মনোজ তিওয়রি: আইপিএলে কেকেআর (KKR) বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (Mumbai Indians) ম্যাচটা এলে আজও কেমন একটা উত্তেজনা টের পাই। অনেক পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে যায়। দেখুন, কেকেআরের হয়ে আমি কম খেলিনি। বহু বছর খেলেছি। ২০১২ সালে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে আইপিএল ফাইনালে শেষ ওভারে কেকেআরকে জিতিয়েছিলাম আমি। কিন্তু মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচটা এলে ভেতরে একটা বাড়তি তাগিদ কাজ করত। আমার নয়, গোটা টিমের। আসলে কেকেআর মালিক শাহরুখ খান একজন আপাদমস্তক কম্পিটিটর। উনি সব কিছু জিততে চান, সব কিছুতে এক নম্বর হতে চান। মুম্বই ম্যাচ এলে বরাবর আমাদের মোটিভেট করতেন শাহরুখ। ওই ম্যাচটায় ভাল পারফর্ম করার বার্তা দিতেন। আর আমরা তাতে আরও তেতে যেতাম। ফুটতে শুরু করতাম। মনে হত যে, মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে যদি আমরা ভাল খেলি, শাহরুখের সেটা আরও ভাল লাগবে। আর বরাবর মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ভাল খেলতাম আমি। যা নিয়ে একবার তো বিতর্কও বেঁধে গিয়েছিল। গৌতম গম্ভীর জমানায় আমাকে যে বার অহেতুক বাদ দেওয়া হয়েছিল, সেই ম্যাচটাও ওয়াংখেড়েতে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধেই ছিল। আমাকে বলা হয়েছিল তুমি হোটেলে থাকো, মাঠে যেতে হবে না। খুব দুঃখ পেয়েছিলাম সে দিন আমি। আমি জানতাম, আমি ভাল করব। কারণ–টিমটা মুম্বই!
শাহরুখ যদিও পারফর্মারদের বরাবর পছন্দ করতেন, বাহবা দিতেন। আমাকে উনি ডাকতেন ‘ছোটা দাদা’ বলে। মনে আছে, একবার কোটলাতে আইপিএল (IPL) ম্যাচ নিয়েও উনি ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলেন। আমাদের বলেছিলেন যে, দিল্লি আমার জন্মশহর। কোটলায় ছোটবেলায় আমি আসতাম খেলা দেখতে। এখানে তোমরা আমাকে জিতিয়ে দাও। দিয়েছিলাম আমি। ৬৫ রান করে। যার পর আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন শাহরুখ। যাক গে যাক। কথায় কথায় অনেক কিছু বলে ফেললাম। খেলাটা নিয়ে বলি এবার। আমি জানি যে, যুদ্ধ পরিসংখ্যানে কেকেআরের চেয়ে অনেক এগিয়ে মুম্বই (মুম্বইয়ের পক্ষে ২২-৯)। কিন্তু রবিবাসরীয় ওয়াংখেড়েতে এগিয়ে কেকেআর। মুম্বই নয়। কারণটা খুব সহজ–কেকেআরের তিন স্পিনার!
[আরও পড়ুন: স্কুলের ছাত্রদের সঙ্গে লাগাতার যৌনতা, ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৬ শিক্ষিকা]
অনেকে বলবেন, সুনীল নারিন-বরুণ চক্রবর্তী-সুহাস শর্মাকে নিয়েও তো ইডেনে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ম্যাচটা হেরে যেতে হল। জানি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কলকাতার পিচটা দারুণ ছিল। দু’ইনিংস মিলিয়ে চারশো প্লাস রান উঠেছে। তা ছাড়া দুর্ভাগ্য সুহাসের যে, সানরাইজার্সের বিরুদ্ধে ওর গুগলিগুলো ব্যাটের একদম সামনে পড়ছিল। আর এডেন মার্করাম স্রেফ তুলে তুলে বলগুলোকে ফেলে দিচ্ছিল। একটা ক্যাচও পড়ে গিয়েছিল সুহাসের হাত থেকে। ওই ক্যাচটা না পড়লে, রানটা কম তুলত সানরইজার্স। আর তা হলে কেকেআরই জিতত।
মুম্বই অধিনায়ক রোহিত শর্মা সম্প্রতি ফর্মে ফিরেছে ঠিকই। কিন্তু মুম্বইকে আদতে টানছে দু’জন, দুই বিদেশি। ক্যামেরন গ্রিন আর টিম ডেভিড। আমার মনে হয় না, নারিন-সুহাস-বরুণকে ওরা সামলাতে পারবে। কারণ, এর আগে কেকেআরের এই স্পিন-ত্রয়ীকে খেলেনি কখনও ডেভিড-গ্রিনরা। তবে নাইট অধিনায়ক নীতীশ রানাকে ওদের ভাল করে ব্যবহার করতে হবে। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আনতে হবে আক্রমণে। নাইটদের আর একটা বড় সুবিধে সূর্যকুমার যাদবের ফর্মে না থাকা। কেকেআরের বিরুদ্ধে বরাবর দারুণ খেলে সূর্য। প্লাস, ৩৬০ ডিগ্রি প্লেয়ার। কিন্তু এটা ভাবলে চলবে না যে, সূর্য গত কয়েকটা ম্যাচ পারেনি বলে এবারও পারবে না। সূর্য যখনই ব্যাট করতে আসবে, সেরা বোলারকে আনতে হবে। দেখতে হবে, যাতে ও সহজে সিঙ্গলস না নিতে পারে। দেখতে হবে যাতে সূর্য ‘লুজ’ বল না পায়। এমনিই সূর্য চাপে। তার পর সহজে রান পাওয়া আটকে দিলে, ও আরও চাপে পড়বে। আমার বিশ্বাস, আউটও হবে। ব্যস, আর কী। দেখা যাক কেকেআর কী করে আজ। আপাতত একটা পূর্বাভাস করে লেখাটা শেষ করি। ওয়াংখেড়েতে আজকের ম্যাচে ৬০-৪০ এগিয়ে কেকেআর!