shono
Advertisement

ক্ষয়রোগ যদি না পড়ে ধরা

কবীর সুমনের সাপ্তাহিক কলাম। The post ক্ষয়রোগ যদি না পড়ে ধরা appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 05:05 PM Sep 08, 2018Updated: 05:17 PM Sep 08, 2018

রাস্তা, সেতু, বড় বড় স্থাপনা পুরনো হয়ে গেলে আরও নজরদারির দাবিদার। কিন্তু আগে খতিয়ে দেখা দরকার বিপর্যয়ের সম্ভাব্য কারণগুলি। শুধুই কি সরকারি গাফিলতি? না কি আরও কিছু কারণ, যেগুলি শনাক্ত না হলে অনুরূপ বিপর্যয় হবে আরও। কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা শুরু হওয়ার আগেই নানা পরিসরে স্থূল আক্রমণ মানসিক স্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। লিখেছেন কবীর সুমন

Advertisement

এক বন্ধু জানালেন মাঝেরহাট ব্রিজের উপর জল জমত। রাস্তায় যেমন জমে তেমনই। গাড়ি গেলে জল ছিটকে যেত ফোয়ারার মতো দুই ধারে। নিজের চোখে দেখিনি, শুনলাম। যাঁরা বৃষ্টির মধ্যে মাঝেরহাট ব্রিজ দিয়ে যাওয়া-আসা করেছেন, তাঁরাই সঠিক বলতে পারবেন।

জল জমা মানে রাস্তার চোকলা উঠে যাওয়া। গর্ত। ছেলেবেলা থেকে অভিজ্ঞতা- রাস্তা তৈরির কাজে গলদ থাকলে, ফাঁকি থাকলে যে গর্ত দেখা দেয়, তা মেরামত করে লাভ হয় না তেমন। পরের বর্ষায়, এমনকী তার আগেই আবার যে কে সেই। এর কারণ? কে বলবে? কেউ কেউ বলেন- আমাদের দেশে রাস্তা তৈরি, ইমারতি কাজকর্ম এগুলোর গলদ নাকি গোড়াতেই। যে জিনিস দরকার সেটা দেওয়া হয় না। সরকারি কাজ হয় টেন্ডারের ভিত্তিতে। কোন সংস্থার টেন্ডার গ্রহণ করা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়েই নাকি লুকনো লেনদেনের নাটকটা হয়। এমনিতেই যে যত কম দামে কাজটা করে দেবে বলে প্রস্তাব দেয়, গ্রহণযোগ্যতা নাকি তারই বেশি। তারই মধ্যে নাকি কর্মদাতার মন জোগানোর বিষয়টাও থাকে। সব ক্ষেত্রে না হলেও অনেক ক্ষেত্রে।

[বাংলা খেয়াল দস্তুরমতো সম্ভব]

অনেকের ধারণা, সরকারি কাজের বরাত দেওয়া নেওয়ায় উৎকোচের ব্যাপারটা কেবলমাত্র আমাদের দেশের বৈশিষ্ট্য। ভুল ধারণা। দুনিয়ায় এমন মানুষ কমই আছেন যাঁর বিলকুল কোনও লোভ নেই। উপরি কিছু পেলে মন্দ কী- এই ভাবনা যে কেবল আমাদের দেশের মানুষদের মগজে ঘাই মারে, তা না ভাবাই ভাল। বাঁকা পথে কি কেবল ভারত বা উপমহাদেশের মানুষ চলে? নীরদ সি. চৌধুরী তাঁর ‘অটোবায়োগ্রাফি অফ অ্যান আননোন ইন্ডিয়ান’ (অজ্ঞাত এক ভারতীয়র আত্মজীবনী) গ্রন্থে লিখেছিলেন, ‘এমনকী, আমাদের দেবতাদেরও ঘুষ দেওয়া যায়।’- অন্যান্য দেশের দেবতাদের দেওয়া যায় কি না জানি না, তবে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের কাউকে কাউকে যে বিলক্ষণ দেওয়া যায়, সে খবর সাংবাদিকরা জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। ‘নীতিগর্হিত’ কাজে শুধু আমাদের উপমহাদেশ দক্ষ ভাবলে সাহেবদের প্রতি অবিচার করা হবে। খেলাধুলোয় রাসায়নিক ব্যবহারের ব্যাপারটা? বিশেষ বিশেষ স্টেরয়েড প্রয়োগ করে আগের নজির ভাঙা, নতুন নজির গড়া- এবং ওইভাবে সোনা জেতা- এই কৃৎকৌশলে সাহেবরা অনেকটা এগিয়ে।

[প্রথমত চাই আরও শান্তি-সারসওয়ালা]

একবার সুইডেনের ‘বোফর্স’ সংস্থার কামান কিনতে গিয়ে ঘুষ নেওয়া নিয়ে ভারতের এক নেতা ও তাঁর দল সম্পর্কে অভিযোগ উঠেছিল। অথচ বাস্তব সত্য হল- আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের কেনাকাটায় কিছু টাকা চিরকাল হাতবদল করেছে, এখনও করে। এককালের পশ্চিম জার্মান সরকারের এক দুঁদে মন্ত্রী দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাবমেরিন বিক্রি করতে গিয়ে উপরি টাকার হাতবদলে জড়িয়ে পড়েছিলেন। যথেষ্ট কেলেঙ্কারি হয়েছিল। অথচ আন্তর্জাতিক ব্যবসায় কিছু টাকা এদিক-ওদিক হয়েই থাকে। দেশের ভেতরের ব্যবসাও কি বাদ যায়? বাদ যেতে পারে?

অতীতে আমাদের দেশে রাস্তা, সেতু, ঘরবাড়ি যেভাবে তৈরি হয়েছে তাতে ফাঁকির ভাগ বেশি হলে থেকে থেকেই দুর্ঘটনা ঘটত। তা কিন্তু ঘটে না। চিনে যেমন বাঁধ বিপর্যয় হয়েছে নানা সময়ে, তাতে প্রচুর ক্ষতিও হয়েছে। সে খবর বাইরে বেরতে পারেনি। কিছুদিন আগে কেরলে যে বন্যা হল তাতে প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ৪০টি বাঁধের ক’টি হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে? একটিও কি? বাঁধের স্লুইসগেট খুলে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ, নয়তো ক্রমবর্ধমান জলের চাপে বাংধ ভেঙে যাওয়ার ভয় ছিল।

[প্রমাণ কই যে কান্দাহার থেকে আসোনি…]

মানুষের তৈরি কারণেই প্রকৃতি ক্ষিপ্ত। প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে মানব সভ্যতাই ডেকে আনছে নিজের বিনাশ। কয়েক বছরের মধ্যে তিনটি সেতু ভেঙে পড়ল। রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটি একটি কারণ হতেই পারে। কলকাতার নিচে যে মাটি তার স্থিতিশীলতায় কি কিছু পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে? বিশেষজ্ঞরা, বিজ্ঞানীরা নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখছেন ও দেখবেন। যে কোনও বিপর্যয়ের পর, সভ্য দুনিয়ায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যা প্রত্যাশা করা যায়, আমাদের রাজ্যের ‘শিক্ষিত’ ব্যক্তিদের অনেকের কাছেই তা, যা দেখছি, প্রত্যাশা করা যাচ্ছে না। বাকসংযম, তূষ্ণীম্ভাব। কিছু ঘটলেই প্রথমেই নানা জন-যোগাযোগ-পরিসরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কদাকার গালাগাল, আক্রমণ আর হাসিঠাট্টা যে একঘেয়ে ও বিরক্তিকর লাগতে পারে, বিরোধীরা এটা যেন বোঝেন না। সরকারের গাফিলতি থাকতেই পারে। তা, অবশ্যই নিন্দনীয়। রাস্তা, সেতু, বড় বড় স্থাপনা পুরনো হয়ে গেলে আরও নজরদারির দাবিদার, নিশ্চয়ই। কিন্তু আগে খতিয়ে দেখা দরকার বিপর্যয়ের সম্ভাব্য কারণগুলি। শুধুই কি সরকারি গাফিলতি? না কি আরও কিছু কারণ থাকা সম্ভব যেগুলি শনাক্ত না হলে অনুরূপ বিপর্যয় আরও হবে? কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা শুরু হতে পারার আগেই নানা পরিসরে স্থূল আক্রমণ মানসিক স্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়।

জীবনের বছর ১৩ একাধিক দেশে সাংবাদিকতা করেছি। নানা সময়ে দেখেছি দেশে বিপর্যয় হলে তুখড় বিরোধীরাও কিছুকালের জন্য অস্ত্রবিরতি পালন করে থাকেন, অবলম্বন করেন সতর্ক মিতভাষণ। ধাক্কা ও ক্ষয়ক্ষতি সামলানোর সময় দেন তাঁরা সরকার ও জনগণকে। সমালোচনা আসে তারপর, তার আগে নয়। আমাদের রাজ্যের বিরোধীরা যদি একটু ভেবে দেখতেন।

(মতামত নিজস্ব)
kabirsuman2013@gmail.com

The post ক্ষয়রোগ যদি না পড়ে ধরা appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup রাজধানী এক্সপ্রেস toolbarvideo ISL10 toolbarshorts রোববার