তিনি দেশের সর্বকালের সেরা অধিনায়কের ক্লাবে জায়গা করে নিয়েছেন। একের পর এক ট্রফি এনে দেশকে গর্বিত করেছেন। আর সেই মহেন্দ্র সিংকেই সাংবাদিক সম্মেলনে আজ অবসরের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়? ৩৫ বছরের ধোনির কি এখনই এটা পাওনা? উত্তরের খোঁজে সুলয়া সিংহ
যৌবন যার নাম কাল সে তো বুড়ো ভাম…
আজকের ফুলমালা কালকেই বাসি…
অত্যন্ত সহজ ভাষায় অনেকটা সত্যি বলে দিয়েছে নচিকেতার গানের লাইনগুলি।
কপিল দেবের ভারত বিশ্বজয়ের পর মাঝে কেটে গিয়েছিল ২৮টা বছর। বর্তমানরা প্রাক্তন হয়ে আগামীদের জায়গা করে দিয়েছেন। আর সময়ের স্রোতে পরিবর্তনের সেই চাকা ঘুরতেই থেকেছে। কিন্তু কপিল পাজি দেশকে যা দিয়েছিলেন ২৮ বছর ধরে তা আর কেউ এনে দিতে পারেননি। অপেক্ষায় ভারী হয়েছে দেশবাসীর দু’চোখের পাতা। ২০০৩-এ সিংহের মুখ থেকে খাবার ছিনিয়ে নেওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দলের। অবশেষে খাবার জুটেছিল ছোট শহরের মধ্যবিত্ত বাড়ির এক মারকুটে অথচ ঠান্ডা মাথার ক্যাপ্টেনের আমলে। তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনি। দেশবাসীকে বিশ্বজয়ের ‘বিগ ব্রেকিং’ উপহার দিয়েছিলেন তিনি। আর মজার বিষয় হল, ২০১৬-র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি এবার আসছেন তো? অর্থাৎ আপনার প্রয়োজন মিটে গিয়েছে। হাতে নয়া অস্ত্র মজুত। তাই একে ৪৭-এর আর প্রয়োজন নেই।
এককালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে বাইশ গজ থেকে সরিয়ে এনে চালকের আসনে বসাতে চেয়েছিলেন প্রাক্তনরা। এখন সৌরভের নাম পালটে হয়ে গিয়েছে ধোনি। আর ক্যাপ্টেন কুলের হট সিটে চাওয়া হচ্ছে বিরাট কোহলিকে। এ আর নতুন কী? খেলার দুনিয়ায় তো এমনটাই হয়ে এসেছে। খারাপ পারফরম্যান্সের দায়ে এককালে রবি শাস্ত্রীর গলায় (পড়ুন কুশপুতুলে) জুতোর মালা পরিয়ে বিদায় জানানো হয়েছিল। বিশ্বজয়ী দলের নেতা কপিলকে সরানোর জন্যও তো আদা-জল খেয়ে কসরত করেছিল তৎকালীন জুনিয়র টিম। এমন উদাহরণ দুনিয়ার সব প্রান্তেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল ধোনির নেতৃত্ব নিয়ে কি সত্যিই প্রশ্নচিহ্ন তোলার সময় এসে গিয়েছে? চলতি বছরও তো এশিয়া সেরার শিরোপা মাথায় তুলেছিল ধোনির ভারত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল দল। কটা টুর্নামেন্টের নিরিখে ধোনির নেতৃত্ব বিচার করা হচ্ছে?
বছর দুয়েক আগে যখন মাহি নিজেই বুঝেছিলেন তাঁর টেস্ট থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত, তখন তো কাউকে বলে দিতে হয়নি। যে নেতা দলের স্বার্থে নিজের সবটুকু উজার করে দেন। যিনি সেরা ফিনিশারের তকমা গায়ে চাপিয়ে দলকে একের পর এক সাফল্য এনে দিয়েছেন, তিনি কি শুধুমাত্র নিজের অস্তিত্ব ধরে রাখতে স্বার্থপরের মতো দলে পড়ে থাকবেন? ক্রিকেটভক্তদের সেই উত্তর নিশ্চয়ই জানা। শুধু তো আর নেতা হিসেবে নয়, ব্যাট বা গ্লাভস হাতেও তো তিনি এখনও সমানভাবে সচল। তবে কেন সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে অবসরের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়? ৩৫ বছরের ধোনির কি এখনই এটা পাওনা?
টেস্টে কোহলির বিরাট সাফল্যের পর অনেক প্রাক্তনই তাঁকে সব ফরম্যাটে অধিনায়কের ভূমিকায় দেখতে চাইছেন। কথা হচ্ছে, ২০১৯ বিশ্বকাপে হয়তো ধোনির উত্তরসূরি হিসেবে কোহলিকেই দেখা যাবে। বরাবরের মতো এবারও নিশ্চুপ ঠান্ডা মাথার ধোনি। এসব কাণ্ডকারখানা দেখে মুচকি হেসে মনে মনে হয়তো তিনি বলছেন, ‘মনে রেখো সব্বাই, পরিণতি একটাই, সবার বয়স হবে আশি।’
The post বিরাট জমানায় কি কোণঠাসা হয়ে গেল ধোনির জৌলুস? appeared first on Sangbad Pratidin.