কৃষ্ণকুমার দাস: ‘বিনোদন কর’ বকেয়া থাকলে ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণযোগ্য করবে না কলকাতা পুরসভা (KMC)। বিনোদন কর মেটানোর ‘ক্লিয়ারেন্স’ সার্টিফিকেট বা রশিদ থাকলে তবেই নতুন বছরের লাইসেন্স হাতে পাবেন ব্যবসায়ী বা শিল্পোদ্যক্তারা। হোটেল-রেস্তরাঁ, ব্যাঙ্কোয়েট, শপিং মল ও বিনোদন পার্কগুলির ‘প্রমোদ কর’ যদি দীর্ঘদিন বকেয়া থাকে তবে ট্রেড লাইসেন্স বাতিলও করে দিতে পারে পুরসভা। ইংরেজি বছরের প্রথম দিন শুক্রবার শহরজুড়ে চলা না বিনোদন-উৎসব থেকে কর আদায় নিয়ে পুরসভার এমনই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন অন্যতম প্রশাসক ও বিদায়ী ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। তাঁর কথায়, “বিনোদন কর ও ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায় নিয়ে পৃথক আইন আছে। কিন্তু নাগরিক পরিষেবার স্বার্থে যুগপৎ দুই আইনের সমন্বয় করে কার্যকর করা হবে। অ্যামিউজমেন্ট ট্যাক্সের সঙ্গে লাইসেন্স-ফি কে লিংক করা হচ্ছে। শহরে বিনোদনের মাধ্যমে ব্যবসা করলে পুরসভাকে প্রমোদ কর দিতেই হবে। বিনোদন কর বকেয়া থাকলে হয় ট্রেড লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ হবে না, বাতিলও হতে পারে।” বকেয়া ‘অ্যামিউজমেন্ট ট্যাক্স’ ও কড়া ব্যবস্থার কার্যকরে ট্রেড লাইসেন্স ও বিনোদন কর বিভাগের সঙ্গে পুর আইন-বিশেষজ্ঞদের নিয়ে শীঘ্রই বৈঠকে বসছেন পুরকর্তারা।
তিলোত্তমার বুকে শীতকাল জুড়ে যে সমস্ত ‘ট্রেড ফেয়ার’ বসছে সেগুলির উদ্যোক্তাদেরও এবার পুরসভাকে ‘বিনোদন কর’ দিতে হবে বলে বিদায়ী ডেপুটি মেয়র জানান। বাণিজ্য মেলায় ‘ট্রেড প্রমোট’ করার আড়ালে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা এবং লক্ষ লক্ষ টাকার স্টল বিক্রি হয়। যতদিন ওই মেলা চলে ততদিন পুরসভাকেই জল, শৌচালয় ও বর্জ্য সংগ্রহে শতাধিক পুরকর্মী এবং গাড়ি নিয়োগ করে রাখতে হয়। বিষয়টি উল্লেখ করে অতীন জানান,“দৈনিক হারে স্টল থেকে প্রচুর অর্থ রোজগার হয়। কিন্তু বিনামূল্যে নানা পরিষেবা দিতে হয় পুরসভাকে। এটা অন্যায় ও অনৈতিক। সত্যি সত্যিই যদি ‘ট্রেড প্রমোট’ করা হয় তবে বিনোদন করে ছাড় দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কিছুতেই মকুব করা যাবে না।” তবে রাষ্ট্রের অর্থনীতি মজবুত করতে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার আয়োজিত বাণিজ্য মেলাগুলি এই আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: নাক চুলকোতে মাস্ক খুলেই বিপাকে চোর, শপিংমলে ইউরো ভরতি ব্যাগ চুরির কিনারা পুলিশের]
শহরজুড়ে কোন ওয়ার্ডে কী কী ধরনের বিনোদন উৎসব এবং অনুষ্ঠান চলছে তার তালিকা তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শুরু করেছে পুরসভা। গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে নানা টিমে ভাগ হয়ে ‘নাইট-রেইড’ শুরুও করেছে অ্যামিউজমেন্ট অফিসাররা। গোটা অভিযানটি সমন্বয় করছেন পুরসভার মুখ্য বিনোদন কর আদায় ম্যানেজার সৈকত দাশগুপ্ত। চাঞ্চল্যকর তথ্য, দক্ষিণ কলকাতার বেশ কিছু ব্যাঙ্কোয়েট আছে যেগুলির মালিকরা জানেনই যে, বিনোদন অনুষ্ঠান করতে গেলে পুরসভায় আগেই ‘অ্যামিউজমেন্ট ট্যাক্স’ জমা দিতে হয়। বিদায়ী ডেপুটি মেয়র জানান, যে সমস্ত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ‘প্রমোদ কর’ জমা না দিয়েই বর্ষ বিদায় বা বর্ষবরণে নানা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান করছে তাঁদের বিরুদ্ধে মিউনিসিপ্যাল কোর্টে মামলা করছে পুরসভা।
আসলে দীর্ঘবছর ধরে পুরসভায় বিনোদন কর নিয়ে কেউ মাথা ঘামাতেন না। দপ্তরটি গতবছরই প্রশাসক অতীনের হাতে আসার পর খতিয়ে দেখে পুরসভার রিপোর্ট, বছরে অন্তত ১০০ কোটি টাকার রাজস্ব এই বিভাগ থেকে কোষাগারে আসতে পারে। বস্তুত এই কারণে মুখ্যপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) সম্মতি নিয়েই বিনোদন খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহে নামছে পুরসভা।