shono
Advertisement

সে এক অদ্ভুত মুহূর্ত! মাস্টারমশাই কাঁদছেন, আমারও চোখে জল

কেন আমির খাঁয়ের কাছে সংগীত শিক্ষা হল না সুমনের? The post সে এক অদ্ভুত মুহূর্ত! মাস্টারমশাই কাঁদছেন, আমারও চোখে জল appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 02:20 PM Mar 10, 2018Updated: 02:13 PM Jul 11, 2018

‘মানবতার দোহাই বন্ধুরা সংগঠিত হন, ভয় পাবেন না।’- নব্বইয়ের কলকাতা আমূল কেঁপে উঠেছিল এ আহ্বানে। বড় ভাঙচুরের সময় ছিল সেটা। বিশ্বায়নের হাওয়ায় ঢুকে পড়ছে অনেক কিছু। ছেড়ে যাচ্ছে আরও অনেক কিছু। গিটার হাতে তবু সেদিন তিনি বলেছিলেন, হাল ছেড়ো না। সেই নাগরিক কবিয়াল পা দিচ্ছেন সত্তরে। জীবনের সাত সমুদ্র পারের কত অভিজ্ঞতা ভিড় করছে। সে সবেরই উদযাপন তাঁর জন্মদিনে, নজরুল মঞ্চে। তার আগে জীবনের সাত দশকের পারে দাঁড়িয়ে নস্ট্যালজিয়ায় ডুব দিলেন কবীর সুমন। সঙ্গী সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল। আসুন পর্বে পর্বে আবিষ্কার করি প্রিয় সুমনকে। আজ তৃতীয় পর্ব

Advertisement

প্রথম পর্ব:  রেডিওর সিগনেচার টিউন শুনলে মনে হত একা চিল উড়ে যাচ্ছে 

দ্বিতীয় পর্ব:  কচ্ছপের কাছে বন্ধুতা শিখেছি, সুকুমারের কাছে জ্যান্ত বাংলা ভাষা

 

সন্ধের গলাসাধা…কী কঠিন ছায়ানট রাগ

যে বয়সের স্মৃতি এই লাইনটায় উঠে এসেছে তখন আমি খুব খেলতাম। আর খেলার জগত থেকে সেই সময়টাতেই সদ্য আমি রাগ সংগীতের দুনিয়ায় এসেছি। গুরু কালীপদ দাশের কাছে বাবা আমার গান শেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সে সময়টা আমি প্রচুর খেলতাম। হয়তো দুপুরে খেলেছি, বিকেলেও খেলেছি। গলদঘর্ম দশা। গলা ভেঙে গিয়েছে। তখন তো আবার বয়ঃসন্ধি পেরচ্ছি। গলা একেবারেই ভাঙা। গান গাইতে পারি না ঠিক করে। তার মধ্যেই গলা সাধতে হত। মাস্টারমশাই গান শেখাতে আসতেন সন্ধেবেলায়। বসতে হত। তো এই সময়টাই ধরা পড়ে গিয়েছে ওই গানে।

[  রেডিওর সিগনেচার টিউন শুনলে মনে হত একা চিল উড়ে যাচ্ছে ]

তবে গলা সাধতে না বসার জন্য বায়না-টায়নার কোনও বালাই ছিল না। চড়িয়ে একেবারে লম্বা করে দেবে। আর সত্যি বলতে আমার খুব একটা খারাপও লাগত না। গলা দিয়ে সুরগুলো ভাল বেরচ্ছে না। নিজেই বুঝতে পারছি। আর তাতে নিজের উপরই রাগ হত। তবে খুব ধৈর্য ধরে মাস্টারমশাই আমাকে শেখাতেন। যে সংগীতগুরুকে আমি পেয়েছি, তাঁর কথা ভাবলে আমার চোখে জল এসে যায়। সময়টা যে কত অন্যরকম ছিল, মানুষটা যে কীরকম ছিলেন, তা আজ আর ভাবাই যায় না। একটা গল্প বলি। আসলে আমার বাবা চেয়েছিলেন আচার্য চিন্ময় লাহিড়ীর কাছে আমাকে শেখাতে। তখন আমার এগারো বছর বয়স। আমার বাবাকে সবাই বড়দা বলে বলতেন। তো চিন্ময়বাবু আমার বাবাকে বলেন, বড়দা, আমার শরীরের যে হাল তাতে আমি আপনার ছেলেকে শেখাতে পারব না। ওর আরও বেশি গাইডেন্সের দরকার। বরং আমি উপযুক্ত একজনকে পাঠাচ্ছি, যিনি আপনার ছেলেকে তৈরি করবে, ছোটবেলা থেকেই। কী আশ্চর্য দূরদৃষ্টি ভাবুন! দেখুন, উনি তো রাজি হয়ে গিয়ে যে কোনও টাকা চাইতে পারতেন। কিন্তু করলেন না। পাঠালেন ওঁর শ্রেষ্ঠ ছাত্র কালীপদ দাশকে। আমি মাস্টারমশাই বলতাম। থাকতেন টালিগঞ্জে। রেডিওতে খেয়াল-ঠুংরি গাইতেন। আর অসীম ধৈর্য নিয়ে আমাকে শেখাতেন। প্রথম কয়েক বছর আমি কিচ্ছু পারিনি। কিচ্ছুটি নয়। উনি ধৈর্য ধরে বলতেন, চেষ্টা করো, ঠিক পারবে। আজ আমি যা কিছু শিখেছি সব মাস্টারমশাইয়ের জন্য।

[  কচ্ছপের কাছে বন্ধুতা শিখেছি, সুকুমারের কাছে জ্যান্ত বাংলা ভাষা ]

তো একদিন মাস্টারমশাই আমাকে শেখাচ্ছেন। বাবা এসে বললেন, আমির খাঁ সাহেব আমাকে তালিম দিতে রাজি হয়েছেন। এক মুহূর্তের জন্য গান-বাজনা থামল। মাস্টারমশাই খানিকক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর দেখলাম উনি কাঁদছেন। এদিকে মাস্টারমশাই কাঁদছে দেখে আমিও কাঁদছি। এদিকে যিনি তবলায় সঙ্গত করছিলেন তাঁরও চোখে জল। সে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। কিন্তু মাস্টারমশাই কেন কাঁদছিলেন জানেন? আমির খাঁ আমাকে তালিম দিতে রাজি হয়েছেন শুনে উনি বলেছিলেন, সুমন তো উস্তাদজির কাছে তালিমও নেবে, আমিও তাহলে সুমনের কাছে তালিম নেবো। হ্যাঁ, ঠিক এই কথাটিই বলেছিলেন। আজ এসব ভাবাই যায় না। এই সময়ে দাঁড়িয়ে ওরকম একটা মানুষের কথা সত্যি ভাবা যায় না। মাস্টারমশাইয়ের জবাব শুনলেন বাবা। তারপর মুহূর্তমাত্র চিন্তা করলেন না। বললেন, গান-বাজনা যেমন চলছিল চলুক। আমার ছেলে তার গুরুকে পেয়ে গিয়েছে।

সুমনের জন্মদিনে উদযাপন ‘সত্তরে সুমন’। ১৬ মার্চ, নজরুল মঞ্চে। টিকিটের জন্য যোগাযোগ করুন এখানে– https://goo.gl/vPpqje । ] 

The post সে এক অদ্ভুত মুহূর্ত! মাস্টারমশাই কাঁদছেন, আমারও চোখে জল appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement