অর্ণব আইচ: পড়াশোনা ভাল লাগত না। সারাক্ষণ মাঠের দিকে মন পড়ে থাকত। বাড়িতেও তাই বকাবকি, কড়া শাসন। এসবের জেরেই মানসিক অবসাদ এবং তার জেরে সম্ভবত আত্মঘাতী বাঘাযতীনের এক স্কুলছাত্র। নাকতলা হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রোহন রায়ের মৃতদেহ উদ্ধার করে প্রাথমিক জেরার পর এমনই অনুমান পুলিশের। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টেই সবটা স্পষ্ট হবে।
মাঠে নামলে দাপিয়ে ফুটবল খেলত বছর বারোর ছেলেটা। এই প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ অনেক পুরস্কারও ছিল ঝুলিতে। এবছর ইস্টবেঙ্গল জুনিয়র টিমে সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু খেলার কেরিয়ার সেভাবে শুরু হওয়ার অনেক আগেই নিভে গেল সমস্ত আশার দীপ। মঙ্গলবার রাতে দোতলা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় বাঘাযতীনেকর বিদ্যাসাগর কলোনি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে রোহন রায়ের দেহ। তাকে তড়িঘড়ি বাঘাযতীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ততক্ষণে সব শেষ। চিকিৎসকরা রোহনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
[আরও পড়ুন: পঞ্চসায়র গণধর্ষণ কাণ্ডে নয়া মোড়, বয়ান পালটে নির্যাতনের স্বীকারোক্তি অভিযুক্তর]
তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে আসে অনেক তথ্যই। জানা যায় রোহনের ফুটবল প্রতিভা ও ক্রীড়াপ্রেমের কথা। নাকতলা হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির রোহন পড়াশোনা প্রায় করতেই চাইত না বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তার জন্য তাঁর অভিভাবকরা কম বকাবকি করতেন না। পুলিশে জানতে পেরেছে, সম্প্রতি সেই শাসন আরও জোরদার হয়েছিল। মেধাবী দাদার সঙ্গে তুলনা করে রোহনকে কটাক্ষ করা হত। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়াশোনায় অমনোযোগিতার জন্য ইদানিং স্কুলেও রোহন বকা খেত। তার অভিভাবকদের ডেকে অভিযোগ জানিয়েছিলেন স্কুল শিক্ষকরা। আর তারপর থেকেই রোহনের উপর শাসন বেড়ে গিয়েছিল।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধেবেলাও রোহনকে বকাবকি করেছিলেন বাবা, মা। তা কানে পৌঁছেছিল প্রতিবেশীদের। বকা খেয়ে রোহন নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। রাত ন’টা নাগাদ তাকে ডাকাডাকি করে দাদা। সাড়া না পেয়ে সন্দেহ হয়। প্রতিবেশীদের ডেকে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে সকলে দেখেন, গলায় মায়ের শাড়ি জড়ানো অবস্থায় সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত রোহন। তাকে বাঁচাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। গোলপোস্টের অব্যর্থ নিশানায় বল নিয়ে এগোতে এগোতেই চিরঘুমের দেশে চলে গিয়েছে রোহন। সামান্য বিকাশের আগে প্রায় অঙ্কুরেই ঝরে গিয়েছে একটি প্রতিভা। অনেকেই মনে করছেন, পড়াশোনার জন্য চাপ না দিলে হয়ত রোহনের আজ এই পরিণতি হত না। একটু বকাবকির জন্য ছোট ছেলেকে এভাবে হারাতে হল, ভেবে দিশেহারা মা-বাবাও।
[আরও পড়ুন: চাই পুত্রসন্তান, শিশু বদলের গল্প ফেঁদে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ পরিবারের]
The post পড়াশোনায় অমনোযোগী, অভিভাবকদের শাসনে আত্মঘাতী জুনিয়র ফুটবলার appeared first on Sangbad Pratidin.