অভিরূপ দাস: তিনি চিকিৎসক। কত মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। এই বাংলারই সন্তান। অথচ গোটা সল্টলেক চত্বরে একটি ঘরও থাকার জন্য ভাড়া পাচ্ছেন না তিনি। ঘর খুঁজতে গিয়ে অপমানিত হতে হচ্ছে ডা: কবিউল হককে। নাম শোনার পর বাড়ির মালিক বলছেন, “পদবি হক? মানে মুসলিম? আমাদের এখানে ঘর হবে না।”
বিধাননগরের বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: কবিউল হক অত্যন্ত মর্মাহত। টানা ১ মাস ধরে সল্টলেক সেক্টর থ্রি এলাকায় বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে হাল ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। কবিউল হকের কথায়, “বাড়ি খোঁজার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত তিক্ত। সল্টলেকে নাকি প্রগতিশীল মানুষের বাস। কিন্তু বাস্তবে দেখলাম হক পদবিটাই মুখ্য বিচার্য।”
ডা: কবিউল হকের জন্ম, শৈশব, বেড়ে ওঠা এ রাজ্যের মুর্শিদাবাদে। স্কুল, মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনার পরে চিকিৎসক হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু এই বাংলাতেই। তবু মাথা গোঁজার জন্য খাস কলকাতা শহরে তিনি ভাড়ার ঘর পাচ্ছেন না। কারণ? চিকিৎসক বলছেন, “আমি সংখ্যালঘু তাই।” অন্ধকার কাটিয়ে আলোয় ফেরার উৎসব দীপাবলি (Diwali 2021)। সেই দিনেও এমন খবরে বিস্মিত বুদ্ধিজীবীরা। শিক্ষাবিদ, সমাজবিদ মীরাতুন নাহার প্রশ্ন তুলেছেন, “কালীপুজোয় আমরা মোমবাতি, প্রদীপ দিয়ে বাড়ি সাজিয়ে আলোকিত করছি।” সে আলোয় ঘরের অন্ধকার কাটলেও মনের অন্ধকার কাটছে কি? শিক্ষাবিদের কথায়, “এই ঘটনাই প্রমাণ দিচ্ছে, এই সময়েও মানুষের ভিতরের আলোয় টান পড়ে যাচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: ঠিক যেন ‘ঘরের ময়ে’, বাড়ির কালীপুজোয় ভোগ রাঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী]
লেখিকা সমাজবিদ বোলান গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “এমন ঘটনা শুনে চমকে যাওয়ার কিছু নেই। হিংসার চোরাস্রোত দীর্ঘদিন ধরেই বহমান। যে কারণে মুসলিম বস্তিতে দু-একজন খ্রিস্টান পাওয়া গেলেও হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ মেলে না। প্রতিদিনই কলকাতা শহরে অগুনতি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বাড়ি ভাড়া চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হন।” বোলানের বক্তব্য, শত্রুতার থেকেও এর নেপথ্যে রয়েছে মারাত্মক রকমের বিচ্ছিন্নতা। তাঁর আক্ষেপ, যাঁরা রাজনীতির জগতে রয়েছেন তাঁরা কোনওদিন এই অন্ধকার কাটাতে এগিয়ে আসেন না। রাষ্ট্র সক্রিয় না হলে এই অবস্থা কাটবে না বলেই জানিয়েছেন তিনি।
পেশায় চিকিৎসক কবিউল হক। করোনা আবহে একজন চিকিৎসকের ভূমিকা অপরিসীম বললেও কম। সেই আবহেও একজন চিকিৎসককে স্রেফ মুসলিম হওয়ার কারণে ঘর দেওয়া হচ্ছে না। এমন ঘটনায় হতবাক চিকিৎসকরাও।