সব্যসাচী বাগচী: ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট। কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। সেবার ডুরান্ড কাপের ডার্বি জিতে ১৬৫৭ দিন পর ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) শিবিরে এনে দিয়েছিলেন স্বস্তি। অগনিত লাল-হলুদ সমর্থকদের মুখে ফুটিয়েছিলেন হাসি। তিনি কার্লেস কুয়াদ্রাত (Carles Cuadrat)। তিনি লাল-হলুদ সমর্থকদের কাছে হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা। এই স্প্যানিশ আরও একটা ডার্বি জিতে দেখিয়ে দিলেন। সেবার গ্রুপ পর্বের ডার্বি জিতলেও শেষরক্ষা হয়নি। ডুরান্ড কাপের ফাইনালে মোহনবাগানের (Mohun Bagan) কাছে হারতে হয়েছিল। সেই হারের বদলা নিল তাঁর ইস্টবেঙ্গল। ভেন্যু ওড়িশার কলিঙ্গ স্টেডিয়াম। সবুজ-মেরুনের গোলে তিনবার বল ঢুকিয়ে দিলেন কেল্টন সিলভা (Cleton Silva) ও নন্দকুমার (Nandhakumar Sekhar)। ফলে এবার সুপার কাপে (Kalinga Super Cup) চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে উড়িয়ে শেষ চারে চলে গেল ইস্টবেঙ্গল। যদিও ডার্বি যুদ্ধে কোচ হিসেবে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও, ফুটবলারদেরই কৃতিত্ব দিচ্ছেন কুয়াদ্রাত।
এবারের মেগা ডার্বির আগে সাংবাদিক বৈঠকে কুয়াদ্রাত দলের ‘অস্ত্র’দের নিয়ে কথা বলছিলেন। তখনও বোধহয় কেউ আঁচ করতে পারেননি যে শনিবার তাঁর হাত ধরেই মহাকাব্যিক কামব্যাক অপেক্ষা করছে লাল-হলুদ ব্রিগেডের। ম্যাচের আগে মোহনবাগানকেকৃতিত্ব দিলেও মনের মধ্যে যাবতীয় হিসেব ততক্ষণে বোধহয় কষে ফেলেছিলেন একদা বেঙ্গালুরু এফসি-কে (Bengaluru FC) আইএসএল (ISL) জেতানো। আর তাই এবারও লাল-হলুদের কোচ হিসেবে মোহনবাগানকে ফের হারালেন।
[আরও পড়ুন: ওড়িশায় জ্বলল মশাল, মোহনবাগানকে ছিটকে দিয়ে মর্যাদার ডার্বি জয়, সুপার কাপের শেষ চারে ইস্টবেঙ্গল]
যদিও ম্যাচের শেষে সম্প্রচারকারী চ্যানেলে কুয়াদ্রাত বলছিলেন, “আমাকে ধন্যবাদ দেবেন না। আমি তো সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ৯০ মিনিট তো আমার দলের ফুটবলাররা ঘাম ঝরিয়েছে। ক্লেটন ও নন্দ গোল করলেও, বাকিরাও দারুণ লড়াই করেছে। এই জয়ের কৃতিত্ব শুধু ফুটবলারদের।”
এর আগে ইস্টবেঙ্গলের কোচ হিসেবে অভিষেক ডার্বি ম্যাচেই জিতেছিলেন আলেজান্দ্রো মেনেন্দেস। ২০১৮-১৯ মরশুমে আই লিগে জোড়া ডার্বি জিতেছিলেন তিনি। ডার্বি জয় ছাড়া তিনি তেমন সাফল্য পাননি। কিন্তু কলকাতায় এসেই সমর্থকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। এবার সেই পথে সারথি হলেন আরও এক স্প্যানিশ কোচ। কিন্তু ভিন রাজ্যের হয়ে সফল হওয়া আর কলকাতায় এসে জোড়া ডার্বি জয়, একেবারে আলাদা বিষয়। নিজের জাত চিনিয়ে গ্যালারিতে বসে থাকা আর এক স্প্যানিশ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসকে টেক্কা দিলেন।
মেগা ডার্বি জয়ের পর তিনি সমর্থকদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বলেছেন, “দল এবং সমর্থকদের জন্য সত্যিই আজ আমি খুশি। দল হিসেবে খেলেছি আমরা। মোহনবাগান অনেক বড় টিম। ওদের স্টার ফুটবলাররা আছে, তবে আমরা আজ ভালো ফুটবল খেলেছি। একেবারে দলীয় প্রচেষ্টায় এই জয় এসেছে বলব। আমাদের পরের টার্গেট সুপার কাপ জেতা। তবে এর আগে সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওরা এসেছে। আমাদের জন্য গলা ফাটিয়েছে। এটা কোচ হিসেবে আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি।”
এর আগে বার্সেলোনা যুব দলের হয়ে কোচিং করেছিলেন। এবার কলকাতায় পা দিয়ে সমর্থকদের কাছে আকাশ কুসুম কিছু বলেননি। তিনি বরং মাটিতে পা রেখে বলেছিলেন, “আমরা খেলায় ৯০ মিনিট লড়ব। কেউ বলতে পারবে না আমরা খেলতে পারিনি। হারা জেতা আমার হাতে নেই, আমি বরং চেষ্টা করতে পারি ছেলেদের নিয়ে।” কথা রাখলেন তিনি।
যদিও রেফারিং নিয়ে খুশি নন কুয়াদ্রাত। যোগ করেন, “আমার কাছে একটা ব্যাপার অদ্ভুত লেগেছে। এখানে নিয়ম এবং রেফারিংয়ের কোনও ধারাবাহিকতা নেই। গোটা ম্যাচে আমরাই একমাত্র হলুদ কার্ড দেখেছি। আমাদের পেনাল্টি বাতিল হল। অথচ বেশ কিছু ট্যাকল ওরা করেছে যেগুলো কার্ড দেখার মতোই।”
৫৭ বছর বয়সি কোচ দলের বেশ কিছু দেশীয় তারকাদের নিয়ে বাজিমাত করলেন। তিনি সেই ফুটবলারদের ওপর আস্থা রেখেছেন যারা অনুশীলন করেছেন। তিনি জানতেন ফিটনেস এই ধরনের বড় ম্যাচে প্রধান ফ্যাক্টর হতে পারে। তাই তিনি নন্দ কুমার, সুহেরদের ওপর ভরসা করেছিলেন। তাঁর মতো অভিজ্ঞ কোচ এও জানতেন এর আগে ডার্বিতে গোল না করতে পারা ক্লেটন ফুটছেন। ব্রাজিলিয়ানের সেই তেজকেই কাজে লাগালেন। ফল তো সবাই জানে।