shono
Advertisement

এক অঙ্গের জিনিস অন্য অঙ্গে! পেটের বিরল অস্ত্রোপচারে নজির শহরের হাসপাতালের

১০০ কোটিতে নাকি একজনের হয় এমন অসুখ।
Posted: 02:53 PM Feb 03, 2022Updated: 02:53 PM Feb 03, 2022

অভিরূপ দাস: গলব্লাডারে ঢুকে পড়েছিল হাওয়া। হাওয়া ছিল পিত্তনালিতেও। পেটের ভিতরের এক অঙ্গের জিনিস অন্য অঙ্গে! আসলে সব যে ফুটো হয়ে ফর্দাফাই। টাইপ ফাইভ মিরিজ্জি সিন্ড্রোমে ভুগছিলেন কৃষ্ণনগরের অবিনাশ কুণ্ডু। অস্ত্রোপচার করে সারানো হল বিরল অসুখ।

Advertisement

অসহ্য পেটের যন্ত্রণায় ঘুম উবে গিয়েছিল অবিনাশ বাবুর। তখনও জানতেন না পেটের মধ্যে তিন-তিনটে ফুটো! চিকিৎসকরা বক্তব্য অনুযায়ী, অবিনাশবাবুর পেট দেখেই চোখ কপালে উঠেছিল তাঁদের। পেটের মধ্যে পিত্তথলি পিত্তনালির সঙ্গে চেপে গিয়েছিল। এখানেই শেষ নয়, ফুটো হয়ে গিয়েছিল তা। পিত্তনালি ক্ষয়ে যাওয়ার এমন রোগই বিরল। সত্তর বছরের অবিনাশ কুণ্ডুর যেটা হয়েছিল, সেটা তো বিরলতম। পিত্তথলির ভিতরের জিনিসগুলো ফুটো হয়ে বেরিয়ে তো গিয়েছিলই। খাদ্যনালির সঙ্গে একটা ফুটো হয়ে তা জুড়ে গিয়েছিল।

সারা পৃথিবীর কেস স্টাডিজ খুঁজলে পিত্তথলির তিনটে ফুটো দূরবীন দিয়েও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। গ্যাস্ট্রো ইনটেস্টেনাল বিভাগের শল্য চিকিৎসক ডা. শুদ্ধসত্ত্ব সেন জানিয়েছেন, অবিনাশবাবুর ক্ষেত্রে সেটাই ছিল। পিত্তথলির তিনটে ফুটো, একটা পিত্তনালির সঙ্গে, অন্যটা পাকস্থলীর সঙ্গে তিন নম্বরটা খাদ্যনালির সঙ্গে। শহরের এক মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন অবিনাশবাবু। পেটের জড়ানো-প্যাঁচানো হাল দেখে সেখানকার চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেন। শেষমেশ নতুন জীবন যোধপুর পার্কের অশোক নার্সিংহোমে। হেপাটো-প্যানক্রিয়াটিকো-বাইলারি সার্জন ডা. শুদ্ধসত্ত্ব সেনের নেতৃত্বে অস্ত্রোপচার হয়।

[আরও পড়ুন: ‘দুয়ারে সরকারে’ মিলবে আরও পরিষেবা, নতুন কোনও প্রকল্প আপাতত নয়, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর]

কীভাবে মেরামত হল পেটের তিনটে ফুটো? অবিনাশবাবুর পেটের মধ্যে যেটুকু গলব্লাডার বেঁচে ছিল তা অতি সামান্য। মাত্র ২ সেন্টিমিটার। সহজ ছিল না অস্ত্রোপচার। পেট কেটে সাধারণ অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। ডা. সেনের কথায়, “ওই ব্যক্তির লিভারের ভিতরেও গ্যাস ঢুকে গিয়েছিল। সবকিছুকে আগের জায়গায় নিয়ে আসাটাই ছিল চ্যালেঞ্জ। জটিল এ অস্ত্রোপচারের নামও খটমট, কোলেসিসটেকটমি কোলেডোকোপ্লাস্টি থ্রিডি রেস্টোরেশন, রিপেয়ার অফ গ্যাস্ট্রোডিওডেনাল ফিসচুলা সাইট। দেড় ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের শুরুতেই ফ্লাশ করে পরিষ্কার করা হয় অঙ্গগুলি। কারণ এক অঙ্গের জিনিস অন্য অঙ্গের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল।”

পিত্তনালির দিকের ফুটো বন্ধ করার আগে তা পরিষ্কার করে নেওয়া হয়। এরপর গ্ললব্লাডারের কিছুটা অংশ নিয়ে ওই ফুটোর উপর রেখে স্টিচ করে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে পেটের চর্বির কিছুটা অংশ নিয়ে খাদ্যনালি আর পাকস্থলীর ফুটো বোজানো হয়। যে প্যাঁচ দিয়ে এই ফুটো বোজানো হয়, চিকিৎসা পরিভাষায় তা গ্রাহামস প্যাঁচ। এভাবে ফুটো বন্ধ করলে ভবিষ্যতে তা আর ‘লিক’ করার সম্ভাবনা থাকে না।

ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে কোনওক্রমে বেঁচে ছিলেন অবিনাশবাবু। আপাতত নতুন জীবন পেয়ে আপ্লুত তিনি। অবিনাশবাবুর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই চিকিৎসক। তাঁরা জানিয়েছেন, সারা পৃথিবীতে যত মানুষের গল ব্লাডারের সমস্যা হয়, তার মধ্যে মাত্র আড়াই শতাংশ মানুষের মিরিজ্জি সিন্ড্রোম টাইপ ওয়ান অথবা ফোর দেখা যায়। টাইপ ফাইভ যে সিন্ড্রোম অবিনাশবাবুর হয়েছিল, তা ১০০ কোটিতে একজনের হয়।

[আরও পড়ুন: ফের ঊর্ধ্বমুখী দেশের করোনা পরিসংখ্যান, চিন্তা বাড়াচ্ছে মৃতের সংখ্যা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement