কলহার মুখোপাধ্যায়: লেকটাউনের (Laketown) জয়া সিনেমা (Jaya Cinema) হল নিছকই একটা সিনেমা ঘর ছিল না। ওই এলাকা-সহ আশপাশের বহু অঞ্চলের প্রবীণ এবং নবীন মানুষের কাছে আবেগ হিসেবে দাঁড়িয়ে ছিল জয়া এবং তার গা লাগোয়া মিনি জয়া। ১৯৬৭ সালে এই হল প্রথম তার সিনেমার শো প্রদর্শন করে। যা একপ্রকার নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলে এসেছিল কয়েক দশক। সম্প্রতি করোনার কারণে তাতে একটু ব্যাঘাত ঘটেছে বটে তবে আবার জয়া খুললে ভিড় জমানোর আশায় প্রস্তুত ছিলেন দর্শকরা। ঠিক এই সময় আগুনের গ্রাসে জয়া এবং এবং তার দোসর মিনি জয়া। মিনির প্রায় পুরোটাই ভস্মীভূত। জয়ার বেশ কিছু অংশ পড়লেও তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কম। তবে করোনা মিটে গেলেও কতদিনে এই হলদু’টি পুনরায় চালু হয়, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না জয়ার কর্ণধার মানিক বণিকও। তবে তিনি শনিবার বলেছেন, “দুটি হলই থাকবে। আমরা নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরও আধুনিকীকরণের পথে হাঁটব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
গত শুক্রবার রাত সাড়ে নটা নাগাদ মিনি জয়া এবং জয়ার ছাদে আগুন লাগে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে দমকল। সেখান থেকে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে নিচের অংশে। মিনির ভিতরের অংশ পুড়ে ছাই। প্রজেক্টর রুমে অনেক পুরনো আমলের যন্ত্রপাতি ছিল। সেগুলো আগুনে পুড়ে স্মৃতি হয়ে গেল। জয়ার ভিতরের অংশে সেভাবে থাবা বসাতে পারেনি আগুন। তবে সেটিও ভালো পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শনিবার ফরেনসিকের একটি দল নমুনা সংগ্রহের গিয়েছিল। সেখান থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছেন আধিকারিকরা। সেগুলি পরীক্ষার পর আগুন লাগার প্রকৃত কারণ জানানো যাবে বলে জানিয়েছে দমকল। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল ছাদে রান্না করার সময় কোনও কারনে আগুন লেগে গিয়েছিল। আবার পাশাপাশি এটাও দেখা হচ্ছিল যে শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লেগেছে কিনা। এই দুটি কারণে নাকি অন্য কোনভাবে আগুন লেগেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু।
[আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহ থেকে আরও বাড়ছে মেট্রোর সংখ্যা, জেনে নিন সময়সূচি]
যে সিনেমা হল ঘিরে লেকটাউন, সল্টলেক, শ্যামবাজার, বাগুইআটি, এমনকি উল্টোডাঙ্গা বা এয়ারপোর্ট অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের আবেগ জমে রয়েছে সেই জয়াতে আগুন লাগার ঘটনায় মন খারাপ বহু মানুষের। এই এলাকার নবীনদের বক্তব্য, আধুনিক ব্যবস্থার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অত্যাধুনিক সিনেমা হল হিসেবে গড়ে উঠুক জয়া এবং মিনি জয়া। প্রবীনদের একটি অংশের বক্তব্য, এই হল দুটির সঙ্গে বহু নস্টালজিয়া জড়িয়ে রয়েছে। সিনেমা হল যাতে থাকে, এখানে যাতে অন্য কিছু তৈরি না হয় তা দেখার জন্য মালিকপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি। এর পাশাপাশি হলের কর্মচারীদের একাংশ এদিন জানিয়েছেন, আগুন লেগে পুড়ে যাওয়ার ফলে তারা কিছুটা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। এই কর্মচারীদের মধ্যে দু’জন এখানে বসবাস করতেন। তাঁদের নাম মুন্না সিং এবং তার স্ত্রী অনিতা সিং। আগুন লাগার সময় হলের একটি অংশে ছিলেন তাঁরা। আগুনে আহত হয়েছেন দু’জনেই। এখন আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।