নিজস্ব সংবাদদাতা, তেহট্ট: নিজের স্কুলের নাম পর্বত চূড়ায় মেলে ধরলেন শিক্ষক কৌশিক বিশ্বাস। গত কয়েক মাসে পর্বত জয় করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজন পর্বতারোহীর। এত মৃত্যুর পরও নানান প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে গত ১০ জুন শেরপা ছাড়াই ৬১২০ মিটার উচ্চতার ‘কাংলা টার্বো-২’ পর্বতশৃঙ্গে উঠলেন নদিয়ার তেহট্টের নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক কৌশিক বিশ্বাস ও বর্ধমানের রাজীব মণ্ডল। এর আগেও ২০১৫ সালে ‘মাউন্ট নুন’ ও ২০১৭ সালে ‘ব্ল্যাক পিক’ জয় করেছিলেন কৌশিকবাবু। তাঁর এই সাফল্যে গর্বিত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকরা।
[আরও পড়ুন: বনাঞ্চলে পরিখা কেটেই দাঁতালের তাণ্ডব থেকে সমাধানের পথ খুঁজছে পুরুলিয়ার বনবিভাগ]
ওয়ার্ল্ড এক্সপ্লোরার ও বর্ধমান এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড নেচার ড্রাইভ সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে গত ২১ মে হাওড়া থেকে রওনা দিয়ে ২৩ মে চণ্ডীগড়ে পৌঁছায় নয় সদস্যের একটি পর্বতারোহীর দল। দলের সদস্যরা হলেন রাজীব মণ্ডল, সুদীপা দাস, রোহিত মজুমদার, কৌশিক বিশ্বাস, সৌমিতা সাহা, সুব্রত ব্রহ্ম, সুজিত সাহা, রবি কুমার দুবে ও গণেশ সাহা। সেখান থেকে তাঁরা হিমাচলপ্রদেশের সিকিম পৌঁছন ২৪ মে। ব্যাপক তুষারপাতের জন্য চার দিন সিকিমেই থাকেন। পরে ২৯ মে ভোরে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন তাঁরা। ওই রাতে প্রথম বেসক্যাম্পে পৌঁছান এবং ২ জুন দ্বিতীয় ক্যাম্পে পৌঁছান। সেখানেও তাঁরা খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে পড়েন। প্রচণ্ড তুষারপাতের কারণে ৮ জুন পাঁচজন সামিট ক্যাম্পের দিকে এগোলেও চারজন বেসক্যাম্পে ফিরে অপেক্ষায় থাকেন এবং ৯ জুন তাঁদের তিনজন সামিট ক্যাম্পেই থেকে যান। শেষে একজনকে সামিট ক্যাম্পে রেখে কৌশিক বিশ্বাস ও রাজীব মণ্ডল দু’জনে ১০জুন ভোর চারটে নাগাদ চূড়ান্ত অভিযানে বেরিয়ে পড়েন। ওইদিন দুপুর দুটো নাগাদ দু’জনে শৃঙ্গের শিখরে পৌঁছান।
[আরও পড়ুন: আইনি পোশাকে বেআইনি কাজ চলছে স্টেশনগুলিতে, সিআইবির হাতে ধৃত ৬]
শৃঙ্গে যাওয়ার সময় কৌশিকবাবু নিয়ে যান তাঁর স্কুলের নাম লেখা একটি ফেসটুন। জাতীয় পতাকার পাশাপাশি তাঁরা শৃঙ্গে মেলে ধরেন নিজের স্কুলের সেই ফেসটুন। আধ ঘণ্টা থাকার পর দু’জনে আবার ক্যাম্পের উদ্দেশে পাড়ি দেন। রবিবার সন্ধ্যায় তাঁরা শিমলায় পৌঁছান। স্কুলের শারীরশিক্ষার শিক্ষক কৌশিকবাবুরপ র্বতারোহণে আগ্রহ জন্মায় ২০০৫ সালে। তখন তিনি কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের ছাত্র ছিলেন। পড়াশোনা শেষ করে ২০১১ সালে স্কুলের শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। ২০১২ সালে প্রথম বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ে ওঠার প্রশিক্ষণ নেন তিনি। পরে ২০১৪ সালে উত্তর কাশীর ‘নেহরু ইন্সটিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং’-এর অধীনে ২৮ দিনের রক ক্লাইম্বিং-এর প্রশিক্ষণও নেন তিনি। কৌশিকবাবু জানান, “নুন শৃঙ্গ জয় জীবনের প্রথম অভিযান ছিল। তারপর ‘ব্ল্যাক পিক’ ও এবার ‘কাংলা টার্বো-২’ সফল হল। আগামীতে এভারেস্ট ও কঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান করার ইচ্ছে রয়েছে।” নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা জানিয়েছে, “কৌশিকবাবু এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অত উঁচু পর্বতে আমাদের স্কুলের নাম মেলে ধরেছেন। এটা আমাদের সকলের কাছে গর্বের।”
The post অবিশ্বাস্য সাফল্য, শেরপা ছাড়াই কাংলা টার্বোর শিখর ছুঁলেন বাংলার ২ শিক্ষক appeared first on Sangbad Pratidin.