দীপালি সেন: ক্যাম্পাসের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আংশিক সময়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্যাথলজি টেকনিশিয়ান নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। যা দেখে স্তম্ভিত চিকিৎসক মহলের একাংশের। কারণ, নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের জন্য নির্ধারিত ভাতা দিনপ্রতি ৭০০ টাকা। তাঁদের কাজের সময় আবার সপ্তাহে তিনদিন দু’ঘণ্টা করে। অর্থাৎ এক ঘণ্টা ধরে রোগী দেখার বিনিময়ে মিলবে মাত্র ৩৫০ টাকা। যা বর্তমান সময়ের বাজারদরের সঙ্গে একেবারেই বেমানান বলে মত চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশের।
অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস-এর সম্পাদক ডা. মানস গুমটা বলেন, “একজন অভিজ্ঞ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের, এই রকম অসম্মানজনক চাকরির শর্ত? তাও আবার সরকারি ক্ষেত্রে? নিট ইউজি পরীক্ষার ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতায় সফল হয়ে, সাড়ে পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্স। বিশেষজ্ঞ হতে গেলে আবারও কঠিনতম প্রতিযোগিতা নিট-পিজি সফল হয়ে তিন বছরের এমডি, এমএস কোর্স এবং তিন বছরের কম্পালসারি বন্ড সার্ভিস। তারপরেও পাঁচ বছর কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চুক্তি চাকরির বেতন ঘন্টায় ৩৫০ টাকা? এ লজ্জা রাখব কোথায়? দেশের শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের এই মূল্য? যারা এই বেতনক্রম ঠিক করেছেন, ধিক্কার জানাই তাঁদের।”
[আরও পড়ুন: ‘ঘরের দরজা ভাল করে এঁটে রাখো’, ‘বোন’ বলে পরামর্শ দেওয়া রুদ্রনীলের বিরুদ্ধে FIR রাজন্যার]
গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে জারি করা হয়েছে চিকিৎসক ও প্যাথলজি টেকনিশিয়ান নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিটি। তা অনুযায়ী, একজন করে চক্ষু বিশেষজ্ঞ, ইএনটি বিশেষজ্ঞ, ত্বক বিশেষজ্ঞ ও প্যাথলজি টেকনিশিয়ান নিয়োগ করা হবে আংশিক সময়ের জন্য। বিশেষজ্ঞ তিন চিকিৎসকের নিজ নিজ ক্ষেত্রে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ বছরের এমবিবিএস ও হাসপাতালে কাজ করার ন্যূনতম তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তাঁদের প্রতি সপ্তাহে তিনদিন দু’ঘণ্টা করে কাজ করতে হবে। দিনপ্রতি ভাতা ৭০০ টাকা। ২৫ আগস্টের মধ্যে রেজিস্ট্রারের দপ্তরে আবেদনপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, গত বছরও চিকিৎসকদের ভাতা ৭০০ টাকাই ছিল। এবছর তা একই রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ভাতা বাড়ানোর জন্য কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যা এবছর সম্ভব হয়নি। তবে, ভাতার অঙ্কে বিতর্কের বিষয়টিকে প্রশ্রয় দিতে রাজি হননি ওই আধিকারিক। বদলে তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, “২৫ টাকায় কী বর্তমান সময়ে হোস্টেলে থাকা যায়? মাসে ৭৫ টাকা বেতনে পড়া যায়? বা মাসে ২০০ টাকা দিয়ে কী ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া যায়?” এর প্রেক্ষিতেই যে চিকিৎসকরা আসবেন তাঁরা যদি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পরিষেবা দিচ্ছেন ভেবে নেন, তাহলে কোনও বিতর্কের অবকাশ আর থাকবে না, মত ওই আধিকারিকের।