ছত্তিশগড়ে মাওবাদী হামলা। আর ভয়াবহ এই আক্রমণ নাড়িয়ে দিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরকেও। ইতিমধ্যে ‘গৌতম গম্ভীর ফাউন্ডেশন’ ওই সব শহিদদের সন্তানদের পড়াশোনার যাবতীয় খরচের দায়িত্বও নিয়েছে৷ কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। সংবাদ প্রতিদিন-এর জন্য বিশেষ আইপিএল কলম লিখছেন গৌতম গম্ভীর৷ কেকেআর অধিনায়ক মনে করছেন প্রিয়জনকে হারানোর পাশে একটা ক্রিকেট ম্যাচে জয় তুলনাতেই আসতে পারে না৷
[সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসির খোরাক, রণতরীর নকল ছবি পোস্ট করে ক্ষমাপ্রার্থী চিন]
অ্যাসোসিয়েট দেশের মধ্যে খেলা কোনও ক্রিকেট ম্যাচও আমি দেখে উপভোগ করতে পারি৷ কিন্তু কিছু এমন ঘটনা আমাকে এতটাই নড়িয়ে দেয় যে, ক্রিকেট খেলার অর্থটাই গুলিয়ে ফেলি৷ গতকাল আমাদের শেষ ম্যাচটা তেমনই একটা দিন ছিল৷ যেখানে আমি সেই শূন্যতাটা অনুভব করলাম৷ সম্প্রতি ছত্তিশগড়ে সিআরপিএফের উপর আক্রমণের ঘটনা আমার মনে টাটকা রয়েছে৷ বুধবার সকালেই কাগজ খুলে দেখেছিলাম ওই নৃশংস আক্রমণে নিহত দুই সিআরপিএফ জওয়ানের অসহনীয় শোকার্ত কন্যাসন্তানদের ছবি৷ যাঁদের মধ্যে একটি মেয়ে তাঁর শহিদ পিতার উদ্দেশে স্যালুট করছেন৷ অন্য ছবিটায় আকস্মিক শোকে চুরমার হয়ে পড়া এক তরুণীকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন তাঁর আত্মীয়রা৷ সন্ধ্যায় রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টসের সঙ্গে আমাদের ম্যাচ ছিল৷ দিন যত এগোল, আমি টিম মিটিং থেকে ব্যাটসম্যানদের মিটিং হয়ে বোলার্স মিটিংয়ে যত চলে গেলাম, সকালের কাগজের ওই দুঃসহ ছবিটা মনে আরও বেশি করে বিঁধতে থাকল৷ নিজের মনে ভাবলাম, কেকেআরের জয় কিংবা হারে ওই ২৫জন শহিদ জওয়ানের পরিবারের কী এসে যাবে? কেকেআর জিতেও তো জওয়ানদের প্রাণ ফেরাতে পারবে না! আমার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ মানুষের সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বললাম৷ তাদের পরামর্শ হল এসব ঘটনার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে নিজের কাজে মন দাও৷
[‘মা’-এর জন্য রক্তদান করলে মিলবে পুজোর ভিআইপি পাস]
এদিকে, ছত্তিশগড়ের ঘটনাটা নিয়ে আমিই ভেবেই চললাম৷ আর ভাবতে ভাবতে কয়েকটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম৷ প্রথমত, আমরা শোকার্ত পরিবারগুলির উদ্দেশে সমবেদনা জানাতে মাঠে কালো আর্মব্যান্ড লাগিয়ে নামবে৷ দ্বিতীয়ত, গৌতম গম্ভীর ফাউন্ডেশন ওই সব শহিদ জওয়ানদের সন্তানদের পড়াশোনার যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নেবে৷ ইতিমধ্যেই আমার টিম এই ব্যাপারে কাজ শুরু করে দিয়েছে৷ কাজ কতদূর এগিয়েছে তার খোঁজ আমি খুব দ্রুতই নেব৷ মাঠে যখন পৌঁছলাম ততক্ষণে আমি একটু ভালবোধ করছি৷ তারপর টস জেতাটা নিজের ফোকাসকে আরও অ্যাডজাস্ট করার সুযোগ এনে দিয়েছিল৷ ম্যাচের প্রথম বল হওয়ার আগে ছত্তিশগড়ের ঘটনাকে পিছনের দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করলাম৷ কিন্তু ছত্তিশগড় কিছুতেই আমাকে ছেড়ে গেল না৷ একটা সময়ের পর আমি হাল ছেড়ে দিলাম৷ কারণ ওই মর্মান্তিক ছবিটার ছাপ আমার মনে এতটাই গভীর ভাবে গেঁথে গিয়েছিল যে, আমার সঙ্গে সঙ্গেই চলতে থাকল৷
[OMG! মাত্র ১০ টাকায় মিলছে ‘বাহুবলী ২: দ্য কনক্ল্যুশন’-এর টিকিট!]
শেষ ম্যাচে আমার সতীর্থদের ফিল্ডিং খারাপ হয়েছে৷ অন্য সময় হলে ব্যাপারটা আমার মধ্যে কী যে জ্বলুনি ধরাত কে জানে! কিন্তু গতকাল আমার মনের গহন কোণে ছত্তিশগড় চিৎকার করছিল, “এটা স্রেফ একটা খেলা৷” কুলদীপ যাদবের সাহসও আমাকে গর্বিত করেছে৷ এমএস ধোনিকে বল করতে গিয়ে ও এতটুকু কেঁপে যায়নি৷ আমার মনে হয়, ব্যাপারটা মন্টি পানেসর একটা টুইটে দারুণভাবে বুঝিয়েছে৷ লিখেছে, “কুলদীপ ও রবিন ওদের নাতিনাতনিদের বলার জন্য একটা গল্প পেল– ধোনি স্টাম্পড উথাপ্পা বোল্ড কুলদীপ!” কুলদীপ যদি সারাজীবন রেখে দেওয়ার জন্য ম্যাচ বলের উপর এমএসের একটা অটোগ্রাফ চাইত, তা হলে মনে হয় না সেটা খারাপ হত বলে! উথাপ্পা স্টাম্পের পিছনের মতোই স্টাম্পের সামনেও অসাধারণ ছিল৷ তিনটে স্টাম্পড, যার মধ্যে একটা স্টাম্পড তো গেম-চেঞ্জার৷ যা আমাদের সত্যিই সাহায্য করেছে৷ আর ব্যাট করার সময় উথাপ্পা চমকপ্রদ হিটিং টেকনিক দেখিয়েছে৷ তার মধ্যেও আমার কাছে সবসেরা হল, ওর স্ট্রেট হিট করার ক্ষমতাটা৷ আশা করি, উথাপ্পার ব্যাটিং জাতীয় নির্বাচকেরা দেখছেন৷
[চুলের ছাঁট হতে হবে ‘যোগী’র মতো, নির্দেশ উত্তরপ্রদেশের স্কুলে]
সবার শেষে আমাকে স্বস্তি দিচ্ছে যে, টিমের জয়ে আমিও ব্যাট হাতে কিছুটা অংশ হতে পেরেছি, এই ভেবে৷ আপনাদের একটা সত্যি কথা বলছি, আমার ইনিংসের জন্য কৃতিত্ব উথাপ্পার পাওয়া উচিত৷ ও ঝুঁকি নেওয়ায় আর যাবতীয় গোলাগুলি গিলে ফেলায় আমি সহজে ব্যাট করতে পেরেছি৷ এসবের জন্যই খেলাটাকে আমি ভালবাসি– টিমওয়ার্ক এবং স্বার্থপরহীনতা৷ একই কারণের জন্য আমি সেনাদেরও ভালবাসি৷ যদিও দেশের স্বার্থে প্রিয়জনকে চিরকালের জন্য হারানোর সঙ্গে একটা ক্রিকেট ম্যাচে হার কোনও তুলনাতেই আসে না!
(দীনেশ চোপড়া মিডিয়া)
The post ‘কেকেআরের জয় কিন্তু জওয়ানদের প্রাণ ফেরাতে পারবে না’ appeared first on Sangbad Pratidin.