সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: তফশিলি কিশোরকে স্কুলে ফেরাল কন্যাশ্রী ক্লাবের কিশোরীরা। ভিনরাজ্যে কাজে যাওয়া আটকে নিল তার পড়াশোনার দায়িত্ব। ঘটনাটি ঘটেছে গোপীবল্লভপুর দুই ব্লকের তপসিয়া বিদ্যাসাগর শিক্ষানিকেতনে (উচ্চ মাধ্যমিক)। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ছেলেটির সার্বিক অবস্থার কথা লিখিতভাবে জানানো হয়েছে জেলা শাসককে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপীবল্লভপুর দুই ব্লকের কানপুর শালবনি গ্রামের বাসিন্দা অঞ্জন মল্লিক। অল্প বয়সেই মাকে হারায়। মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে মুম্বই চলে যায়। বাড়িতে একাই থাকত অঞ্জন। তপসিয়া বিদ্যাসাগর শিক্ষায়তন স্কুলের এই ছাত্র বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিবার তাকে ভরতির ব্যবস্থা করে দেওয়া হত। তবে নবম শ্রেণিতে ওঠার পর পারিবারিক কারণে স্কুল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় অঞ্জন। নিজের পেট চালানোর জন্য জমিতে কাজ করা, ছাগল চড়ানোর মতো কাজ করতে থাকে।
প্রতিবেশীদের বাড়িতেই খাওয়া-দাওয়া করত অঞ্জন। এরপর বিদ্যালয়ে কন্যাশ্রী ক্লবের দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক কার্তিক বেরার নজরে আসে বিষয়টি। তিনি কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েদের সঙ্গে অঞ্জনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তারপরই কন্যাশ্রীরা উদ্যোগী হয়। প্রথমে কার্তিক বাবু এবং কন্যাশ্রীরা অঞ্জনের বাড়িতে যায়। কিন্তু তখন বাড়িতে অঞ্জনকে পাওয়া যায়নি। পরে বেশ কয়েকবার তার যোগযোগের চেষ্টা করে মেয়েরা।
[আরও পড়ুন: হাজার খুঁজেও মেলেনি সরকারি চাকুরে পাত্র, ‘অবসাদে’ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী যুবতী]
গত ২৬ ডিসেম্বর কন্যাশ্রীরা অঞ্জনের খোঁজ করতে করতে পৌঁছে যায় চাষের জমিতে। সেখানে সে ছাগল চড়াচ্ছিল কিশোর। সুপর্ণা, মহিমা, সোমাদের মত কন্যাশ্রীরা অঞ্জনকে বুঝিয়ে স্কুলে আনার ব্যবস্থা করে। তাকে বোঝানো হয় মাধ্যমিকটা দিতেই হবে। সবরকম সাহায্য তারা করবে। কন্যাশ্রীরাই চেষ্টা করে, ছাত্রটির যাতে থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করা যায়।এমনকী তারা নিজেরা চাঁদা করেও ছাত্রটির খাওয়ার ব্যবস্থা করার চিন্তাও শুরু করে দেয়। স্কুলের পক্ষ থেকে ব্লক প্রশাসনকে জানিয়ে বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে থাকার ব্যবস্থা করা হয় অঞ্জনের। কন্যাশ্রীরা বইপত্র, ইউনিফর্ম দিয়ে সাহায্য করে। একাদশ শ্রেণির এই কন্যাশ্রীরা টেস্ট পরীক্ষার জন্য অঙ্ক-সহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করতেও সাহায্য করছে। বিদ্যালয়ে এসে অঙ্কও দেখিয়ে দিচ্ছে। যাতে তফশিলি কিশোর মাধ্যমিকের জন্য তৈরি হতে পারে।
এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক কার্তিক বেরা বলেন, “ছেলেটি লেখাপড়া ছেড়ে পরিস্থিতির চাপে অন্য রাজ্যে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। যা করেছে আমাদের বিদ্যালয়ের কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরা করেছে। বর্তমানে তাকে বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে রাখা হয়েছে। আমরা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। ব্লকের বিডিওকেও জানিয়েছি।”