ব্রতদীপ ভট্টাচার্য: যে হাতের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল, সেই হাতই আবার কাগজ-কলম ধরেছে। অভিযোগের কালি মুছে, মূল স্রোতে ফেরার লড়াই। হোমে থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে খুনের দায়ে অভিযুক্ত বিচারাধীন নাবালক। এক যুবককে খুনের দায়ে গ্রেপ্তার হয় ক্লাস টেনের ওই ছাত্র কিংশুক (নাম পরিবর্তিত)। মুহূর্তের ওই ঘটনাটি আমূল বদলে দিয়েছিল জোড়াসাঁকো এলাকার বাসিন্দা ওই কিশোরের জীবন। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে ওই এলাকায় দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়। গুলি চলে। আর সেই গুলিতে মৃত্যু হয় দুই বিবদমান গোষ্ঠীর একজন সদস্যের। খুনের দায়ে কিংশুককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের নির্দেশে ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার ধ্রুবাশ্রম হোমে পাঠানো হয় কিংশুককে। মামলাটি এখনও বিচারাধীন।
[দুর্ঘটনায় সব শেষ, বাবার শেষ ইচ্ছে পূরণ করে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসল কিশোরী]
ধ্রুবাশ্রম কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, হোমে আশা ইস্তক কিংশুকের একটাই দাবি ছিল যে, সে খুন করেনি। কিংশুকের বক্তব্য, ঘটনার দিন দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছিল। ঘটনাচক্রে সে ওই জায়গায় উপস্থিত ছিল। আচমকা গুলি চলে। সেই ঘটনায় অন্যদের সঙ্গে পুলিশ তাকেও গ্রেপ্তার করে। ধ্রুবাশ্রম হোমের সুপার অর্ণব রায় জানিয়েছেন, “হোমে আশার পর কিশোরটি কিছুদিন বিমর্ষ ছিল। তবে কয়েকদিন পর নিজেই লেখাপড়া চালানোর আর্জি জানায়। হোমের তরফ থেকে ওই কিশোরকে মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হয়। দপ্তরের নির্দেশে তার মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থাও করা হয়।” হোম কর্তৃপক্ষের দাবি, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় কিংশুক। ছবি আঁকে সে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে ভোকেশনাল ট্রেনিং নিচ্ছে। মাধ্যমিকের প্রস্তুতির জন্য দিনরাত পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সে। সোমবার জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিতে যায় সে।
একা কিংশুক নয়, ধ্রুবাশ্রম হোমে থেকে আইসিএসই পরীক্ষা দিচ্ছে তৌসিফ-ও (নাম পরিবর্তিত)। কামারহাটি এলাকায় গুলি চালিয়ে এক যুবককে খুনের চেষ্টার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। ১ মার্চ বারাকপুর আদালতের নির্দেশে ওই কিশোরকে পাঠানো হয় ধ্রুবাশ্রম হোমে। মামলাটি এখনও বিচারাধীন। দু’টি পরীক্ষা দেওয়ার পর হোমে ঠাঁই হয় তার। ওই ছাত্রের পাশেও দাঁড়ান উত্তর ২৪ পরগনার সমাজ কল্যাণ বিভাগ ও হোম কর্তৃপক্ষ। সমাজ কল্যাণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (কোষাগার) অদীপ রায় জানিয়েছেন, “দু’টি ছাত্রই যাতে পরীক্ষা দিতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশি প্রহরায় তাদের পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়া তাদের পরীক্ষার প্রস্ততির জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেহোম কর্তৃপক্ষ।”
[ফ্লাইং কিস দিয়ে আত্মঘাতী কিশোর, জীবনে ইতি টানল কিশোরী প্রেমিকাও]
The post যে হাত থেকে গুলি ছুটেছিল, সে হাতেই এখন পরীক্ষার কলম appeared first on Sangbad Pratidin.