সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: কাঁকসার বিদবিহারের জামবন গ্রামের ২০০ বছরের কালীপুজো। কথিত, বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম ও সাধক কবি নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায় এসেছিলেন কালী সাধনায়। সেই গ্রামের পুজো আজও অমলিন। জনশ্রুতি আছে, পঞ্চমুণ্ডি আসনে বসে কালী সাধনায় মজেছিলেন সাধক কবি নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায়। পুজোয় শামিল হয়েছিলেন নাকি স্বয়ং নজরুলও।
জনশ্রুতি রয়েছে, শতাধিক বছর আগে এই এলাকা ঘন জঙ্গলে ঘেরা ছিল। গা ছমছমে পরিবেশ। তারই মাঝে গড়ে ওঠে কাঁকসার জামবন গ্রাম। সেই গ্রামে রাতবিরেতে ডাকাতদের তাণ্ডব শুরু হত। আতঙ্কে সেই গ্রামও ছাড়তে থাকে একের পর এক পরিবার। তখনই সেই গ্রামের কমলা বাগদি, মা কালীর স্বপ্নাদেশ পান। তালপাতার ছাউনি করে মাকে বড়মা রুপে পুজো করেন।
কথিত, একবার নিশি রাতে পুজোর সময় ডাকাত দল গ্রামে লুঠপাঠ চালাতে আসে। সেই সময় নাকি দেবী রুদ্ররূপ ধারণ করেন! ঝড়ের মাধ্যমে তিনি তাণ্ডব দেখান। ফলে এলাকা ছাড়ে ডাকাত দল। মা তাঁদের রক্ষা করেছেন বলে বিশ্বাস করতে থাকে গ্রামবাসী। গড়ে ওঠে রাঙামাটি আর মাটির দেওয়ালের ওপর ঘরের ছাউনি দেওয়া একের পর এক বাড়ি। গড়ে ওঠে ছোট্ট গ্রাম জামবন।
তৎকালীন সময়ে এই এলাকার জমিদার ছিলেন ষষ্ঠীচরণ চট্টোপাধ্যায়। কালীপুজোর জন্যে আর্থিক সাহায্যও করেন তিনি। কয়েক বছর কমলা বাগদি পুজোর পরিচালনা করে এলেও তাঁর মৃত্যুর পর পুজোর দায়িত্ব সামলান গ্রামের সকল মানুষ। তখন সাধক কবি নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায়ের জন্মভূমি ধবনি থেকে হেঁটে সংগীত চর্চা করতে যেতেন জামবন গ্রামে। তাঁর ব্যবহৃত তবলা এখনও রয়েছে মন্দিরের পাশে একটি মাটির বাড়িতে।
জনশ্রুতি আছে, সেই সময় গ্রামে আসতেন কাজী নজরুল ইসলামও। একসময় নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায় সেই গ্রামে বড় মায়ের পঞ্চমুণ্ডি আসনে বসে তন্ত্র সাধনা শুরু করেন। সেই সময় গ্রামে এসেছিলেন ছোট্ট নজরুলও। কথিত আছে, একাধিকবার বাঁশি বাজিয়ে গ্রামবাসীদের মুগ্ধ করেছিলেন নজরুল।
দিনেকালে গ্রামে বড় মায়ের পাকাপোক্ত মন্দির গড়ে ওঠে। আশপাশের বহু মানুষ পুজোয় সামিল হতে শুরু করেন। ২০০ বছর পার হলেও সেই পুজোয় আজও ভাটা পড়েনি। পুজোয় কয়েকশো মানুষের জন্য খিচুড়ি ভোগের ব্যবস্থা থাকে। পুজোয় যাত্রা-সহ নানান সঙ্গীতানুষ্ঠান।
পুজো পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য সুদেব রায় বলেন, "শুনেছি আমাদের গ্রামে নিয়মিত সঙ্গীত চর্চা করতে আসতেন রাঢ়বঙ্গের সাধক কবি নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায়। তিনি বড় মায়ের পঞ্চমুণ্ডি আসনে বসেছিলেন। পুজোয় বেশ কয়েকবার এসেছেন নজরুল ইসলাম। পুজোর পরের দিনই মায়ের প্রতিমা নিরঞ্জন করতে হয়। মায়ের প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় আজও প্রচণ্ড ঝড় ওঠে। অগাধ আস্থা আর মনের ভক্তি ভরে মায়ের কাছে প্রার্থনা করলে মা মনের ইচ্ছা পূরণ করেন। মায়ের পুজো যেদিন থেকে শুরু হয়েছে গ্রামের মানুষের সেদিন থেকে শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে। দুদিন ধরে চলে নানান অনুষ্ঠান। দূর দূরান্তের মানুষ পুজো দেখতে আসেন।"