গোবিন্দ রায়: রবিবার রাতে প্রায় শোয়া দু’ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের সাক্ষী থেকেছে বিশ্ব। যেখানে ৩৬ বছরের খরা কাটিয়ে বিশ্বজয় করেছেন লিও মেসি। ব্যান্ডেল থেকে বুয়েন্স আইরেস- নীল সাদা সুতোয় বাঁধা পড়েছিল আর্জেন্টিনা সমর্থকদের আবেগ আর উচ্ছ্বাস। চায়ের ঠেক থেকে ট্রেনের কামরা- সর্বত্রই চর্চায় ছিল মেসির ঐশ্বরিক পারফরম্যান্স, এমপাবের অদম্য লড়াই। বিশ্বকাপ ফাইনালের সেই আঁচ থেকে দূরে রইল না কলকাতা হাই কোর্টও। উচ্চ আদালতের ১৭ নম্বর এজলাসে ফুটবল জ্বরে ভুগতে দেখা গেল খোদ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে!
সোমবার শুনানির মাঝে বেশ খোসমেজাজেই বিশ্বকাপ (FIFA World Cup 2022) নিয়ে আলোচনা করতে শোনা গেল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে। ফুটবলের প্রতি বাঙালির ভালবাসা, বাংলার ফুটবলের অতীত গৌরব নিয়ে নানা কথা উঠে আসে তাঁর আলোচনায়। তাঁর মুখে উঠে আসে পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামীর মতো কিংবদন্তিদের নাম। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Justice Abhijit Ganguly) বলতে শোনা যায়, “বিশ্বকাপের ফাইনাল সত্যি অনেক ফুটবলের স্মৃতিকে নতুন করে ফিরিয়ে দিল। পিকে, চুনী, বদ্রু, অমলের খেলা আর নেই। সেসব সোনালি দিন এখন অতীত। সেসব দিন আজও মধুর।”
[আরও পড়ুন: অনুব্রত মণ্ডলকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরা করা যাবে, জানাল রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট]
বিচারপতি যেভাবে বাঙালি ফুটবলারদের নিয়ে অতীতের স্মৃতিচারণা করেছেন, তাতে তিনিও যে ফুটবল ভক্ত, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। রবিবার হাইভোল্টেজ আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্স ম্যাচও যে তিনি দেখেছেন, তারও প্রমাণ মিলল তাঁর কথায়। এমবাপে প্রসঙ্গে বলেন, “অল্প বয়সে ফ্রান্সের এমবাপে দারুণ খেলত।” ফাইনালে এমবাপের একটি শটের কথা বলতে গিয়ে উঠে এল প্রয়াত পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, “গতকাল এমবাপে একটা শট নিয়েছিলেন। মনে পড়ে যায় পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় হলে তেকাটির মধ্যেই রাখতেন।” এরপরই তাঁর মুখে শোনা যায় লাতিন আমেরিকার ফুটবলের প্রশংসা। বলেন, “আর্জেন্টিনা জিতেছে। মেসি নয়। লাতিন আমেরিকার ফুটবলের ছন্দই আলাদা।”
অমল দত্ত, পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় চলে যাওয়ায় যে তিনি আর ডার্বি দেখেন না, সে কথাও জানালেন। বাংলার ফুটবলের জৌলুস ও গৌরব অনেকটা ফিকে বলেই মত তাঁর। বাংলা শেষ কবে সন্তোষ ট্রফি জিতেছে, উদয় মোহন বন্দ্যোপাধ্যায় কেমন আছেন, পেলের শারীরিক অবস্থা কেমন, সেসব খোঁজও নেন তিনি। সব মিলিয়ে জমজমাট হয়ে ওঠে ১৭ নম্বর এজলাস। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যে বিচারপতি হরদম কড়া পদক্ষেপের কথা বলেন, তিনিই এদিন আদালতের মেজাজ হালকা করে দিয়েছিলেন।