কৃষ্ণকুমার দাস: স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগী ভরতি করে আধুনিক যাবতীয় চিকিৎসা দেওয়া হবে। এমন শর্তেই কলকাতার যেকোনও বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম বেডসংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারবে। এমনকী, পরিকাঠামোগত ছাড় থাকলে পুরনো হাসপাতালের ওয়ার্ডও সম্প্রসারণে অনুমতি মিলছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ভরতির ‘মুচলেকা’ দিলেই। বুধবার চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে এমন বাড়তি সুবিধার কথা জানিয়েছেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাংলার যেকোনও বাসিন্দাকেই বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া নিয়ে কড়া নজরদারি চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এতদসত্ত্বেও বহু বেসরকারি হাসপাতাল ‘বেড ফাঁকা নেই’ বলে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে আসা মুমূর্ষু রোগীদের প্রত্যাখ্যান করছে বলে অভিযোগ। কিন্তু এবার বিল্ডিং নির্মাণে ‘অতিরিক্ত ফ্লোর এরিয়া’ চেয়ে আবেদন করা বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে স্বাস্থ্যসাথীতে ভরতি নিয়ে নয়া শর্তে বাঁধলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যে মল্লিকবাজারের ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্স, মেডিকা সুপারস্পেশালিটি ও উডল্যান্ড হাসপাতালকে এই বিশেষ শর্তে বাড়ি তৈরিতে বাড়তি ‘ফ্লোর-এরিয়া’ মঞ্জুরও করেছেন মেয়র। ফিরহাদের কথায়,‘‘যে ফ্লোর বাড়তি নেবে সেখানে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগী ভরতির ওয়ার্ড করতেই হবে। বাংলার মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে মুখ্যমন্ত্রী যে প্রয়াস নিয়েছেন তা আরও বেশি করে কার্যকর করতে এটা কলকাতা পুরসভার নীতিগত সিদ্ধান্ত।’’
[আরও পড়ুন: চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে বিপত্তি, দেউলটিতে মৃত কলেজ ছাত্রী]
অবশ্য মেয়রের শর্তে বেসরকারি হাসপাতালে বৃদ্ধি হওয়া বেডে শুধুমাত্র কলকাতার বাসিন্দারাই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসার সুবিধা পাবেন বলে পুরসভা সূত্রে খবর। স্বাস্থ্যসাথীর শর্তে সম্প্রসারিত ওই ওয়ার্ডে ভরতির সময় আধার কার্ডের মাধ্যমে কলকাতার বাসিন্দা কি না তা পরিচয় যাচাই করে নেবে হাসপাতালগুলি।
কলকাতায় বাইপাসের পাশে ও দক্ষিণ কলকাতায় বাম জমানায় সরকারি জমি নামমাত্র মূল্যে নেওয়ার সময় গরিবদের চিকিৎসায় ছাড়ের শর্তে স্বাক্ষর করলেও পরে তার বিন্দুমাত্র কার্যকর করেনি। বিষয়টি নিয়ে অজস্র অভিযোগ এসেছে নবান্নে। খোদ স্বাস্থ্যভবনেরও সরকারি জমি পাওয়া ওই দুই হাসপাতালের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে।
যদিও ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সও (আইএনকে) কলকাতা পুরসভার কাছ থেকে মল্লিকবাজারে শর্তসাপেক্ষে জমি নিয়ে হাসপাতাল তৈরির পর মেয়রের সুপারিশ মেনে পুরকর্মীদের সুবিধা দিচ্ছে বলে দাবি। মাসকয়েক আগে বর্তমান বাড়িতেই একটি বাড়তি ফ্লোরের জন্য আবেদন করে কর্তৃপক্ষ। আর তখনই ফিরহাদ হাকিম শর্ত দেন, অতিরিক্ত ফ্লোরে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগীর ওয়ার্ড করলে তবেই বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন করব।
এদিন মেয়র ফিরহাদ জানান, ‘‘নিউরো সায়েন্সের মতো উডল্যান্ড ও মেডিকাও স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগী ভরতির শর্ত মেনে নেওয়ায় প্ল্যান মঞ্জুর করেছি। কলকাতা পুরসভার অফিসার ও কর্মীদের পাশাপাশি শহরের বাসিন্দারাও স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে বর্ধিত বেডে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন।’’ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা দ্রুত কার্যকরে কলকাতা পুরসভা আরও একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে মেয়র ইঙ্গিত দেন।