কৃশানু মজুমদার: দেশের নাম ইন্ডিয়া (India) থেকে পালটে ভারত (Bharat) করা হবে। বেশ কয়েকদিন ধরেই তুঙ্গে উঠেছে এই জল্পনা। জি-২০ বৈঠকের আবহেই এই জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। থুড়ি, বলা ভাল বিশ্ব জুড়ে। সেই বৈঠকে অংশ নেওয়া বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের কাছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্র প্রকাশ্যে আসার পরেই এই ইস্যুতে জল্পনা শুরু হয়। সেখানে ইংরেজিতে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ লেখা হয়েছে। এই জল্পনার মধ্যেই পাকিস্তানের এক স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, নাম বদলের জল্পনা সত্যি হলে ‘ইন্ডিয়া’ নামের উপরে অধিকার দাবি করতে পারে পড়শি দেশটি। এমনকি এই দাবি নিয়ে খোদ রাষ্ট্রসংঘের দ্বারস্থও হতে পারে পাকিস্তান, এমনটাই দাবি করেছে ওই সংবাদমাধ্যম।
কিন্তু পাকিস্তানের বিশিষ্ট জনেরা কী বলছেন? পাকিস্তানের নাম বদলে যদি সত্যি সত্যিই ‘ইন্ডিয়া’ হয়, তাহলে কীভাবে তা গ্রহণ করবে পাক-মুলুকের মানুষজন? পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার আসিফ ইকবাল এমন দাবির কথা শুনে প্রথমটায় বিস্মিত হয়ে যান। পরে বলেন, ”এই খবরের সত্যতা নেই বলেই মনে হয়।” কিন্তু দেশের নাম বদল করলে তো খরচ আকাশছোঁয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্ডিয়া থেকে ভারত হয়ে গেলে দেশের কোষাগার থেকে অন্তত ১৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে। আসিফ ইকবাল উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছেন, এলাহাবাদ থেকে নাম বদলে প্রয়াগরাজ হওয়ার খরচ ৩০০ কোটি। ঔরঙ্গাবাদ থেকে ছত্রপতি শাম্ভাজিনগর হওয়ার খরচ ৫০০ কোটি। ফলে দেশের নাম ইন্ডিয়া থেকে বদলে ভারত হলে তার যেমন বিপুল খরচ রয়েছে তেমনই তৈরি হবে বিভ্রান্তি এবং অকারণ ঝঞ্ঝাট। আসিফ ইকবাল প্রশ্ন তুলছেন, ”এটা কি পাগলামি নয়?”
[আরও পড়ুন: ২০ বছর বাদে ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে নেই রোনাল্ডো, লড়াইয়ে মেসি-এমবাপেরা]
শারজার মাটিতে চেতন শর্মার শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছিলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। সেই ছক্কা ভারতকে এতটাই ধাক্কা দিয়েছিল যে দুই প্রতিবেশি দেশের মুখোমুখি সাক্ষাতে ভারত কুঁকড়েই থাকত। বহু পরে ইতিহাসের অভিমুখ বদলায়। সেই মিয়াঁদাদ ভারতের নাম বদল এবং পাক গণমাধ্যমের দাবির কথা শুনে প্রথমটায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। কিন্তু বিষয়টার গাম্ভীর্য এবং ওজন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কিংবদন্তি ক্রিকেটার খানিক সতর্কতার মোড়কে নিজেকে মুড়িয়ে বলছেন, ”এ ব্যাপারে আমার এখনই কিছু বলার নেই। কী বলব বলুন তো? অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। আগে পাকিস্তানের নাম বদলে ইন্ডিয়া হোক, তার পরে না হয় এই বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে।”
২০১১ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে পাঁচ-পাঁচটি উইকেট নিয়েছিলেন ওয়াহাব রিয়াজ। ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে তিনি পাঞ্জাব প্রদেশের ক্রীড়ামন্ত্রী এখন। এই স্পর্শকাতর বিষয়ে তিনি সংযত, সতর্ক। এড়িয়ে যাচ্ছেন এক সময়ের ডাকসাইটে বাঁ হাতি পেসার। বলছেন, ”দুঃখিত এই বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করবো না।”
কিন্তু ‘ইন্ডিয়া’ নামের উপরে নিজেদের অধিকার কি কায়েম করতে পারে প্রতিবেশি পাকিস্তান? ঘটনা হল, ইন্ডিয়া নামটি আদতে ইন্ডাস বা সিন্ধু উপত্যকার প্রভাবে এসেছে। আর এই অঞ্চলের অনেকখানি যেহেতু পাকিস্তানেও রয়েছে, ফলে এই ‘ইন্ডিয়া’ নামের উপরে পাকিস্তানেরও অধিকার বর্তায় বলেই দাবি অনেকের।
এর আগেও পাক জাতীয়তাবাদীরা এই নামের অধিকার নিয়ে তর্কবিতর্ক চালিয়েছেন। স্বাধীনতার প্রাক্কালে এই নামকরণ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন মহম্মদ আলি জিন্নাও। তিনি চেয়েছিলেন, ইন্ডিয়ার বদলে এ দেশের নাম হোক ভারত বা হিন্দুস্তান। এমনকি ১৯৪৭ সালেই, স্বাধীনতার মাত্র মাসখানেক আগে এই নিয়ে খোদ লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে চিঠি লিখেছিলেন জিন্না। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের নামবদলের ইঙ্গিত পেতে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সেই পুরনো বিতর্ক।