অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: চিকিৎসার গাফিলতিতে আস্ত একটা হাতের কনুই থেকে বাদ গেল খড়গপুর শহরের এক রেলকর্মীর। ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে মেদিনীপুর শহর তথা জেলার অস্থি বিশেষজ্ঞ আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, এই চিকিৎসকের গাফিলতির কারণেই রেলকর্মী সুভাষ দাসের সুস্থ ও গোটা ডান হাতের কনুই থেকে বাদ দিতে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এই রেলকর্মীর স্ত্রী জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক থেকে শুরু করে জেলাশাসক, খড়গপুর মহকুমা শাসক ও গুড়গুড়িপাল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
রেলকর্মীর স্ত্রী প্রতিমা দাসের একটাই দাবি, অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তি। একই দাবি করেছেন এই রেলকর্মীর বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীরা। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৪ সালে একটি দুর্ঘটনায় এই রেলকর্মীর বাম হাতে চোট লাগে। তখন হাতে একটি প্লেট লাগানো হয়। তখন চিকিৎসা করেছিলেন এই অস্থি বিশেষজ্ঞ। তারপর এই বছরের ৬ ডিসেম্বর তিনি এই প্লেট বের করার জন্য মেদিনীপুর শহরের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি হন। সেই দিন রাতে অস্থি বিশেষজ্ঞ আব্দুল লতিফ বাম হাতের প্লেট বের করেন। আর চ্যানেল করা হয় ডান হাতে।
[আরও পড়ুন: ভালবাসার স্বীকৃতি! পরিবারের সম্মতি নিয়েই প্রেমিককে বিয়ে কলকাতার সমকামী যুবকের]
অভিযোগ, এই চ্যানেল করার ঘন্টা কয়েক পর থেকে যন্ত্রণা শুরু হয়। সেই সময় বারবার অস্থি বিশেষজ্ঞ আব্দুল লতিফকে ডাকা হলেও তিনি কোনও সাড়া দেননি। রাত এগারোটা নাগাদ যখন তিনি পৌঁছান ততক্ষণে সুভাষ দাসের হাতের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। তিনি রোগীকে দেখার পরেই কলকাতার SSKM হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে একটি রেফার চিঠি করে দেন। তারপরে সুভাষ দাসকে SSKM হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় গার্ডেনরিচে দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা শুরু হয়।
পরবর্তীকালে তাঁকে রেলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকরা পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ডান হাতের কনুই থেকে বাদ দেন। দু’দিন আগে সুভাষবাবুকে খড়গপুর শহরের নিমপুরা এলাকার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এই প্রসঙ্গে রীতিমতো বিধ্বস্ত রেলকর্মী সুভাষ দাস চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করেছেন।
চিকিৎসক আব্দুল লতিফ এই ঘটনার দায় পুরোপুরি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের ঘাড়ে চাপিয়েছেন। তাঁর কথায় “এই ঘটনার জন্য আমার চিকিৎসা কোনোভাবেই দায়ী নয়। বাম হাতের অপারেশনের পর ডান হাতে চ্যানেল লাগানো হয়। তারপর কীভাবে সেই চ্যানেল থেকে ডান হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা সেই হাসপাতালে সেই সময় কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা ভাল বলতে পারবেন। তবে যা কিছু হয়েছে ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর থেকে হয়েছে। আমি খবর পেয়ে রাত সাড়ে ন’টায় রোগীকে দেখতে গিয়েছিলাম। তারপরই তাঁকে কলকাতার SSKM হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।”