকট আরও গভীর হয়, যখন গত এপ্রিল মাসে ইয়ামিনা পার্টিত এক সদস্য দল থেকে বেরিয়ে যান। ১২০ সদস্যের পার্লামেন্টে সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারায় বেনেটের দল। সম্প্রতি ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ইহুদিদের থাকা নিয়ে একটি পুরনো আইন পুনর্নবীকরণের জন্য আনা বিল নিয়ে বামপন্থী দলগুলির সঙ্গে সরকারের মত পার্থক্য চরমে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে পার্লামেন্ট ভেঙে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা করা ছাড়া বেনেটের কাছে আর কোনও রাস্তা খোলা ছিল না।