সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতে তৈরি নিজস্ব স্পেস-শাটল ডানা মেলল সোমবার৷ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র দীর্ঘ গবেষণার ফল এই ‘শাটল’৷ সোমবার পরীক্ষামূলকভাবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য নিজস্ব ‘স্পেস শাটল’ মহাকাশ যানটি পাড়ি দিল ইসরো থেকে৷ শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেণ্টার থেকে আজ ভোরে এসইউভি গাড়ির আকারে তৈরি এই শাটল ডানা মেলল৷ এই প্রথমবার এমন মহাকাশ যান ব্যবহার করা হল, যার ডেল্টা উইং আছে ও যেটি ভার্চুয়াল রানওয়ে দিয়ে বঙ্গোপসাগরে ফিরে আসবে৷
এই পুনর্ব্যবহারযোগ্য ভারতীয় যান-প্রযুক্তি নির্ণায়ক (আরএলভি-টিডি)-এর মাধ্যমে রকেট উৎক্ষেপণের সাক্ষী হল ভারত৷ এর ফলে স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) উৎক্ষেপণের খরচ কমবে প্রায় দশ গুণ৷ অভিযানের মূল লক্ষ্য এটাই৷ এই যানের চূড়ান্ত প্রতিরূপটি মহাকাশচারীদের ব্যবহারের জন্য ভাবা হচ্ছে৷ হাইপার সোনিক এই পরীক্ষায় (হেক্স) উড়ানটি শব্দের চেয়েও পাঁচ গুণ দ্রুতগতিতে যানের পুনর্প্রবেশের ক্ষমতা পরীক্ষা করবে৷ অবতরণের সময় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে ফিরবে৷ তখন সামান্য ঘাতের প্রয়োজন হবে, ফলে বিমানের মতো না নেমে সমুদ্রবক্ষে প্রথমে নামবে যানটি৷ মোট দশ মিনিট সময় লাগার কথা এই যানের৷ বিক্রম সারাভাই স্পেস সেণ্টারের অধিকর্তা কে শিবন বলেন, এটির চূড়ান্ত প্রতিরূপকে বাস্তবায়িত করতে সময় লাগবে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর৷ চূড়ান্ত প্রতিরূপটি বিমানের মতো অবতরণে সক্ষম হবে৷ বিজ্ঞানী ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের সম্মানে ‘কালামযান’ নাম রাখা হতে পারে এই যানটির৷ এই প্রকল্পে ৯৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷
এই যান চালু হওয়ার পিছনে তিনটি মূল প্রযুক্তি কাজ করছে৷ এরো-থার্মো-ডায়নামিক (বায়ু-তাপগতিবিদ্যা) এর কারণেই যানটি ফিরে আসছে৷ স্বয়ংক্রিয় অভিযানের ফলে একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে অবতরণ করতে সক্ষম হচ্ছে৷ যানের ভিতরেও অতি উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে, এমন পদার্থ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা৷ শূন্য থেকে অত্যন্ত ঘনীভূত পরিবেশে যাত্রার পর ফিরে আসাটা এর ফলে সহজতর হবে৷ বায়ুর ঘর্ষণে যানের বাইরের দিক লৌহ-তপ্ত লোহার প্লেটে পরিণত হবে৷
ইসরোর অধিকর্তা কিরণ কুমার জানান, “ভারতীয় মহাকাশ উড়ান বা স্পেস শাটলে ‘আরএলভি’ হল এমন প্রযুক্তি যা যে কোনও উৎক্ষেপণের খরচ কমায় দশ গুণ৷ প্রথমবার রকেটের মাধ্যমে এই ডানাযুক্ত যানটি পাড়ি দিল৷ এই মহাকাশ বিমানটি প্রথমে বঙ্গোপসাগরে অবতরণ করলেও পরে ডানাযুক্ত শাটলটি শ্রীহরিকোটা দ্বীপে নামবে৷” তিনি এও বলেন, আমেরিকা বহুবার শাটলের মাধ্যমে অভিযান চালিয়েছে৷ রাশিয়াও এ নিয়ে কাজ করেছে৷ তবে প্রযুক্তিগত কারণে উৎক্ষেপণের খরচ কমাতেই ইসরো বারবার এই নিয়ে কাজ করে চলেছে৷ যানটি পাঁচ থেকে সাত হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা সহ্য করবে বলে বিজ্ঞানীরা তাপনিরোধক সিলিকা টাইল তৈরি করেছেন যেটি যানের পেটের অংশের নিচে এই ভারতীয় মহাকাশ উড়ানে স্থাপিত৷ উল্লেখ্য, মার্কিন শাটলের অভিযানেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী কল্পনা চাওলা ২০০৩ সালে প্রাণ হারান৷ তাপনিরোধক টাইলগুলির ব্যর্থতাই ছিল কল্পনার মৃত্যুর কারণ৷
The post মহাকাশে পাড়ি দিল ইসরোর ‘কালামযান’ appeared first on Sangbad Pratidin.