অভিরূপ দাস: স্তন ক্যান্সারে বাদ দিতে হয় বুকের সিংহভাগ। পিঠ কেটে নতুন স্তন বানানোর ঝক্কি অনেক। ল্যাটিসিমাস ডরসি মাসল বাদ পড়ায় ভারী কিছু বইতে পারেন না ক্যানসারমুক্ত ব্যক্তি। কুয়ো থেকে জল তুলতে গেলেও জোর পান না হাতে। তাই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্রেস্ট এন্ডোক্রাইন বিভাগে শুরু হল আন্তর্জাতিক মানের লাইক্যাপ ফ্ল্যাপ পদ্ধতি।
এই পদ্ধতিতে পিঠ থেকে মাংস নিলেও ল্যাটিসিমাস ডরসি মাসলে হাত দেওয়া হয় না। তবে অস্ত্রোপচারের আগে ডপলার করে রক্ত সঞ্চালন দেখে নেওয়া আবশ্যিক। রক্ত সঞ্চালনের ধমনীগুলো অত্যন্ত সরু। তা বাঁচিয়েই করতে হয় এই জটিল অস্ত্রোপচার। ল্যাটেরাল ইন্টারকোস্টাল আর্টারি পারফোরেটর বেসড ফ্ল্যাপ বা লাইক্যাপ পদ্ধতিতে সফল অস্ত্রোপচার করে শিরোনামে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ (Kolkata medical college)।
[আরও পড়ুন: সমাজে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে পুরুষদের, অধিকারের দাবিতে কলকাতায় ‘মেন কি বাত’]
ব্রেস্ট এন্ডোক্রাইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. ধৃতিমান মৈত্র ইতিমধ্যেই এক মহিলার শরীরে এই অস্ত্রোপচার করেছেন। তাঁকে বাহাত্তর ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখে ছুটিও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, ওই মহিলা মধুমিতা দাশ (নাম পরিবর্তিত) স্তন ক্যানসারে (cancer) আক্রান্ত ছিলেন। টিউমারটা বাদ দেওয়ার সময় পেল্লায় এক গর্ত তৈরি হয়েছিল তাঁর বুকে। সেটাকে মেরামত না করলে ওই গহ্বরটার মধ্যে পুঁজ জমে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে টিউমারটা বাদ দেওয়ার সময় স্তনের চামড়ায় হাত দেওয়া হয়নি। বাদ দেওয়া হয়েছিল ভিতরের টিস্যু। ডা. মৈত্রর কথায়, সহজভাবে বোঝাতে গেলে এই অস্ত্রোপচার ছিল অনেকটা শিঙাড়ায় পুর ভরার মতো। স্তনের ওই চামড়ার মধ্যে মাংস ভরে তাকে হুবহু আগের জায়গায় নিয়ে আসতে হত।
ওই মহিলার পিঠের থেকেই মাংস নেওয়া হয়। তবে ল্যাটিসিমাস ডরসি মাসলে হাত দেওয়া হয়নি। স্রেফ চর্বি আর সাবকুটেনিয়াস টিস্যু সূক্ষ্ম হাতে তুলে নেওয়া হয়। এরপর ডপলার আল্ট্রাসাউন্ড করে দেখে নিতে হয়, যে অংশটা নেওয়া হয়েছে তার রক্ত সঞ্চালনের চিত্রটা। মাংসটা কেটে বের করার সময় সজাগ থাকতে হয়, আর্টারিগুলো যেন কোনওভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যেখানে বসানো হবে সেখানে যে ওই পথেই প্রবেশ করবে রক্ত। এরপর চামড়াটাকে সরিয়ে, বুকের গর্তে ওই মাংসটাকে বসিয়ে দেওয়া। স্তনে যেহেতু ত্বক ছিলই তাই আলাদা করে ত্বকের প্রয়োজন নেই। বিলেতে লক্ষাধিক টাকায় এ চিকিৎসা মিললেও রাজ্যের সরকারি মেডিক্যালে হচ্ছে নিখরচায়। রাজ্যে ডেডিকেটেড ব্রেস্ট ক্লিনিক বলতে এসএসকেএম ছিল প্রথম। তারপর রাজ্যে সরকারি স্তরে মেডিক্যাল কলেজের ব্রেস্ট এন্ডোক্রাইন বিভাগও জটিল অস্ত্রোপচার করে সাড়া ফেলে দিয়েছে।