কৃষ্ণকুমার দাস: শুধুমাত্র জলের অপচয় রোধ করা নয়, জোগান বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবার মহানগরের পানীয় জল সরবরাহের ‘নেটওয়ার্ক’ নিয়ে ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি করছে কলকাতা পুরসভা। মুহূর্তে গুগলে ঢুকে যে কেউ দেখে নিতে পারবেন, তাঁর এলাকায় কোথায় কত ইঞ্চির পাইপ দিয়ে পানীয় জল সরবরাহ হচ্ছে। উলটোদিকে শহরের কোনও ওয়ার্ডের নির্দিষ্ট কোনও পল্লিতে পানীয় জলের সংকট হলে পুরভবনে বসে স্রেফ একটা সুইচ টিপলে ইঞ্জিনিয়াররা দেখে নেবেন, কোথায়-কী কারণে জল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে।
ডিজিটাল ম্যাপ থাকলে কয়েক মিনিটের মধ্যে ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়ে দেবেন, কতক্ষণে ওই এলাকায় পানীয় জলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। পুর পরিষেবার আধুনিকীকরণ এবং পানীয় জলের অপচয় বন্ধের লক্ষ্যে নিকাশি বিভাগের মেয়র পারিষদ তারক সিংকে পানীয় জলের নেটওয়ার্কের ডিজিটাল ম্যাপ তৈরির দায়িত্ব দিয়েছেন মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি নিয়ে পরে এক প্রশ্নের উত্তরে মেয়র জানান, ‘‘নিকাশি পরিকাঠামোর ডিজিটাল ম্যাপ তৈরির কাজ প্রায় সম্পূর্ণ। এবার পানীয় জলের ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ হলে একদিকে যেমন বিশুদ্ধ পানীয় জলের অপচয় বন্ধ করা যাবে তেমনই বাড়ি বাড়ি জলের জোগান বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। এই ডিজিটাল প্রযুক্তি চালু হলে কোনও ওয়ার্ডের একটা পাড়ায় পাইপ ফুটো হলে পুরসভার হেড অফিসে খবর জানা যাবে মুহূর্তেই। শুধু তাই নয়, কোনও এলাকায় জলের লাইনে ত্রুটি হলে অকারণে অনেকটা রাস্তা খুঁড়ে পাইপ মেরামতির ঝুঁকি নিতে হবে না। ডিজিটাল ম্যাপ নির্দিষ্ট ত্রুটি চিহ্নিত করে দিলে শুধুমাত্র বিঘ্ন ঘটা এলাকার পাইপ খুঁড়লেই হবে। রাস্তা অযথা কাটতে হবে না।’’
[আরও পড়ুন: রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের আউটডোরে ‘ভূতুড়ে রোগ’! ৮ ঘণ্টায় একজন চিকিৎসক দেখছেন ৯০০ রোগী]
গোটা প্রক্রিয়ায় খড়গপুর আইআইটির বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। প্রয়োজনে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) প্রযুক্তিও ব্যবহার করবেন পুরসভার পানীয় জল বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা। কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের শহরাঞ্চলের অধিকাংশ পল্লির নিকাশির ডিজিটাল ম্যাপ তৈরির কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রায় ৫৪ বছর নানা ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজে যুক্ত থাকা নিকাশি বিভাগের মেয়র পারিষদ তারক সিংয়ের হাত ধরে এই ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি সম্পূর্ণ হওয়ায় উদ্বুদ্ধ মেয়র পানীয় জলের নেটওয়ার্ককেও ‘ডিজিটাইজেশন’ করার সিদ্ধান্ত নেন। বিভাগীয় ডিজি মৈনাক মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে তারককে জলের ডিজিটাল ম্যাপ তৈরির নির্দেশ দেন মেয়র।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘২০০০ সালে কাউন্সিলর হয়ে চেতলায় বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছতে গিয়ে দেখেছিলাম পাইপ লাইনগুলো মাকড়সার জালের মতো জড়িয়ে আছে। প্লাম্বাররা রাস্তা কেটে ফালা ফালা করেও ঠিকমতো জল পৌঁছতে পারছিলেন না।’’ বস্তুত আগামিদিনে শহরবাসীর পানীয় জলের জোগানের সমস্যা মেটাতেই যে এই ডিজিটাল মানচিত্র তৈরির সিদ্ধান্ত তা মেনে নেন মেয়র। পানীয় জলের ডিজিটাল মানচিত্রে কী কী থাকবে ও কত দিনে সম্পূর্ণ হবে? প্রশ্নের উত্তরে রাতে মেয়র পারিষদ তারক সিং জানান, ‘‘ ৭-৮ মাসের মধ্যে ওয়াটার ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি করার চেষ্টা করব।’’
[আরও পড়ুন: সোহমের চড় কাণ্ডে টেকনো সিটি থানার IC-কে শোকজ]
জানা গিয়েছে, পুরসভায় কতগুলো ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট আছে এবং আগামীতে তার তথ্য ও প্রযুক্তিগত খুঁটিনাটি থাকবে। গঙ্গা থেকে প্রতিদিন কতটা জল উঠছে ও কতটা সরবরাহ হচ্ছে, তার সঙ্গে বুস্টার ও ক্যাপসুল পাম্পিং স্টেশনকেও বিশেষ সফটওয়্যারে নেটওয়ার্কের এক সুইচের অধীনে আনা হবে। বুষ্টার স্টেশনগুলোর আয়ু ও বিভিন্ন পাড়ায় স্ট্যান্ড ট্যাপ কত এবং কতটা জল প্রতিদিন অপচয় হচ্ছে তারও তথ্য পাওয়া যাবে বলেও মেয়র জানিয়েছেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই জলের ডিজিটাল ম্যাপ তৈরির প্রাথমিক ভাবনা সম্পূর্ণ করে তারক সিং বলেন, একটা পাইপ যদি কোনও পাড়ায় ফুটো হয়ে পানীয় জল নষ্ট হয় তাহলে তা মুহূর্তে পুরসভার সদর দপ্তরে ইঞ্জিনিয়াররা জেনে যাবেন। সঙ্গে সঙ্গে যাতে তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন সেটাই এই ডিজিটাল ম্যাপ তৈরির মূল উদ্দেশ্য।