সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নির্বাচনী বন্ড পদ্ধতিকে ‘অবৈধ’ ও ‘বাতিল’ করার পাশাপাশি সব তথ্য প্রকাশ্যে আনার নির্দেশ দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত। এর পরই প্রকাশ্যে চলে এসেছে বিজেপির (BJP) টাকার পাহাড়ের হিসেব। এই ইস্যুতে সুপ্রিম রায় প্রসঙ্গে এবার মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। জানালেন, কালো টাকার (Black Money) জোগান বন্ধ হয়েছিল নির্বাচনী বন্ড পদ্ধতির জেরে। ফলে এই রায়কে সম্পূর্ণ বাতিল না করে সংশোধন করা যেত।
সম্প্রতি ইন্ডিয়া টুডের কনক্লেভে এই ইস্যুতে অমিত শাহ বলেন, “ভারতীয় রাজনীতি থেকে কালো টাকা হঠানোর লক্ষ্যে আনা হয়েছিল নির্বাচনী বন্ড পদ্ধতি। শীর্ষ আদালতের (Supreme Court) নির্দেশ সকলকে মানতে হবে। তাঁদের রায়কে আমি সম্মান করি। কিন্তু আমার মনে হয় নির্বাচনী বন্ড পদ্ধতিকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল না করে সংশোধন করা উচিত ছিল।” এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের নিশানায় নিয়ে শাহ আরও জানান, “এর আগে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা চাঁদা নিতেন। ১১০০ চাঁদার মধ্যে ১০০ টাকা তাঁরা দলের নামে জমা করতেন বাকি ১০০০ টাকা নিজেদের পকেটে ঢোকাতেন। বছরের পর বছর ধরে এই পদ্ধতি চালিয়ে এসেছে কংগ্রেস (Congress) দল।”
[আরও পড়ুন: ‘বিরোধীরা মুখ লুকনোর জায়গা পাবে না’, ইলেক্টোরাল বন্ড ইস্যুতে সাফাই শাহের]
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্বাচনী বন্ডকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেন। এবং এই পদ্ধতিকে বাতিল করেন। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াকে ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল অবধি কত নির্বাচনী বন্ড কেনা হয়েছে, কোন দল বন্ড বাবদ কত টাকা অনুদান পেয়েছে, এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করার নির্দেশ দেয়। দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে প্রকাশ্যে এসেছে সে তথ্য। এরপরই দেখা যায়, বন্ড থেকে রাজনৈতিক দলগুলি মোট যা আয় করেছে তার প্রায় ৪৭ শতাংশ গিয়েছে বিজেপির (BJP) দখলে। টাকার অঙ্কটা প্রায় ৬ হাজার ৬০ কোটি টাকা।
[আরও পড়ুন: আবগারি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতেই স্বস্তি, অন্তর্বর্তী জামিন পেলেন কেজরিওয়াল]
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে যে সব সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ এবং যারা কেন্দ্রীয় এজেন্সির নজরে রয়েছে, সেই সংস্থাগুলি থেকেই সবচেয়ে বেশি টাকা বন্ড বাবদ পেয়েছে বিজেপি। ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’ সবচেয়ে বেশি অনুদান দিয়েছে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে। গত বছর মে মাসেই এই সংস্থার মালিক লটারি কিং মার্টিন স্যান্টিয়াগোর ৪৫৭ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। এরপরই বিজেপির বিরুদ্ধে ‘তোলাবাজি’র অভিযোগ তুলে সরব হয় কংগ্রেস। উদাহরণ দিয়ে কংগ্রেসের অভিযোগ ভুয়ো, অস্তিত্বহীন কোম্পানির মাধ্যমে বহু অনুদান পেয়েছে বিজেপি।
বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণের মুখে পড়ে এবিষয়ে সংখ্যাতত্ত্ব তুলে ধরে সাফাই দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর দাবি, ‘দেশের ১৩ রাজ্যে আমরা ক্ষমতায় আছি। লোকসভায় আমাদের ৩০৩ জন সাংসদ, আমাদের সদস্য সংখ্যা ১১ কোটি। সেই অনুপাতে তৃণমূল যদি আমাদের মতো বড় দল হত তবে ২০ হাজার কোটির বন্ড পেত। বিআরএস পেত ৪০ হাজার কোটির বন্ড আর কংগ্রেস পেত ৯ হাজার কোটির বন্ড। সেক্ষেত্রে ৩০৩ সাংসদের দল হয়ে আমরা ৬ হাজার কোটির বন্ড পেয়েছি, আর বাকিরা ২৪২ সাংসদের দল হয়ে পেয়েছে ১৪ হাজার কোটির বন্ড।’ বিরোধীদের তোপ দেগে এর পর শাহ বলেন, ‘যখন যাবতীয় হিসেব সামনে আসবে বিরোধীরা মুখ লুকোনোর জায়গা পাবে না।’