সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরি জেলায় জঙ্গিদের নিকেশ করার অভিযান শুরু করেছিল সেনাবাহিনী। সেই অভিযানে বৃহস্পতিবার বড় সাফল্য পাওয়ার পরই বিস্ফোরক তথ্য সামনে আনল ভারতীয় সেনা। একদিকে যখন মিলল জঙ্গিদের গোপন ডেরা গুহার সন্ধান, তখন অন্যদিকে পদস্থ সেনা কমান্ডার জানিয়ে দিলেন, পাকিস্তানের বেশ কিছু অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। তারাই উপত্যকায় জঙ্গি সংগঠনের হয়ে কাজ করছে। সীমান্তের ওপার থেকে ভারতে প্রবেশ করছে। টানা কয়েকমাস ধরে জঙ্গি কার্যকলাপে নজরদারি করতেই সামনে এসেছে এই তথ্য।
বৃহস্পতিবার রাজৌরি জেলায় লস্কর-ই-তৈবার শীর্ষ সেনা কমান্ডার-সহ দুই জঙ্গি নিহত হওয়ার পরে নিরাপত্তা আধিকারিকরা একটি গুহার সন্ধান পেয়েছেন। সেই ছবি প্রকাশ করেছে ভারতীয় সেনা। জানা গিয়েছে, ওই গোপন ডেরা দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহার করছিল সন্ত্রাসবাদীরা। নিরাপত্তা আধিকারিকদের মতে, এই ধরনের আস্তানা শনাক্ত করা এবং তা ভাঙা যথেষ্টই কঠিন। গত বুধবার থেকে জঙ্গি নিকেশ অভিযানে ভারতীয় সেনার পাঁচজন শহিদ হয়েছেন। দুদিনের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। বৃহস্পতিবার সকালে ধর্মশালা বেল্টের বাজিমাল এলাকায় নতুন করে গুলির লড়াই শুরু হয়। সেখানে এক সেনা জওয়ান প্রাণ হারান।
[আরও পড়ুন: রাজস্থানে শুরু ভোটগ্রহণ, এবার পদ্মঝড়? না কি প্রথা ভেঙে ফিরবে কংগ্রেসই]
এই ঘটনায় দুই জঙ্গি নিহত হওয়ার পর সেনাবাহিনীর উত্তর সেনা কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, কিছু সন্ত্রাসবাদী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। আমরা এই বিদেশি সন্ত্রাসবাদীদের নির্মূল করার চেষ্টা করছি। তিনি পাকিস্তানকে (Pakistan) দায়ী করে সরাসরি বলেন, পাকিস্তান জম্মু-কাশ্মীরে কোনওরকম সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য স্থানীয় যুবকদের ‘নিয়োগ’ করতে পারছে না। তাই বিদেশি অর্থাৎ নিজেদের প্রাক্তন সেনাকর্মীদের উপরই ভরসা করে জঙ্গি কার্যকলাপ ছড়াতে চেষ্টা করছে।
যে গোপন ডেরার সন্ধান মিলেছে সেই গুহার ছবি শুক্রবার প্রকাশ করেছে সেনাবাহিনী। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়ি ওই এলাকা এবং নিয়ন্ত্রণরেখার নিকটবর্তী হওয়ার জন্যই রাজৌরি এবং পুঞ্চকে নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করছে জঙ্গিরা। কারণ, রাজৌরি হল কাশ্মীরের (Kashmir) ট্রানজিট রুট। শীতকালে পাহাড়ি পথ যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন এই অঞ্চল দিয়ে জঙ্গি কার্যকলাপ বাড়াতে চেষ্টা করে লস্কর-ই-তৈবার মতো সংগঠন। সেনা আধিকারিকদের মতে, এখনও ২০ থেকে ২৫ জন সন্ত্রাসবাদী এই এলাকায় তৎপর রয়েছে। স্থানীয়দের সহায়তায় তাদেরও নির্মূল করার চেষ্টা করছে নিরাপত্তা বাহিনী। গত একবছরের মধ্যে যেহেতু কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে, তাই ক্রমশ চাপ বাড়ছে পাকিস্তানের উপর। বৃহস্পতিবার লস্করের কুখ্যাত স্নাইপার ও বোমা বিশেষজ্ঞ কুয়ারি নামের যে জঙ্গি খতম হয়েছে তাতেই চাপ বেড়েছে এই জঙ্গি সংগঠনের। কারণ, রাজৌরি-পুঞ্চ এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের মাস্টারমাইন্ড ছিল কুয়ারি।
[আরও পড়ুন: মোদি-নেতানিয়াহু মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ! প্রধানমন্ত্রীকে জোরালো তোপ কংগ্রেসের]
অন্যদিকে, পুত্রহারা মায়ের ক্ষোভের মুখে পড়লেন উত্তরপ্রদেশের পরিষদীয় মন্ত্রী যোগেন্দ্র উপাধ্যায়। বুধবার যে পরিবারের সবকিছু ওলটপালট হয়ে গিয়েছে সেই আগ্রার গুপ্তা পরিবারের কাছে এদিন ৫০ লক্ষ টাকার চেক দিতে গিয়েছিলেন মন্ত্রী। সেখানেই মন্ত্রীকে দেখে চিৎকার করে কান্নায় ভেঙে পড়েন জঙ্গিহানায় মৃত ক্যাপ্টেন শুভমের মা। মন্ত্রীর চেকপ্রদান মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করার হুড়োহুড়ি দেখে শোকের আবহে স্থির থাকতে পারেননি সন্তানহারা মা। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘এইসব প্রদর্শনী বন্ধ করুন। আমার সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন।’’ মায়ের এই আকুলি-বিকুলি অবস্থা দেখে হতচকিত হয়ে পড়েন যোগেন্দ্র।