ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: একুশের নির্বাচনের আগে বছরশেষে প্রতিমুহূর্তে নাটকীয় মোড় নিচ্ছে রাজ্য-রাজনীতি। দলত্যাগ করার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সুর বদলালেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। শুক্রবার কলকাতায় মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রশান্ত কিশোরও। বৈঠকের পর তিনি জানান, দলের কাছে ইস্তফাপত্র ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। নতুন উদ্দমে আসানসোলের জন্য কাজ করতে চান জিতেন্দ্র।
তবে দলত্যাগের পরই জিতেন্দ্রর বিজেপি যোগ নিয়ে জলঘোলা তৈরি হয়েছিল। এদিন তাতে অনেকটাই জল ঢেলে দিয়েছিলেন তিনি। জানিয়ে দেন, রাজনীতিতে থাকতেই হবে, এমন কোনও ব্যাপার নেই। ওকালতিতে ফিরবেন। তবে বিজেপিতে যোগ দেবেন না। তাই অমিত শাহর সভায় থাকারও প্রশ্ন উঠছে না। তবে এরপরই রাজনৈতিক মহলের একাংশ প্রশ্ন তুলতে শুরু করে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, বিজেপি মহিলা মোর্চা নেত্রী অগ্নিমিত্রারা জিতেন্দ্রর বিজেপিতে আসার বিরোধিতা করাতেই কি সুর বদল করলেন তিনি?
দিনের শেষেই স্পষ্ট হল ছবিটা। জিতেন্দ্র বলেন, “তৃণমূলেই আছি। ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল মিটে গিয়েছে। আমার ব্যবহারে দিদি দুঃখ পেয়েছেন শুনে আমার খারাপ লেগেছে। আমি এটা চাইনি। দিদিকে দুঃখ দিয়ে আমি বাঁচতে পারব না। বড় পরিবার। তাই সমস্যার কথা বলেছিলাম। মিটে গিয়েছে। ফিরহাদ হাকিমকে যা বলেছিলাম তা আর বলছি না। উনি বড় নেতা। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে প্রণাম করে আসব। ওঁকে জিতিয়ে মুখ্যমন্ত্রী করে আনব আমরা।”
এদিকে, কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের জন্য মেলেনি আসানসোলের উন্নতিকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ। কেন্দ্রের তরফে সে অর্থ মিললে আজ ভোল বদলে যেত শহরের। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সম্প্রতি এভাবেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন সদ্য দলত্যাগী জিতেন্দ্র তিওয়ারি। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে (Firhad Hakim) দেওয়া তাঁর সেই সংক্রান্ত চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। দলের কোন্দল আরও প্রকট হয়ে ওঠে। তবে বৃহস্পতিবার যাবতীয় পদে ইস্তফা দিয়ে জিতেন্দ্র দলত্যাগ করার পরই নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। আসানসোল পুরনিগমের সদ্যপ্রাক্তন প্রশাসকের সেই চিঠির এবার উত্তর দিলেন ফিরহাদ। জানিয়ে দিলেন, জিতেন্দ্রর আনা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন।
নিজের চিঠিতে জিতেন্দ্র দাবি করেছিলেন, স্মার্ট সিটি বানানোর প্রকল্পে কেন্দ্রের তরফে ২০০০ কোটি টাকা পেতে পারত আসানসোল। কিন্তু শুক্রবার দু’পাতার চিঠিতে ফিরহাদ সাফ জানিয়ে দেন, এই প্রকল্পের আওতায় আসানসোল ছিলই না। তাছাড়া স্মার্ট সিটি তৈরি অভিযানে কেন্দ্রের থেকে এতবড় অঙ্কের অর্থের কথা চিন্তা করাও অমূলক। একইসঙ্গে তিনি এও স্পষ্ট করে দেন, আসানসোলের উন্নতিকল্পে একাধিক খাতে ৫৪৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলাগঠন, আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, আইটি পার্ক, সমবায় ভবন, শ্রমিক ভবন নির্মাণ-সহ নানা কিছু পেয়েছে আসানসোল। আগামিদিনেও এভাবেই রাজ্য সরকার এই শিল্প-শহরের উন্নতির কাজ করবে।
[আরও পড়ুন: গরু পাচার কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত এনামুলের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ হাই কোর্টের]