কোয়েল মুখোপাধ্যায়: রাইট ব্রাদার্সের তৈরি উড়োজাহাজের রেপ্লিকা। বায়ুমণ্ডল ফুঁড়ে পৃথিবীর মাটিতে এসে পড়া উল্কাপিণ্ডের অংশবিশেষ। অ্যাপোলো ২১ স্পেসক্র্যাফট ক্যাপসুলের মডেল। এক ঝাঁক কিংবদন্তী মহাকাশচারীর ‘অটোগ্রাফ’ সম্বলিত ছবি–আরও কত কী! খুব কম করে বললেও অন্তত ১২০০টি হরেক ধরনের ‘মহাজাগতিক’ সামগ্রী থরে থরে প্রদর্শিত একের পর এক সুসজ্জিত ঘরে। জ্য়োর্তিবিদ্যা এবং মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে তুঙ্গে আগ্রহ যাঁদের, মহাশূন্যের গহন যাঁদের চুম্বকের মতো টানে, মনের বুকপকেটে যাঁরা রাকেশ শর্মা-কল্পনা চাওলা কিংবা সুনীতা উইলিয়ামস হওয়ার স্বপ্ন গুঁজে রাখেন–তাঁদের কাছে এই সংগ্রহশালা বাস্তবিক অর্থেই খাজানা। পোশাকি নাম, মিউজিয়াম অফ অ্যাস্ট্রোনমি ও স্পেস সায়েন্স। কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার অফ স্পেস ফিজিক্স-এর অন্দরে অভিনব এই সংগ্রহশালার দরজা খুলে গেল শুক্রবার সকালে। উদ্বোধন করলেন ভারতের প্রথম মহাকাশচারী (উইং কমান্ডার) রাকেশ শর্মা। সঙ্গে ছিলেন ইন্টিগ্রেটেড এয়ার চিফ মার্শাল (অবসরপ্রাপ্ত) অরূপ রাহা, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, শিক্ষা সচিব মণীশ জৈন, ইসরোর বিজ্ঞানী ড. অনুজ নন্দী, ইসরোর ডিরেক্টর অফ স্পেস সায়েন্সেস-এর প্রাক্তন অধিকর্তা অধ্যাপক সুভাষচন্দ্র চক্রবর্তী, স্পেস ফিজিসিস্ট এ আর রাও এবং আরও অনেকে। পরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন নাসার নভশ্চর ড. জন গ্রানসফিল্ড, যিনি টানা ৫৮ দিন মহাকাশে কাটিয়েছিলেন পৃথিবীতে।
[আরও পড়ুন: অসুস্থ জ্যোতিপ্রিয়, শুনানি চলাকালীন ব্যাঙ্কশাল আদালতে হারালেন জ্ঞান]
প্রথমে মঙ্গলযান এবং সম্প্রতি তৃতীয় চন্দ্রযানের আশাতীত সাফল্য নতুন করে আগ্রহ জাগিয়েছে মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে। কেন্দ্র সরকারও ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে এক ঝাঁক নতুন পরিকল্পনার তালিকা। আদিত্য এল-ওয়ান এর অভিযান চলছে, গগনযানের প্রথম ধাপের পরীক্ষাও সফল। মঙ্গল-চাঁদের পরিক্রমা সেরে ইসরো এখন ছক কষছে শুক্রে পাড়ি দেওয়ার। এমনকী, ভারতের নিজস্ব স্পেস সেন্টারের নকশাও তৈরি হচ্ছে। এই সব কিছু যা এখন হচ্ছে, আগে ছিল না। আগে সুযোগ ছিল অনেকটাই সীমিত, দাবি উইং কমান্ডার রাকেশ শর্মার। যদিও বছর চুয়াত্তরের এই প্রবীণের কথায়, ‘‘বর্তমানে ছবিটা পাল্টেছে। তা হয়েছে ভালর জন্যই। দেশের নতুন প্রজন্মের মধে্য উদ্দীপনার কোনও অভাব নেই। আমার মনে হয়, শুধু চন্দ্রযানের সাফল্যে আমরা থেমে থাকব না। সময় এসে গিয়েছে, মহাকাশ-বিজ্ঞানে ভারত আরও নতুন নতুন কৃতিত্ব অর্জন করবে।’’ অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর পর এই সময়টায় আমরা বাঙালিরা কারও সঙ্গে দেখা হলে বলি শুভ বিজয়া। সেই আবহেই উদ্বোধন হল বিশ্বমানের এই সংগ্রহশালার। অভিনন্দন।’’ ইন্ডিয়ান সেন্টার অফ স্পেস ফিজিক্সের ডিরেক্টর সঞ্জীব চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘এই সংগ্রহশালা আমরা উৎসর্গ করেছি রকেট-তৈরির পুরোধা স্টিফেন হেক্টর টেলর স্মিথ এবং প্রখ্যাত বেলুনিস্ট রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি বেলুনে সওয়ার হয়ে সোদপুর পৌঁছেছিলেন ৪০ মিনিটে।’’