সুমন করাতি, হুগলি: ফরাসি সরকারের দেওয়ান ছিলেন চন্দননগরের ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। তিনি আবার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সেবার কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো দেখে তাঁর ভালো লাগে। ইন্দ্রনারায়ণের হাত ধরেই পুজো শুরু হয় চন্দননগর শহরে। তবে এই নিয়ে গবেষকদের মধ্যেও দ্বিমত রয়েছে। কারণ, ইন্দ্রনারায়ণ মারা যান ১৭৫৬ সালে। সেই সময় কৃষ্ণচন্দ্রের বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো হত কি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
তবে যাই হোক, স্বাধীনতার বহু আগেই চন্দননগরে ধুমধাম করে শুরু হয় বিখ্যাত শিব মন্দির তেমাথা সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো। এই বিষয়ে মতান্তর নেই। এখানে দেবী পূজিত হন 'রানিমা' হিসেবে। গঙ্গাপাড়ের শহর চন্দননগরে অন্যতম পুরনো পুজো ধরা হয় 'রানিমা'র পুজোকেই। যার পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাস।
জানা যায়, প্রায় ৮০ বছর আগে চন্দননগর শিব মন্দির তেমাথা সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু। মায়ের নাম 'রানিমা'। এই নাম কেন? কথিত, ফরাসিদের উপনিবেশ গড়ে ওঠার সময় চন্দননগরের সব প্রতিমা সেজে উঠত সাদা ডাকের সাজে। একমাত্র এই পুজোয় মা সাজতেন একেবারে রাজরানির বেশে। সোনালি সেই সাজে মায়ের রূপ চোখ ধাঁধিয়ে দিত সকলের। সেই থেকেই 'রানিমা' নামটি প্রচলিত। পাশাপাশি, যেখানে এই পুজো হয় তার পাশেই রয়েছে বুড়ো শিবতলা। আজও মন্দিরে মহাদেবের পুজো হয় আগে, তার পরে শুরু হয় মায়ের পুজো।
তৈরি হচ্ছে মাতৃ প্রতিমা।
পুজো কমিটির উদ্যোক্তরা জানাচ্ছেন, লক্ষ্মীপুজোর দিন কাঠামো পুজো করে দেবীর মূর্তি গড়া শুরু হয়। প্রায় ৩৫ মন খড় ও ১০০০ কেজি মাটি দিয়ে তৈরি হয় তাঁদের প্রতিমা। ৩৫ ফুট উচ্চতা। এই প্রতিমা তৈরিতে বাঁশের সঙ্গে লোহার কাঠামো ব্যবহার করা হয়। ঐতিহাসিক এই পুজোর মায়ের রূপ দেখতে হাজারে হাজারে দর্শনার্থী ভিড় জমান।