অর্ণব আইচ: চড়া দামে বিক্রি হয়েছে ব্যবসায়ী সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর সংস্থার শেয়ার। সেই চড়া দামের শেয়ার এমন দু’টি সংস্থা কিনেছে, যেগুলি রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিসের ‘কালো তালিকাভুক্ত’। এমনই অভিযোগ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের।
বুধবার ব্যাঙ্কশালের বিশেষ ইডি আদালতে ইডি জানায়, দক্ষিণ কলকাতার ব্যবসায়ী সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে মঙ্গলবার প্রেসিডেন্সি জেলে জেরা করতে গিয়ে তদন্তকারী আধিকারিকরা জানতে পারেন যে, তাঁর স্ত্রী প্রয়াত হয়েছেন। সুজয়কৃষ্ণবাবুর আইনজীবীরা জানান, স্ত্রীর মৃত্যুর কারণেই জেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে তিনদিনের জন্য প্যারোলে মুক্তি দিয়েছে। তাই এদিন তাঁকে আদালতে তোলা সম্ভব হয়নি। বিচারক এই ব্যাপারে দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, “এই অবস্থায় তাঁকে তিন-চারদিন সময় দিতে হবে।” অভিযুক্তর আইনজীবীরা কোনও শুনানি করতে চাননি। এদিন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর গলার স্বর রেকর্ড নিয়ে শুনানির দিনও ধার্য ছিল। ৭ জুলাই এই বিষয়ে শুনানি হবে। ১২ জুলাই পর্যন্ত সুজয়কৃষ্ণকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সেদিনই তাঁকে আদালতে তোলা হবে।
[আরও পড়ুন: ‘নিখোঁজ’ কংগ্রেস প্রার্থী, ভোটের আগে সামশেরগঞ্জে পোস্টার রহস্য]
ইডি জানিয়েছে, তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে, টাকা তছরূপে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী তাঁর সংস্থা ওয়েল্থ উইজার্ডসকে কাজে লাগিয়েছিল। এই সংস্থাটি ৪৪০ টাকার প্রত্যেকটি শেয়ার ইস্যু করে। সেগুলি কয়েকটি সংস্থা কেনে। ইডির দাবি, ওই সংস্থাগুলির নিয়ন্ত্রক ছিলেন সুজয়কৃষ্ণই। এভাবে শেয়ারের মাধ্যমেই নিয়োগ দুর্নীতির ১০ কোটি টাকা সরানো হয়। যে সংস্থাটি অত্যন্ত কম টাকার শেয়ার বাজারে ছাড়তে পারে, সেখানে প্রত্যেকটি শেয়ারের পরিমাণ ৪৪০ টাকা হওয়াই সন্দেহজনক। এই ব্যাপারে ফের তদন্ত করে ইডি জানতে পারে যে, এমন দু’টি সংস্থা তিন কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে, যেগুলিকে আগেই ‘রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিস’ কালো তালিকাভুক্ত করেছে।
ইডির মতে, এই লেনদেনের প্রত্যেকটিই যথেষ্ট সন্দেহজনক। অন্যান্য সংস্থাগুলিও ইডির স্ক্যানারে। তদন্তে ইডি জেনেছে, সুজয়কৃষ্ণর দু’টি সংস্থা বহু রিয়েল এস্টেটের কাজ করেছে, যেগুলিতে এক কোটি টাকা লগ্নি করা হয়েছে। টাকা পাচার ও তছরূপের জন্য ১০০টিরও বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কাজে লাগিয়ে লেনদেন করা হয়েছে। ইডির দাবি, সুজয়কৃষ্ণ যে ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, ইডির কাছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যদিও হেফাজতে থাকাকালীন তিনি ইডির জেরায় অসহযোগিতা করেছেন ও তদন্তকে ভুলপথে চালিত করার চেষ্টা করেছেন। অভিযুক্ত ও তাঁর আত্মীয়দের নামে থাকা সংস্থার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যে টাকার লেনদেন হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। সুজয়কৃষ্ণর একাধিক সংস্থার মাধ্যমে প্রচুর সম্পত্তি কেনা হয়েছে। সেই তথ্যগুলিও জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইডি।