সুকুমার সরকার, ঢাকা: লিবিয়ায় মানব পাচারকারীরা ২৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করে খুন করার পাশাপাশি ১১ জনকে জখমও করেছে। এই ঘটনার একদিন পর সেই দেশের সরকারের কাছে হতাহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করল বাংলাদেশ। পাশাপাশি এই হত্যায় জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, ‘লিবিয়ায় আমাদের মিশন ত্রিপোলি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করার ও হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস রাষ্ট্রসংঘ স্বীকৃত ত্রিপোলিভিত্তিক গভর্মেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ডকে (GNA) এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় ঢাকাকে জানাতে বলেছে। ২৬ বাংলাদেশির মৃতদেহ দেশে নিয়ে আসার জন্য ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (IOM) সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে।
[আর পড়ুন: শিকেয় সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন শিথিল হওয়ায় ঢাকামুখী শতাধিক মানুষ ]
মন্ত্রী আরও বলেন, লিবিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছে। লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে অবস্থিত মিজদা শহরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এটি গোলযোগপূর্ণ এলাকা, মাত্র এক সপ্তাহ আগে প্রতিপক্ষ বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের পর জিএনএ এই শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ত্রিপোলি থেকে পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, হটিয়ে দেওয়া প্রতিপক্ষ বাহিনী দুদিন আগেও বোমা হামলা চালিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অপরাধীদের কখন কীভাবে আটক করা যাবে, সে বিষয়ে ধারণা করা কঠিন।
বৃহস্পতিবার রাতে ২৬ বাংলাদেশি-সহ ৩০ জনকে মেজদায় জিম্মি দশায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হামলায় আরও ১১ জন আহত হয়েছেন। ত্রিপোলি থেকে সর্বশেষ খবরে জানা যায়, বাংলাদেশ মিশন লিবিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে রাতেই আহত বাংলাদেশিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ত্রিপোলির হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। আহত ১১ বাংলাদেশির মধ্যে ৫ জনের অবস্থা গুরুতর। তবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা অপর ৬ জনকে ঝুঁকিমুক্ত বলে জানিয়েছেন।আর গুরুতর আহত ৫ জনের মধ্যে ৩ জনের সার্জারি হয়েছে। নিহত ২৬ জনের লাশ বর্তমানে মিজদা হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশ মিশন লিবিয়া সরকারের ডিরেক্টর জেনারেল অব হেলথ অ্যান্ড আইওএমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা আহত বাংলাদেশিদের চিকিৎসায় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। মিজদার একটি গোপন স্থানে ৩৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। তাঁদের হত্যা করা শুরু করা হলে কেবল একজন সেখান থেকে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান।
[আর পড়ুন: ফের রক্তাক্ত লিবিয়া, পাচারকারীদের হাতে খুন বাংলাদেশের ২৬ নাগরিক]
ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, প্রাণে বেঁচে যাওয়া ওই ব্যক্তি লিবিয়ায় বাংলাদেশ মিশনকে এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে জানিয়েছে। মোমেন বলেন, প্রাণে বেঁচে যাওয়া ওই ব্যক্তি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বলেন, মানব পাচারকারী চক্রটি আরও অর্থের জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের নির্যাতন করছিল। মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে এ সময় তাঁদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হত। একপর্যায়ে অপহৃতরা অতিষ্ঠ হয়ে মূল অপহরণকারী লিবিয়ান এক ব্যক্তিকে হত্যা করেন। এর জেরে অন্য দুষ্কৃতীরা আকস্মিক তাঁদের ওপর এলোপাথাড়ি গুলি ছোঁড়ে।
বিদেশমন্ত্রকে পাঠানো বাংলাদেশ দূতাবাসের পত্রে বলা হয়, বেঁচে যাওয়া ওই বাংলাদেশি নাগরিক জানিয়েছেন, ১৫ দিন আগে বেনগাজি থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে মানব পাচারকারীরা কাজের সন্ধানে তাঁদের লিবিয়ার ত্রিপোলি শহরে নিয়ে আসার পথে তিনি-সহ মোট ৩৮ বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের হাতে বন্দি হন।
The post খুন হওয়ায় ২৬ জন বাংলাদেশির জন্য লিবিয়ার কাছে ক্ষতিপূরণ চাইল ঢাকা appeared first on Sangbad Pratidin.