সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর খুনের ঘটনায় আইসির সঙ্গে তাঁর ভাইপোর কথাবার্তার অডিও ভাইরাল হয়েছিল আগেই। এবার আরও বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করলেন নিহতের সেই ভাইপো মিঠুন কান্দু। নিহত তপনের বড়দা অনিল কান্দুর বড় ছেলে মিঠুন কান্দু ছিলেন ঝালদা থানার সিভিক ভলান্টিয়ার। প্রায় দু’বছর আগে তিনি এই কাজ হারান। কাকা তপন কান্দু একসময় বিজেপি করায় শাসকদল তৃণমূলের চাপে আইসি মিঠুনকে সিভিকের চাকরি থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
মিঠুনের অভিযোগ, সম্প্রতি ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষ তাঁকে বলেছিলেন যে, তিনি যদি তাঁর কাকাদের তৃণমূলে নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে চাকরি ফিরে পাবেন। তৃণমূলে সেই যোগদান নিয়ে আইসি ও মিঠুন কাঁদুর কথোপকথন ভাইরাল হওয়ার পর ওই পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে বুধবার এমন গুরুতর অভিযোগ আনেন নিহতের ভাইপো মিঠুন। এদিকে ঝালদায় পুরবোর্ড গঠন আপাতত স্থগিত থাকছে। মিঠুন বুধবার বলেন, “আমি ঝালদা থানার সিভিক ভলান্টিয়ার ছিলাম। আমার কাকা তপন কান্দু আগে বিজেপি করতেন। তাই শাসক দল তৃণমূলের চাপে আইসি আমাকে সিভিকের কাজ থেকে সরিয়ে দেন। সম্প্রতি তিনি বলেছিলেন, তোর কাকাদেরকে তৃণমূলে যোগদান করাতে পারলে তুই তোর চাকরি ফিরে পাবি।” এই গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে বুধবার রাতে ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষের প্রতিক্রিয়া নিতে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি কোনও সাড়া দেননি। এদিকে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস. সেলভামুরুগন বলেন, “আইসি-র বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি।”
[আরও পড়ুন: ‘৩ বছর আগে আমার কাছেও পেগাসাস বিক্রি করতে এসেছিল’, বিধানসভায় বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রী]
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানের ভিত্তিতে সিআইডির পোর্ট্রেট এক্সপার্ট ‘খুনি’র স্কেচ এঁকে ফেলেছেন। এই ‘খুনি’-কে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। তবে স্কেচে ফুটে ওঠা ‘খুনি’র সম্বন্ধে কোনও তথ্য দিতে পারেনি এই ঘটনায় ধৃত দীপক। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস.সেলভামুরুগণ বলেন, “খুনির স্কেচ এঁকেছে সিআইডি। এই খুনিকে যে ধরতে পারবে তাকে পুরষ্কৃত করবে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।”
প্রসঙ্গত, নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুরা চার ভাই। বড় ভাই অনিল প্রায় ২৫ বছর ধরে নিখোঁজ। বতর্মানে তার বড় ছেলে মিঠুন নিহত কাকার নানা ব্যবসার কাজ দেখেন। নিহত কাউন্সিলরের মুরগির ব্যবসা দেখেন মিঠুন। নিহত তপন কাঁদু এই মুরগির ব্যবসা, প্রোমোটারি ছাড়াও আর নানা কাজ করতেন। মিঠুন বলেন, “আমি যেহেতু থানার টাচে ছিলাম তাই কাকাদেরকে তৃণমূলে যোগদানের জন্য আইসি ক্রমাগত আমার ওপর চাপ দিচ্ছিলেন। যে অডিও ভাইরাল হয়েছে, সেই অডিও আমার ও ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষের। এই যোগদানের জন্য মাঝেমাঝেই সিভিক পাঠিয়ে আমাকে থানায় ডাকতেন আইসি। আমি ১২ মার্চের পর আর আইসির ফোন ধরিনি।”
[আরও পড়ুন: ‘৩ বছর আগে আমার কাছেও পেগাসাস বিক্রি করতে এসেছিল’, বিধানসভায় বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রী]
মিঠুনের আরও অভিযোগ, “আইসি বলতেন, আসানসোল থেকে গুন্ডা এনে বোমা ফাটিয়ে ভোট করতে পারি। মাঝে মধ্যেই বোমা-বারুদের কথা বলতেন।” এছাড়া কাকাদের যোগদান নিয়ে নানা হুমকি দিতেন।” তাঁর কথায়, “আইসি আমাকে বলতেন তুই তোর কাকাকে বলে দিস তৃণমূলে যোগদান না করলে এমন কেস দেব যে পুরুলিয়ায় কোর্টের কাছে বাড়ি করে থাকতে হবে।” নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলর দু’নম্বর ওয়ার্ডের তপন কান্দু, তাঁর স্ত্রী ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পূর্ণিমা কান্দুও এক নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় কাউন্সিলর বিজয় কান্দুকে তৃনমূলে যোগদান করানোর জন্য মিঠুনকে আইসি দায়িত্ব দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। ওই যোগদান নিয়ে কথোপকথনের ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপ সিআইডিকে শোনাতে চান মিঠুন। কিন্তু তা শোনেননি সিআইডির তিনজনের দল। মিঠুন বলেন, “আমি ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপিংসগুলো সিআইডিকে দেখাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেখেনি।”