দেব গোস্বামী, বোলপুর: অনুব্রতহীন কালীপুজোয় (Kali Puja) কোপ পড়ল দেবীর ৫৭০ ভরি সোনার গহনায়। আসল-নকল একাকার। অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mandal) থাকতে গয়নাগুলি আসলই ছিল। প্রতিমা ভরি ভরি গহনায় সেজে উঠতো। তবে তাঁর অনুপস্থিতিতে এবছর যেগুলি পরানো হয়েছে নকল বা ইমিটেশন বলেও দাবি করছেন দলীয় কর্মীদের একাংশই।
বোলপুরে তৃণমূল (TMC) কার্যালয়ের কালীপুজো মানেই প্রতিমার গহনার সাজ আলাদা আকর্ষণ সকলেই কাছেই। রাজকীয় সাজসজ্জা ছিল অন্যতম আলোচনার বিষয়। হার, আংটি, বালা-সহ লক্ষ লক্ষ টাকার গয়না পরানো হত প্রতিমাকে। যদিও বীরভূমের তৃণমূল জেলার সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “নকল নয় এগুলি আসল সোনা। তবে ৫৭০ ভরির বদলে শুধু ৭০ ভরির মত গহনা এবার পরানো হয়েছে।”প্রতি বছর দাঁড়িয়ে থেকেই পুজোর সব দায়িত্ব সামলাতেন অনুব্রত।জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন দলীয় কার্যালয়ে আসতেন। বহু মানুষের খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত করা হত। কিন্তু, অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেপ্তারির পরেই বদলে যায় পুরো চিত্রটা।
[আরও পড়ুন: দীপাবলিতে নবাব যেন বাঙালিবাবু! ধুতি-পাঞ্জাবিতে সইফকে সাজালেন কলকাতার ডিজাইনার]
২০২১ সালের কালীপুজোয় প্রায় তিন কোটি টাকার সোনার গয়নায় (Gold Ornaments) প্রতিমা সাজিয়েছিলেন তিনি। এখন তিনি নেই সশরীরে,বর্তমানে তিহার জেলে বন্দি। এবারেও পুজোর আনন্দও খানিকটা হলেও ফিকে। কেষ্ট নেই তাই এবারেও তৃণমূলের কালীপুজো জৌলুসহীন। নেতা মন্ত্রীদের দেখা মিললেও জাঁকজমকহীন অনুব্রত মণ্ডলের কালীপুজোর আয়োজন। চাঁদা তুলেই যৎসামান্য গয়না প্রতিমাকে পড়িয়েই বীরভূমে (Birbhum) দলীয় কার্যালয়ে কালীপুজোর আয়োজন।এবারেও তাঁকে ছাড়ায় তাঁরই প্রতিষ্ঠিত কালীপুজো করতে হচ্ছে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের। অনুব্রত’র অনুপস্থিতির প্রভাব পড়েছে এবারেও মাতৃ আরাধনায়।পুজোর সেই জৌলুসের ছিটেফোঁটাও নেই। নেতা কর্মীদেরও মনও ভালো নেই।
অন্যদিকে, বিগত বছরগুলির মতই বোলপুরের নিচুপট্টির মন্ডল বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরত্বে এ বছরও ৪৫ ফুটের কালীপুজোর আয়োজন করা হয়। অনুব্রত মণ্ডলের হাত ধরে শুরু হওয়া বাড়িপুকুর সম্মিলনীর কালীপুজোর বয়স এই বার ৫৬বছরের।বর্তমানে বাড়িপুকুর সম্মেলনী ক্লাব এই পুজোর মূল উদ্যোক্তা।
অবশ্য এখন এই পুজোর নেপথ্যে রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডলের ভাই প্রিয়ব্রত মণ্ডল। মণ্ডল পরিবারের গৃহদেবতা দুর্গা।প্রাচীন রীতি অনুযায়ী, কালীপুজো করতে নেই। একগুঁয়ে নয় বছরের ছোট ছেলেটা সেদিন কালীপুজো করার জন্য মার খেয়েছিল বাবার হাতে। তাও কালীপুজোর জেদ ছাড়েনি, সেই থেকেই কেষ্টর কালীপুজো শুরু। ‘কেষ্ট কালী’ নামেই পরিচিত বোলপুর- শান্তিনিকেতনের বাসিন্দাদের কাছে।এই বছর সেই সেই পুজোর তদারকি থেকে রবিবার উদ্বোধন করছেন সভাধিপতি কাজল শেখ।
[আরও পড়ুন: কালীপুজোতেই জেলযাত্রা, ‘সব কথা পরে বলব’, জল্পনা জিইয়ে রাখলেন জ্যোতিপ্রিয়]
স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। অনুব্রতর ভাই প্রিয়ব্রত মণ্ডল বলেন, “এবারে পাড়া-প্রতিবেশীদের সহযোগিতা ছাড়াও সভাধিপতি কাজল এই পুজোর সহযোগিতা করছে। তবে দাদা নেই, তাই খারাপ লাগছে।” অন্যদিকে কাজল শেখ বলেন,”মিথ্যা মামলায় দাদাকে জেলে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আমি অনুব্রতর ছোট ভাই ও পরিবারের সদস্য। অনুব্রত মণ্ডলের চলার পথকে অনুসরণ করেই আমি চলি।পুজোয় পাড়া-প্রতিবেশী মণ্ডল পরিবারের সঙ্গেই থাকব। দাদার শূন্যতা, খুবই দুঃখের এবং বেদনার।”