অর্ণব আইচ: সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের চক্রের এক মাথা ভিনরাজ্যের এক সুন্দরী। মনজিৎ কউর নামে ওই সুন্দরী যুবতীর বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করল লালবাজার। এ ছাড়াও আরও ৬ জনের বিরুদ্ধেও লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ জারি করেছে লুক আউট নোটিস। কলকাতা পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের নাম। যে পদ্ধতিতে হাজারেরও বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কলকাতায় আসা এই বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, তা-ও জানতে পেরেছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। টাকার উৎস সম্পর্কেও চলছে খোঁজ।
পুলিশ জানিয়েছে, মধ্য কলকাতার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ১১টি অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ ওঠে। ওই বিপুল পরিমাণ টাকা সিঙ্গাপুর, হংকং ও চিনের কয়েকটি সংস্থার অ্যাকাউন্টে পৌঁছেছে। ওই বিদেশি সংস্থাগুলির ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য পেতে বিদেশমন্ত্রককে চিঠি লিখছে লালবাজার। এখনও পর্যন্ত এই টাকা পাচারের চক্রের মোট ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে মনমিত কউর নামে উজ্জয়িনীর বাসিন্দা এক সুন্দরী মহিলা। আরও দু’জনের সঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি। ওই মহিলাকে জেরা করে জানা যায় যে, তাঁরই এক ঘনিষ্ঠ সঙ্গী বিদেশে টাকা পাচার চক্রের মাস্টারমাইন্ড। মনমিতকে টানা জেরা করেই সন্ধান মেলে আরও এক সুন্দরী মনজিৎ কউরের। তদন্তে গোয়েন্দারা জেনেছেন, মূলত গুজরাট ও রাজস্থানের বেশকিছু ব্যবসায়ী নিজেদের কালো টাকা সাদা করার জন্য এই চক্রের সাহায্য নেয়।
[আরও পড়ুন: নজরে আমজনতার ভোগান্তি! কর্ণাটকের গদিতে বসেই বড় সিদ্ধান্ত সিদ্দারামাইয়ার]
মুম্বই-সহ মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরের বহু ব্যাংকে ভাড়ার অ্যাকাউন্ট বা ‘মিউল অ্যাকাউন্ট’ খোলে এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড প্রলয়। ওই ব্যক্তির পরিবার প্রবাসী বাঙালি। তার বাবা মুম্বইয়ের ভারসোভার বাসিন্দা ছিলেন। কাপড় শিল্প সংক্রান্ত কাজ করতেন। ছেলে ফার্মাসি নিয়ে পড়াশোনা করলেও হাত পাকায় জালিয়াতিতে। গুজরাট ও রাজস্থানের হাজারো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোটি-কোটি টাকা হাওলার মাধ্যমে নিয়ে আসে মহারাষ্ট্রে। সেই টাকা হাজারের উপর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রেখে তা লেনদেন করা হয় শ’খানেক অ্যাকাউন্টে। সেখান থেকে কলকাতার ১১টি সংস্থার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয় টাকা।
গোয়েন্দারা জেনেছেন, ওই পুরো সাড়ে ৪ কোটি টাকার বিভিন্ন জিনিস বিদেশ থেকে আমদানি হয়েছে বলে দেখানো হয়। প্রত্যেকবার আমদানির জন্য ভুয়া নথি তৈরি করে ওই চক্রটি। ভুয়া আমদানির নথির বদলে ওই সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয় বিদেশের সংস্থার অ্যাকাউন্টগুলিতে। ওই সংস্থাগুলিও ভুয়ো বলে অভিযোগ গোয়েন্দাদের। তাঁদের মতে, পরে ওই টাকাই ফের হাওলার মাধ্যমে চলে আসে মুম্বইয়ে। মুম্বই থেকে সেই টাকা আমদানির রসিদের মাধ্যমে পৌঁছে যায় গুজরাট ও রাজস্থানের ব্যবসায়ীদের সংস্থায়। এভাবে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা সাদা করা হয়। তার জন্য কোটি-কোটি টাকা কমিশন নেয় ওই চক্রটি।
[আরও পড়ুন: ‘বিচার নেই, ৩০০ দিনের বেশি আটকে আছি’, হতাশ পার্থ]
এই বিপুল টাকা পাচার ও কমিশন জোগাড় করার ব্যাপারটি আলিপুরের ফ্ল্যাটে বসে নিয়ন্ত্রণ করত মাস্টারমাইন্ড প্রলয়, তার ভাই সন্দীপ দাস, সঙ্গিনী মনমিত কউর ও আরও এক সঙ্গী রজনীশ বায়েন। মুম্বই ও অন্যান্য শহরে বসে এই চক্র নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয় অন্য সুন্দরী পান্ডা মনজিৎ কউর ও তার আরও সঙ্গীদের উপর। মাস্টারমাইন্ড কলকাতা-সহ বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে চক্রটির দেখভাল করত। এবার ওই সুন্দরী পান্ডা মনজিৎ-সহ বাকিদের সন্ধানে দেশের কয়েকটি শহরে তল্লাশি চালাচ্ছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। মাস্টারমাইন্ড ও অন্য মাথারা যাতে বিদেশে না পালিয়ে যায়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।