অভিরূপ দাস: দামি গাড়ি, বাড়ি নয়। নয় কোনও মূল্যবান পাথর। টাকা দিয়ে এ উপহার কিনতে পাওয়া যাবে না কোনও দোকানে। সুস্থ হয়ে এমনই উপহার চিকিৎসকের হাতে তুলে দিয়েছেন রোগী। রঙিন মলাটে ঢাকা একটি ডায়েরি। তার পাতায় পাতায় ডাক্তারবাবুকে নিয়ে কবিতা। লিখেছেন খোদ রোগীর স্ত্রী। অভিনব উপহার পেয়ে আপ্লুত কান-নাক-গলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শান্তনু পাঁজা। তাঁর কাছেই নতুন জীবন পেয়েছেন ডা. শশীকান্ত তিওয়ারি।
জামশেদপুরের বাসিন্দা শশীকান্ত ন্যাশনাল মেটিরিওলজিক্যাল ল্যাবরেটরির চিফ সায়েন্টিস্ট। স্ত্রী কিরণ তিওয়ারির কথায়, মুখের বিরল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন আমার স্বামী। শশীকান্তবাবুর মুখ দিয়ে রক্ত পড়ত প্রায়ই। জামশেদপুর থেকে ছুটে এসেছিলেন কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, রোগী যে ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন চিকিৎসা পরিভাষায় তার নাম বাক্কাল মিউকোসা। গালের ভিতরের দিকে একটি ছোট্ট টিউমার হয়েছিল। অস্ত্রোপচার করে তা বাদ দেওয়া হয়। তবে তার পরও চিন্তা ছিল। সাধারণত এ ধরনের ক্যানসার গলাতেও ছড়িয়ে পড়ে। তা যেন না হয়, নিশ্চিত হতে বাদ দেওয়া হয় গলার লিম্ফ নোডও। অস্ত্রোপচার এতটাই নিখুঁত যে, পরে আর কেমোথেরাপি অথবা রেডিয়েশনের প্রয়োজন হয়নি রোগীর। চিকিৎসা চলাকালীন চিকিৎসককে নানান প্রশ্ন করতেন রোগীর স্ত্রী। কে জানত তা কবিতা লেখার জন্য!
[আরও পড়ুন: মদ্যপ বাবার মারধরের জের, কন্যার পর এবার প্রাণ গেল পুত্রসন্তানেরও]
ক্যানসার চিকিৎসার পর চেক-আপে আসতে হয়। সেই চেক-আপে এসেই চিকিৎসককে রঙিন কাগজে মোড়া ডায়েরি উপহার দিয়েছেন কিরণ। যার শুরুতেই লেখা, ‘ধরতি কা ঈশ্বর’। হিন্দি সাহিত্য নিয়ে চর্চা করেন কিরণ। রয়েছে একাধিক কবিতার বই। ডা. শান্তনু পাঁজাকে নিয়ে হিন্দিতে কবিতা লিখেছেন তিনি। কবির কথায়, মারণ রোগকে পরাজিত করা গিয়েছে চিকিৎসকের সাহায্যে৷ তাঁর জন্যই এমন অভিনব উপহার। ডায়েরির কিছু পৃষ্ঠা ফাঁকা আছে। সেখানে চিকিৎসককে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা লিখতে বলেছেন কবি। তারপর সবটা মিলিয়ে একটা বই হিসাবে প্রকাশ করতে চান তিনি।
[আরও পড়ুন: শহরে ইস্টবেঙ্গল কোচ কুয়াদ্রাত, স্বাগত জানাতে মাঝরাতেই বিমানবন্দরে লাল হলুদ জনতার ঢল]
ডা. শান্তনু পাঁজার কথায়, আমাকেও নিজের অভিজ্ঞতা লিখতে বলেছেন কবি। চিকিৎসা করতে গিয়ে আমাদের নানান অভিজ্ঞতা হয়। তা লিখে রাখার ইচ্ছে বহুদিনের। বাংলায় ক্রমশ বাড়ছে মুখের ক্যানসার। মুখের ভিতরে কোনও ব্যথাহীন ফোলা অংশ অথবা এমন কোনও মাংসপিণ্ড যা ক্রমশ বাড়ছে তা আঁচ করলেই সাবধান হতে বলছেন চিকিৎসক।