সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শঙ্খ ঘোষের 'হামাগুড়ি' কবিতাটার কথা মনে পড়ে? ঝড়জলের রাতে ঘুম ভেঙে কবি দেখেছিলেন জনৈক ব্যক্তি ঘরের মেঝেতে হামাগুড়ি দিয়ে ঘুরে নিজের 'মেরুদণ্ডখানা' খুঁজে বেড়াচ্ছেন। সে ছিল এক প্রতীকী অন্বেষণ। মানবসমাজের বিবর্তনে মেরুদণ্ডের ভূমিকা জানেন সকলে। আজকের দিনেও তা যে কতটা প্রাসঙ্গিক, সেকথা বলাই বাহুল্য। এবছরের দুর্গাপুজোর থিমে উঠে এসেছে সেই মেরুদণ্ডের গুরুত্ব। কলকাতার দুটি পুজোমণ্ডপ সেজে উঠছে এই থিমে। প্রস্ততি প্রায় সারা। এখন মণ্ডপের দ্বার খোলার অপেক্ষা। মেরুদণ্ড থিমে(Kolkata Durga Puja Theme 2024) পুজো করে আসলে কী বার্তা দিতে চাইল তারা, তা স্পষ্ট হবে।
কেষ্টপুরের মাস্টারদা স্মৃতি সংঘ ও বেলেঘাটা গান্ধী মাঠ ফ্রেন্ডস সার্কল। কলকাতার দুই প্রান্তের দুটি পুজোর থিম এবার মেরুদণ্ড।কিন্তু কেন এমন ভাবনা? আসলে সাম্প্রতিক ঘটনাই এই ভাবনা উসকে দিয়েছে উদ্যোক্তাদের। আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে লালবাজার অভিযান করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। আর সেখানে তাঁরা তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তাঁরা। বোঝাতে চেয়েছিলেন, পুলিশ মেরুদণ্ড হারিয়ে সরকারের কাছে ন্যুব্জ, নিজেদের কর্তব্য পালনে বিমুখ। চিকিৎসক পড়ুয়ারা নিজেদের গবেষণা কাজে ব্যবহৃত মেরুদণ্ড রেখে এসেছিলেন সিপি-র টেবিলে।
সেই থেকে মেরুদণ্ড বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর এবারের দুর্গাপুজো যেহেতু আর জি কর আবহেই হচ্ছে, সেই কারণে প্রায় সব মণ্ডপে সেই ছোঁয়া থাকবে, তা প্রত্যাশিত। তারই মধ্যে বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠছে কেষ্টপুরের মাস্টারদা স্মৃতি সংঘ ও বেলেঘাটা গান্ধী মাঠ ফ্রেন্ডস সার্কলের পুজো। বাঁশ, ত্রিপল, হাতুড়ি, ছেনি দিয়ে সেখানে তৈরি হচ্ছে আস্ত একখানা মেরুদণ্ড। সেটাই থাকবে মণ্ডপজুড়ে। কেষ্টপুরের পুজো উদ্যোক্তারা অবশ্য বলছেন, তাঁদের মূল ফোকাস শিক্ষায়। শিক্ষাই সমাজের মেরুদণ্ড। তাই মেরুদণ্ড এখানে সে অর্থে সাযুজ্যপূর্ণ। মেরুদণ্ডের মধ্যে থাকবে অক্ষর খোদাই করা।
বেলেঘাটা গান্ধী মাঠ ফ্রেন্ডস সার্কলের ৫১ তম পুজোর থিমও ভিন্ন। 'বাবা' অর্থাৎ পরিবারের কর্তা, যিনি মেরুদণ্ডসম, তাঁকে এবারের পুজো উৎসর্গ করা হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, বাবারা বরাবর থেকে যান অন্তরালেই। এবার তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। বিডন স্ট্রিটের কাছে একটি কর্মশালায় বিশাল শিরদাঁড়া তৈরি হচ্ছে। রাখা থাকবে মণ্ডপের সামনে।