অভিরূপ দাস: উনিশ লক্ষ হয়ে গেল সাড়ে ন’লক্ষ। এক বছরের মধ্যে ছ’লক্ষ দিলে আরও সাড়ে তিন লক্ষ ছাড়। মুর্মূষু রোগীর চিকিৎসার বিল না ফ্ল্যাট কেনার সহজ কিস্তি! বোঝার উপায় নেই।
মাঝ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। স্ট্রোক নিয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভরতি হন কাশীপুরের বাসিন্দা দীপককুমার সরকার। টানা ৭৩ দিন ভরতি ছিলেন হাসপাতালের সিসিইউতে। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে বাড়ি ফেরা হয়নি। হাসপাতালেই যে আসা বন্ধ করে দেন পরিবারের লোকেরা। রোগীকে নিয়ে হাসপাতাল আর পরিবারের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
[আরও পড়ুন: মন্ত্রীর বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ, সম্মানরক্ষায় শিক্ষকতা ছাড়লেন ‘অপমানিত’ বৈশাখী]
রোগীর পরিবার রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে জানায়, সুস্থ হয়ে গেলেও হাসপাতাল রোগীকে ছাড়ছে না। অন্যদিকে হাসপাতাল জানায়, বহুবার রোগীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও লাভ হয়নি। সুস্থ দীপকবাবুকে কেউ নিতে আসছে না। অবশেষে গত ২৮ নভেম্বর রোগীর পরিবার গিয়ে রোগীকে নিয়ে আসেন। বকেয়া ১৯ লক্ষ টাকা না মিটিয়েই!
বিল সংক্রান্ত রোগীর পরিবারের অভিযোগ জমা পরে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে। স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “প্রথমে রোগীর পরিবারের মূল অভিযোগ ছিল, হাসপাতাল রোগী ছাড়ছে না। কিন্তু ২৮ নভেম্বর রোগীকে ওঁরা বকেয়া টাকা না মিটিয়েই নিয়ে গিয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতালে পরিষেবা যখন মিলেছে তখন টাকা তো দিতেই হবে।”
অবশেষে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে রোগীর পরিবার জানায়, “এত টাকা আমাদের পক্ষে দেওয়া অসম্ভব। আমাদের পারিবারিক অবস্থার কথা ভেবে একটা মূল্য নির্ধারণ করা হোক।” এরপরেই রোগীর পরিবারের কথা ভেবে মূল বিল থেকে পঞ্চাশ শতাংশ ছাড় দেয় হাসপাতাল। অর্থাৎ উনিশ লক্ষ নয়, তার বদলে সাড়ে ন’লক্ষ শোধ করলেই হবে। স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের সহযোগিতায়, দেওয়া হয়েছে আরও একটি আকর্ষণীয় অফার। ৩১ ডিসেম্বর থেকে প্রতি মাসের শেষ দিনে পঞ্চাশ হাজার করে ১ বছরে ৬ লক্ষ টাকা দিলেই বাকি সাড়ে তিন লক্ষ টাকাও দিতে হবে না রোগীর পরিবারকে। কমিশন চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, হাসপাতাল রোগীর পরিবারের বিষয়টি মানবিকতার সঙ্গে দেখছে। রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের ইতিহাসে এত টাকা ছাড় বিরলতম বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।