নন্দন দত্ত, সিউড়ি: দুবছর পর কালীপুজো করবেন বোলপুরে জেলা পার্টি অফিসে। কিন্তু নিজের হাতে মা কালীকে সোনার গয়না পরাবেন না অনুব্রত মণ্ডল। রবিবার খয়রাশোলে বিজয়া সম্মিলনীতে এসে এমনই জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি। গত বছর যারা গয়না পরিয়েছিলেন, এবার তাঁদের উপরই ভার দিলেন অনুব্রত। কারণ হিসাবে জানালেন, ‘‘কাকার মৃত্যুতে কালাশৌচ চলছে। তাই পার্টি অফিসে গিয়ে দেবীকে দূর থেকেই প্রণাম করব। পুজোয় থাকব। কিন্তু পুজো দেওয়া বা গয়না পরানোর মতো কাজ নিজের হাতে করব না।’’
উল্লেখ্য, দাপটের সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডল যখন জেলা তৃণমূল পরিচালনা করেছেন তার উদ্যোগে বোলপুরে তৃণমূল জেলা পার্টি অফিসে শুরু হয় কালীপুজো। যত ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল, তত মায়ের সোনার গয়নার পরিমাণ বাড়ে। কালীপুজোর আগে তিনি নিজের হাতে মাকে সোনার গয়না পরিয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করতেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় এজেন্সি অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের পর তাদের নজর পড়ে কেষ্টর কালীর গহনার দিকে। ইডি বোলপুরে তৃণমূলের দপ্তরে হানা দেয়। কিন্তু জানা যায়, কালীপুজো পরিচালনা করে একটি ট্রাস্ট। তাদের হাতেই থাকে সোনার গয়নার ভার। এমনকি গয়নার সন্ধানে লকারে হানা দিয়েও ইডি কালীর একটি সোনাও পায়নি। তবে অনুব্রত জেলবন্দি থাকাকালীনও বোলপুরে পুজো হয়েছিল। সামান্য কিছু গয়না পুরোহিত মায়ের গলায় পরিয়ে দিয়েছিলেন।
অনুব্রতর কালীর বিপুল গয়না। ফাইল ছবি।
অনুব্রত মণ্ডল এবার নিজে উপস্থিত। তিনি জানিয়ে দিলেন, ‘‘গতবার যেমন কালীপুজো হয়েছিল, যেভাবে হয়েছিল এবারও সেভাবেই হবে। লোক খাওয়ানো হবে। আমি নিজে হাতে কিছু করব না। তবে উপস্থিত থাকব।’’ এবার দুর্গাপুজোয় অনুব্রত মণ্ডল তাঁর নিজের গ্রামের বাড়ি হাটসেরান্দিতে উপস্থিত থাকলেও একই কারণে পুজো করেননি। রবিবার দুবরাজপুর ও খয়রাশোলে দুটি জনসভা ছিল। গত বিধানসভা নির্বাচনে ২৬০০ ভোটে পরাজিত হন তৃণমূল প্রার্থী। এবারের লোকসভা নির্বাচনে ২৬ হাজারে বিজেপিকে হারিয়েছে দুবরাজপুর বিধানসভা। সেকথা উল্লেখ করে তিনি দুই ব্লকের কর্মী থেকে ভোটারদের ধন্যবাদ জানান। এদিন মঞ্চ থেকে ফের আগামী বিধানসভায় তৃণমূলের পরাজিত প্রার্থী দেবব্রত সাহাকে ভোটে ‘একটু দেখে দেওয়ার’ অনুরোধ করেন।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, এ যেন আগের মতো ক্ষমতাবলে আগে থেকেই ২০২৬ সালের আগাম প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিলেন। তবে পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অনুব্রত বলেন, ‘‘প্রার্থী চূড়ান্ত করবে দল। ঠিক করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতবার সামান্য ভোটে হেরেছিল ছেলেটা। সে কথা বলেছি।’’ তবে এদিনও দলের কাজে যারা সাংগঠনিকভাবে দায়িত্বে তাঁদের সঙ্গে তালমিল করে চলার বার্তা দিয়েছেন। তিনি জানান, ‘‘যারা অফিসিয়াল তারা কাজ করবে। যদি নতুন করে কাউকে আসতে হয় সেখানকার অফিসিয়ালের সঙ্গে কথা বলবে।’’ তবে এদিনও তিনি দলের সবাইকে একজোট হয়ে থাকার বার্তা দেন। জানান, ‘‘কাউকে গাছে তুলে দিয়ে মই কেড়ে নেবেন না। এতে ক্ষতি হয় দলের। নিজের স্বার্থের জন্য পরের স্বার্থকে বিসর্জন দেবেন না।’’