সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বড় সাফল্য সিটের (SIT)। মাত্র ২০ দিনেই পুরুলিয়ার (Purulia) ঝালদায় কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের কিনারা করে ফেললেন তদন্তকারীরা। গ্রেপ্তার মূল অভিযুক্ত নরেন কান্দু এবং মহম্মদ আসিক খান। নিহত কাউন্সিলর তপন কান্দুর দাদা নরেন। আর আসিক খান একজন দুষ্কৃতী, যাকে সুপারি দিয়ে ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে দাদা। পুলিশ সূত্রে খবর, ৫ লক্ষ টাকা সুপারি দিয়েছিল নরেন। আসিক খান সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেছিল। তপন কান্দু খুনের ঘটনায় মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করে মাত্র ২০ দিনের মাথায় তার কিনারা করে ফেলল সিট।
শুক্রবার বোকারোর জরিডির গাইছাদ গ্রামের বাসিন্দা ধৃত কলেবর সিং নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেন সিটের তদন্তকারীরা। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই নরেন কান্দু এবং আসিক খান সম্পর্কে তথ্য হাতে আসে। এই খুনের ঘটনায় নিহত কাউন্সিলর তপন কান্দুর দাদা তথা ধৃত ভাইপো দীপকের বাবা নরেন কান্দুকে শনিবার দিনভর জেরা করেন তদন্তকারীরা। সেইসঙ্গে নরেন কান্দুর ঘনিষ্ঠ ঝালদার কুটিডি এলাকার বাসিন্দা তথা একসময় বিহারে থাকা আসিক খানকেও জেরা করা হয়। এরপর সন্ধেবেলা তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন তাদের গ্রেপ্তারির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কলেবর সিং এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম চক্রী। পুলিশ তাকে জেরা করে জানতে পারে, ‘ভাড়াটে খুনি’ (Supari Killer) বিহারের বাসিন্দা। পারিবারিক দ্বন্দ্ব রাজনীতিতে জড়িয়ে যাওয়ার কারণেই কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু যে খুন হয়েছেন, তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছিল সিটের কাছে। ঝালদা পুর শহরের দু’নম্বর ওয়ার্ডে তপন কান্দুর জয় ও কংগ্রেসের তরফে পুরপ্রধান পদে দাবিদারের কারণেই ক্রোধবশত ষড়যন্ত্র করে এই খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের হাতে তথ্য মিলেছিল। এ নিয়ে এসপি সেলভামুরুগন বলেন, ”এই খুনের মোটিভ পারিবারিক কারণ। দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝামেলায় খুন। ৩ থেকে ৪ বছর ধরে তপন কান্দুকে হত্যার চেষ্টা করেছিল নরেন কান্দু।” যেহেতু নরেনের নিজের ছেলে তপন কান্দুর কাছে পুরভোটে হেরে গিয়েছেন, তা নিয়ে ক্রোধ ছিল নরেনের।
[আরও পড়ুন: হস্টেলে অমানবিক নির্যাতনের শিকার! রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার ১৪ বছরের ছাত্র]
সুদের কারবারি নরেন কান্দুর সঙ্গে ঝালদার কুটিডির বাসিন্দা আসিক খানের দীর্ঘদিনের যোগাযোগ। বছর ষাটের আসিক একসময় বিহারে থাকত। আসিক খানকেই মোটা টাকার সুপারি দেওয়া হয়েছিল বলে সিটের প্রাথমিক অনুমান। আসিক তার পরিচিত ঝাড়খণ্ডের বোকারোর (Bokaro) ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ কলেবর সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কলেবরকে সুপারি হিসেবে ৫ লক্ষ টাকার কথা জানায় আসিক। কিন্তু ৫৪ বছর বয়সী কলেবরের নামে একাধিক মামলা থাকলেও এই ‘রাজনৈতিক খুন’ করার সাহস দেখায়নি সে। তাই সে বিহারের দুই খুনির সঙ্গে রফা করে বলে অভিযোগ। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এরপরই ওই দুই খুনি ও কলেবর ঝালদায় ঢুকে গত ১৩মার্চ তপন কান্দুকে খুন করে ঝালদা-বাঘমুন্ডি সড়কপথ ধরে কুটিডি গ্রামে গিয়ে নিশ্চিন্তে ডেরা বাঁধে। খুনের অপারেশন সেরে আসিক খানের ঘরেই ছিল আততায়ীরা।
এই ঘটনায় কোনও সিসিটিভি ফুটেজ না পেয়ে ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন দুষ্কৃতীদের মোবাইল নম্বর জোগাড় করে পুলিশ। সেই মোবাইল নম্বরের টাওয়ার লোকেশনে দেখা যায়, কলেবর ঝালদায় রয়েছে এবং বৃদ্ধ আসিক খানেরও খোঁজ মেলে। গত বুধবার বিকেলে তাকে জেরা করে ধৃত কলেবরের খোঁজ পায় পুলিশ। আর সেই কলেবরকে গ্রেপ্তার করে তার সঙ্গে থাকা বিহারের খুনিদের খোঁজ পেয়ে যায় সিট। আর তারাই জানিয়ে দেয়, এই খুনের মূল ষড়যন্ত্রকারী নরেন কান্দু। কে খুন করেছিল, তা অবশ্য এখনও পুলিশ জানায়নি।
[আরও পড়ুন: Qatar World Cup 2022: কবে শুরু ফুটবল বিশ্বকাপ? কখন শুরু খেলা? পূর্ণাঙ্গ সূচি ঘোষণা ফিফার]
গত ১৩ মার্চ বিকেলে হাঁটতে গিয়ে ঝালদা-বাঘমুন্ডি সড়কপথে গোকুলনগর গ্রামের কাছে আততায়ীদের হাতে খুন হয়ে যান কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু। এরপরে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। নিহতের স্ত্রী তথা কাউন্সিলর পূর্ণিমা কান্দু এই ঘটনার বিচার চেয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি করেছিলেন। এ নিয়ে হাই কোর্টে মামলাও হয়। তবে মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে দ্রুতই হত্যাকাণ্ডের কিনারা করে ফেলল রাজ্য পুলিশের সিট।