স্টাফ রিপোর্টার: “আপনারা অশিক্ষিত। কিস্যু জানেন না। আমার যা জ্ঞান আছে তার চার আনাও নেই আপনাদের। ডাক্তার হয়ে বসে আছেন।” মানসিক রোগীর এহেন উন্নাসিকতায় চক্ষু চড়কগাছ চিকিৎসকদের। ট্রিটমেন্ট দূর অস্ত, উলটে মানসিক রোগীর কাছ থেকে তাঁদের শুনতে হল, “আমার সমস্ত পড়া হয়ে গিয়েছে। আপনারা পড়ুন।” তার জন্য তৈরি হওয়া মেডিক্যাল টিম বলছে, “এমন অদ্ভুত মানসিক রোগী সাম্প্রতিক অতীতে দেখি নি। এ তো বলছে সবই জানে। বিজ্ঞান জানা কেউকেটা!”
তবে মায়ের মৃতদেহ রেখে দেওয়া নিয়ে ঝেড়ে কাশছেন না শুভব্রত। কিছু কথা তিনি মনেই রেখে দিচ্ছেন। এমনটাই মত চিকিৎসকদের।
এদিকে বেশি প্রশ্ন করলেই ‘সাইকো’র সাফ জবাব, “সব কিছু শেয়ার করতে পারব না মাফ করবেন।” এই চেপে রাখা কথা কী করে বের করা যায় এই নিয়েই আপাতত চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন চিকিৎসকরা। সাজানো হয়েছে বেশ কিছু প্রশ্নমালা। সাইকোমেট্রি টেস্টের পরেই ধোঁয়াশা কাটতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
[মরা মানুষকে বাঁচিয়ে তোলার ‘ফর্মুলা’ জেনে ফেলেছিলেন বেহালার শুভব্রত]
তবে মানসিক হাসপাতালে এক ধাক্কায় অনেকটাই শান্ত সাইকো। রবিবার সকালে প্রাতঃরাশ করেছেন। দুপুরে স্নান করে দু’মুঠো ভাত। বৃহস্পতিবার বেহালায় শুভব্রতর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তাঁর মায়ের মৃতদেহ। তিন বছর সে দেহ ফ্রিজারে রেখে দিয়েছিলেন তিনি। দেহ বের করে আনতে গেলে রাশিয়ান ভাষায় পুলিশকে ধমকেছিলেন। তবে এদিন শারীরিক ব্যবহারে অনেকটাই নিস্তেজ লেগেছে শুভব্রতকে। আপাতত বেশ কিছু ওষুধ খেতে হচ্ছে তাঁকে। “এর মধ্যে অনেক ওষুধ খেলেই ঘুম পায়। হয়তো সে কারণেই একটু নিস্তেজ হয়ে আছে।” জানিয়েছে চিকিৎসার জন্য তৈরি হওয়া সাত সদস্যের মেডিক্যাল টিম। সে টিমে রয়েছেন পাভলভের সুপার ডা. গণেশ প্রসাদ। রয়েছেন দু’জন সাইকোলজিস্ট ডা. গীতশ্রী সাহা, ও ডা. জয়তী সাহা। চিকিৎসক অমিতাভ দাঁ, শিবাশিস রায়, অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়। কলকাতা চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের (দ্বিতীয় ক্যাম্পাস) সাইকিয়াট্রি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সৃজিত ঘোষ।
ডা. ঘোষ জানিয়েছেন, আপাতত লম্বা ঘুমের দরকার শুভব্রতর। ওঁর কথাবার্তায় মনে হচ্ছে ব্রেন সেলগুলো হাইপার অ্যাক্টিভ হয়ে রয়েছে। সেগুলোকে আগে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে হবে। এরই মধ্যে প্রস্তুতি চলছে সাইকোমেট্রি টেস্টের। এর জন্য বিশেষ কিছু প্রশ্নমালা তৈরি করা হচ্ছে। “ও এমন কিছু কথা বলছে যার একটার সঙ্গে একটার মিল নেই। সাযুয্যের অভাব। অবিশ্বাস্য কিছু একটি জিনিসে হয় ও বিশ্বাস করে নয়তো আমাদের অমানুষিক কিছু বোঝাতে চাইছে।” এমনটাই মত ডাক্তারের।
[এই প্রযুক্তিতেই মায়ের দেহ সতেজ রেখেছিলেন শুভব্রত]
The post ‘চার আনা জ্ঞান নেই আপনাদের’, শুভব্রতর কথায় চিকিৎসকদের চক্ষু চড়কগাছ appeared first on Sangbad Pratidin.