সুব্রত বিশ্বাস: এগারো বছর আগে জ্ঞানেশ্বরী (Jnaneswari Express) কাণ্ডে ‘মৃত্যু হয়েছিল’ অমৃতাভ চৌধুরীর। সেই মতো ক্ষতিপূরণও পেয়েছিল তাঁর পরিবার। ‘মৃত’ অমৃতাভর বোন মহুয়া চৌধুরী পাঠক রেলে চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু এগারো বছর পর মৃত সেই যাত্রীকে ‘জীবিত’ অবস্থায় ধরল সিবিআই (CBI)। তারপরই শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা। এহেন পরিস্থিতিতে কার্যত গা ঢাকা দিয়েছেন মহুয়া।
[আরও পড়ুন: জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডে মদত ছিল মমতার! বিস্ফোরক অভিযোগ বিজেপি নেতার]
সোমবার অফিসে আসেননি ‘মৃত’ অমৃতাভর বোন মহুয়া চৌধুরী পাঠক। শুক্রবার তাঁকে শেষ অফিসে দেখা গিয়েছিল। ওই দিন রাতেই অমৃতাভ চৌধুরী ও তাঁর বাবা মিহির চৌধুরীকে আটক করে সিবিআই। শনিবার খবর চাউর হতেই শিয়ালদহের সিনিয়র ডিভিশনাল সিগন্যাল অ্যান্ড টেলিকম অধিকারিকের অফিসের সবাই জানতে পারেন, তাঁদের দপ্তরের কর্মী মহুয়া জাল নথি দেখিয়ে চাকরি করছেন দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী তিনি। হেল্পার হয়েও বাইরে কাজে না গিয়ে তিনি অফিসের কাজ করতেন। কথা কম বললেও, সহকর্মীদের দম্ভ করে জাহির করতেন, ”রেল কি আমাকে এমনি চাকরি দিয়েছে।” তবে, দাদার মৃত্যুতে চাকরি পাওয়ার বিষয়টিকে বরাবর উহ্য রাখতেন তিনি। অনেকেই মনে করছেন, দাদা জীবিত বলে হয়তো তিনি জানতেন। তাই আর সেকথা মুখে আনতেন না।
সোমবার সহকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। কয়েকজন জানান, মহুয়া স্বল্পভাষী ছিলেন। অফিসে সবাইকে এড়িয়ে চলতেন তিনি। হেল্পার হয়েও চাকরি নিয়ে দপ্তরেই থাকতেন আলাদাভাবে। বিভাগের ছুটি, অবসরের কাগজপত্র ড্রিল করতেন। কার্ড পাস তৈরি আনা নেওয়াও করতেন তিনি। কর্মীদের কথায়, “খুঁটির জোর আছে। এভাবে চাকরি নিয়েছে। তারপরেও শিয়ালদহে প্রথম পোস্টিং। হেল্পার হয়ে ফিল্ডে কাজের সাহায্য করাই তার কাজ। সেখানে নিজের পদের কাজ না করে অফিসে পিয়নের কাজ করেছে বরাবর। এটা ভালো সোর্স ছাড়া সম্ভব নয়।” জানা যায়, চাকরি জীবনের শুরুতে অবিবাহিত থাকলেও পরে বিয়ে করেন মহুয়া। ১৮ হাজার টাকার বেসিকের পদের বেতন পরিকাঠামোর যোগ দিয়ে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা মাইনে তুলছেন তিনি বলে সহকর্মীদের একাংশের দাবি। এদিকে, বিতর্কের পর চাকরি ও বোনের মাইনের টাকা ফিরিয়ে দেওযার কথা বলছেন অমৃতাভ। তবে ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া সেই টাকা কীভাবে ফেরাবেন তা স্পষ্ট করেননি ‘মৃত’ অমৃতাভ চৌধুরী।এদিকে, আজই সিবিআই দপ্তরে হাজিরা দিয়েছেন ‘মৃত’ অমৃতাভর বাবা মিহির চৌধুরী। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তাঁর স্যাম্পল নেওয়া হতে পারে। একসঙ্গে অমৃতাভর বয়স নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। ফলে তাঁর প্রকৃত বয়স নির্ধারণে হাড়ের পরীক্ষা (অসিফিকেশন টেস্ট) করা হতে পারে।