অর্ণব আইচ: আলু–পিঁয়াজের কালোবাজারি রুখতে কলকাতার ৪৫টি বাজারে অভিযান চালাল কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) এনফোর্সমেন্ট শাখা। বৃহস্পতিবারই পিঁয়াজ (Onion) নিয়ে নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার। কোনও পাইকারি বিক্রেতা ২৫ মেট্রিক টন ও খুচরো বিক্রেতা দুই মেট্রিক টনের বেশি পিঁয়াজ মজুত করতে পারবেন না। শুক্রবারও এই নির্দেশিকার কথা জানতেন না বহু ব্যবসায়ী। অভিযান চালানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সচেতনও করলেন এনফোর্সমেন্ট শাখার গোয়েন্দারা। পুলিশ জানিয়েছে, এদিন সকাল থেকেই এনফোর্সমেন্ট শাখার চারটি টিম ওই বাজারগুলোতে হানা দেন।
ডিসি (ইবি) বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, এদিন বাজারগুলোতে পুলিশ আধিকারিকরা পিঁয়াজের খুচরো ও পাইকারি বিক্রেতাদের দোকানে যান। তাঁদের কাগজপত্র ও স্টক পরীক্ষা করা হয়। যদিও পিঁয়াজের অতিরিক্ত স্টক কেউ রেখেছেন, এখনও পর্যন্ত সেই প্রমাণ মেলেনি। যে ব্যবসায়ীরা পিঁয়াজ মজুত করা নিয়ে নির্দেশিকার কথা জানেন না, তাঁদেরও সচেতন করা হয়। কোনও বাজারে যাতে পেঁয়াজ, আলু বা সবজি নিয়ে যাতে কালোবাজারি না হয়, সে বিষয়টির উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেই কারণে পিঁয়াজের সঙ্গে সঙ্গে আলু ও অন্যান্য সবজির দামও খতিয়ে দেখা হয়।
[আরও পড়ুন: করোনা আবহে ছট পুজো, ভিড় এড়াতে জলাশয় ও ঘাটের সংখ্যা বাড়াচ্ছে কলকাতা পুরসভা]
পুলিশের এক সূত্র জানিয়েছে, বেশিরভাগ বাজারে আলুর দাম কিলো প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। বেশিরভাগ জায়গাতেই অবশ্য দাম ৩৮ টাকা। এর মধ্যেও গোয়েন্দাদের একটি টিম বাঘাযতীন বাজারের একটি দোকান ও অন্য একটি টিম বেহালা বাজারের একটি দোকানে হানা দিয়ে দেখেন, কিলো পিছু ৪২ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে আলু। গোয়েন্দারা ওই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সঙ্গেই আলুর দাম ৪০ টাকার মধ্যে রাখতে বলেন। এই ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা পুলিশকে বলেন, যেহেতু আলু খদ্দেররা বেছে নেন, তাই সামান্য নষ্ট হয়ে যাওয়া বা একটু কাটা আলু কেউ নিতে চান না। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় প্রচুর পরিমাণ খারাপ আলু পড়ে থাকছে, যেগুলি বিক্রির উপায় থাকে না বললেই চলে। সেই কারণেই দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। যদিও এই যুক্তি শোনেননি পুলিশ অফিসাররা।
পিঁয়াজের ক্ষেত্রে পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতার বিভিন্ন এলাকার বাজারে দামের ফারাক রয়েছে। মধ্য বা উত্তর কলকাতার থেকে দক্ষিণ কলকাতায় পিঁয়াজের দাম অনেকটাই বেশি। দেখা গিয়েছে, মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট (New Market) থেকে শুরু করে কোলে মার্কেট, কলেজ স্ট্রিট, বউবাজার, তালতলা মার্কেটে খুচরো বাজারে পেঁয়াজ কিলো পিছু ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার, শোভাবাজার থেকে শুরু করে ফুলবাগান, রাজাবাজার, বাগমারি, উল্টোডাঙায় গড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে পিঁয়াজ । সেখানে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজার, ল্যান্সডাউন মার্কেট, গড়িয়াহাট, যাদবপুর, বাঘাযতীন, কসবার রামলাল মার্কেট, গলফ ক্লাব বাজারে গিয়ে ইবির গোয়েন্দারা দেখেন কিলো পিছু ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে পিঁয়াজ । আবার বেহালা, সখের বাজার, খিদিরপুরের বাবুবাজার, চেতলা, নিউ আলিপুরের বাজারগুলিতে দেখা গিয়েছে কিলোয় ৫৫ থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: দীপাবলি, ভাইফোঁটার বিশেষ মিষ্টি নিরাপদ তো? মান যাচাই করে পাশমার্ক দেবে কলকাতা পুরসভা]
EB-র এক কর্তা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জেনেছেন, একেকটি বাজারে দেশের একেক জায়গা থেকে পিঁয়াজ আমদানি হয়। এ ছাড়াও দেখা গিয়েছে, একেকটি বাজারে পিঁয়াজের মান একেক রকমের। তাই বাজার অনুযায়ী এর দামের তারতম্য হচ্ছে। কলকাতার প্রায় ৬০টি বাজারে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এখন প্রত্যেকদিন এই অভিযান চলবে। যে অফিসাররা অভিযানে যাচ্ছেন, তাঁরা প্রত্যেকদিন ইবি দফতরে রিপোর্ট জমা দিচ্ছেন। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।