সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত ১১ মাস ধরে 'নরককুণ্ড' গাজার ছবি দেখছে বিশ্ব। ইজরায়েলের মারে সেখানে কোণঠাসা হামাস। এখন উদ্বেগ বাড়ছে লেবানন নিয়ে। গাজাযুদ্ধে হামাসের সমর্থনে রয়েছে ইরানের মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন হেজবোল্লা। বহুবার তারা ইজরায়েলের একাধিক জায়গায় রকেট ছুড়েছে। তাই বহুদিন ধরেই হেজবোল্লাকে কড়া হুঁশিয়ারি দিচ্ছিল তেল আভিভ। গত কয়েকদিন ধরে সন্ত্রাসের জাল ছিঁড়তে এই শিয়া জঙ্গিগোষ্ঠীকে টার্গেট করে লেবাননে আগুন ঝরাচ্ছে ইজরায়েলি ফৌজ। এবার গাজার মতো লেবাননেও সরাসরি ঢুকে অভিযান শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা!
গত জুলাই মাস থেকে সংঘাত তীব্র হয়েছে ইজরায়েল ও হেজবোল্লার মধ্যে। ইজরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমির এক ফুটবল স্টেডিয়ামে আছড়ে পড়ে জঙ্গি সংগঠনটির রকেট। হামলায় মৃত্যু হয় ১২ জনের। এই ঘটনাতেই আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ে। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে লেবাননে হামলার ধার বাড়ায় ইজরায়েল। প্রথমে পেজার, ওয়াকি-টকি, টেলিফোনের মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের বিস্ফোরণে রক্তাক্ত হয় লেবানন। যার পিছনে ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ রয়েছে বলে অভিযোগ। এর পরই হেজবোল্লার ঘাঁটি টার্গেট করে অন্তত ৩০০টি জায়গায় 'অগ্নিবর্ষণ' করে ইজরায়েলি ফৌজ। এই হামলায় এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৬০০ ছুঁইছুঁই। আহত হাজার হাজার। এবার ইজরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি তাঁর বাহিনীকে লেবাননে ঢুকে অভিযান শুরু করার জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।
লেবাননের প্রশাসন জানিয়েছে, বুধবারও ইজরায়েলের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭২ জন। আহত ৪০০-র কাছাকাছি। অন্যদিকে, ইজরায়েলের সেনাপ্রধান বলেন, "আপনারা যুদ্ধবিমানের আওয়াজ শুনতে পারছেন, আমরা সারাদিন অভিযান চালিয়েছি। এভাবেই শত্রুর দেশে প্রবেশ করব। হেজবোল্লাকে অপদস্ত করতে সবরকম প্রয়াস চালিয়ে যাব।" লেবাননের এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক মহল। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, "এবার লেবাননে যুদ্ধ শুরু হতে পারে না। এই কারণেই আমরা ইজরায়েলকে লেবাননে হামলা বন্ধ করতে এবং হেজবোল্লাকে ইজরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।" মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লেবাননে পুরোদমে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস। তাঁর আশঙ্কা, “আর একটি গাজা হওয়ার পথে এগোচ্ছে লেবানন।” একদিকে, হামাস নিধনে গাজায় হত্যাযজ্ঞ জারি রেখেছে ইজরায়েল। এবার হেজবোল্লাকে খতম করতে তাদের রক্তচক্ষুর নজরে পড়েছে লেবাননও।
সমর বিশ্লেষকদের মতে, ইজরায়েল ও হেজবোল্লার মধ্যে যে সংঘাত শুরু হয়েছে তাতে হামাসের ষড়যন্ত্রই কার্যত সফল হচ্ছে। গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইহুদি দেশটিতে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে হেজবোল্লা। তাদের যুক্তি ছিল গাজায় হামাসকে সমর্থন জানিয়েই এই আক্রমণ শানানো হচ্ছে। পাশাপাশি লোহিত সাগর উত্তপ্ত করে রেখেছে ইরানের মদতপুষ্ট ইয়েমেনের হাউথিরা। কয়েক মাস আগেই তারা তেল আভিভের মার্কিন দূতাবাসের সামনে ড্রোন হামলা চালায়। সেখানেও ঘটে প্রাণহানি। ফলে সবদিক থেকে ইজরায়েলকে কার্যত ঘিরে ফেলেছে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। আর এদের মাথায় রয়েছে ইরান। ফলে গাজায় হামাস কোণঠাসা হয়ে গেলেও ইজরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষ জারি রয়েছে। ক্রমেই গাজা থেকে এই সংঘাত বড় আকার ধারণ করে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।