নিরুফা খাতুন: তৃণমূল কাউন্সিলরের উপর হামলার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর দাবি গোয়েন্দাদের। হামলার মাস্টারমাইন্ড মহম্মদ ইকবাল ওরফে গুলজার নয়, এর পিছনে অন্য কেউ রয়েছে! এমনই অনুমান তদন্তকারীদের। কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ কেউ এর পিছনে থাকতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। এখনও পর্যন্ত হামলার ঘটনায় হামলাকারী যুবরাজ-সহ তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে ট্যাক্সিচালক আহমেদ খান। গুলজারকে বর্ধমান গলসি থেকে শনিবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হামলার জন্য মুঙ্গের থেকে সুপারি কিলাররা আগ্নেয়াস্ত্রও নিয়ে এসেছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে। এদিন সুশান্তবাবুর বাড়ির সামনে সরেজমিনে তদন্ত করতে যান পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা।
সুশান্তবাবুর বাড়ির সামনে সরেজমিনে তদন্তে পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। নিজস্ব চিত্র।
কসবার কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে খুনের চেষ্টায় মূল ষড়যন্ত্রী হিসেবে গুলজার বলে একজনকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করছিল তদন্তকারীরা। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায়, সুশান্ত ঘোষের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির সঙ্গে গুলজারের সুসম্পর্ক ছিল। কাউন্সিলররের ওই ঘনিষ্ট ব্যক্তি বিহার থেকে আসা সুপারি কিলার যুবরাজ-সহ তিনজনকে লেক টাউনে এক হাউজিংয়ের ফ্ল্যাটে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এই তথ্য হাতে পাওয়ার পর তদন্তকারীদের অনুমান, মাস্টারমাইন্ড অন্য কেউ। গুলজারের মাধ্যমে কার্যসিদ্ধির চেষ্টা করা হয়েছে।
আরও জানা গিয়েছে, কাউন্সিলরকে খুনের ছক কষা হয়েছিল একমাস আগে থেকে। দুটি টিম তৈরি হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম টিমের কাজ ছিল কাউন্সিলরকে ভয় দেখানো। এই কাজের দায়িত্ব যুবরাজকে দেওয়া হয়েছিল। তার পিছনে আর একটি বাইকে থাকবে দ্বিতীয় টিম। পিস্তল নিয়ে ভয় দেখিয়ে যুবরাজ সেখান থেকে পালিয়ে গেলে তার পিছনে থাকা দ্বিতীয় টিম এসে সুশান্তবাবুর উপর গুলি চালিয়ে সেখান থেকে সোজা ভিন রাজ্যে পালিয়ে যাবে। পরিকল্পনা মাফিক যুবরাজ শুক্রবার ভর সন্ধ্যায় বাড়ি সামনে ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ১২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে যায়। কিন্তু গুলি চালাতে গিয়ে ধরা পড়ে ওই যুবক। তাঁকে জেরা করে আহমেদ খান নামে এক ট্যাক্সি চালককেও গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের জেরা করে ইকবালের নাম উঠে আসে।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বছর চল্লিশের ইকবাল আসলে আফরোজের ছদ্মনাম। সে ঝাড়খণ্ডের জামুয়ার বাসিন্দা। বেশ কয়েক বছর ধরে সে পঞ্চাননতলা গুলশন কলোনিতে থাকছে। এখানে সে গুলজার নামে পরিচিত। এই গুলজার বিহারের বৈশালি থেকে সুপারি কিলারদের ভাড়া করে নিয়ে এসেছিল। বিহার থেকে মোট তিনজনকে এই কাজে ভাড়া করা হয়েছিল। তার মধ্যে একজন মাস খানেক আগে কলকাতায় এসে পৌঁছয়। গুলজার তাকে কলকাতায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, পরিকল্পনা মাফিক হামলার আগের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে বিহার থেকে যুবরাজ-সহ দুজন হাওড়ায় আসে। গুলজারের কথা মত তাদের নিতে হাওড়ায় যায় বিহার থেকে আগে চলে আসা ওই যুবক। ওই তিনজনকে লেকটাউনের ১৪৫, কালিন্দি হাউজিং স্টেটের ফ্ল্যাটে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তিনজনকে লেকটাউনে যে ফ্ল্যাটে রাখা হয়েছিল তা সুশান্তবাবুর ঘনিষ্ঠ লোকই ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। গুলজার তাঁকে বলেছিল, বিহার থেকে তাঁর পরিচিতরা চোখের অস্ত্রোপচার করাতে কলকাতায় আসছে। মোট তিনজন আসবে। কলকাতায় কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। সেইমত সুশান্ত- ঘনিষ্ঠ ওই ব্যক্তি লেকটাউনে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তবে এই তথ্য কতটা সত্য, তা গোয়েন্দারা যাচাই করে দেখছেন। পাশাপাশি, ধৃতদের অতীত জানতে বিহার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে কলকাতা পুলিশ।