অর্ণব আইচ: রেহাই নেই শহরের ইভটিজারদের। কোনও স্কুল ছাত্রীকে ইভটিজিং করলে রোমিওকে এক হাত নিতে পারবে ‘রাণী লক্ষ্মীবাঈ’রাই। তার জন্য কলকাতার প্রত্যেকটি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ শুরু করছে কলকাতা পুলিশ। এই মাসেই কলকাতার ২৩৩টি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাদের নিয়ে বৈঠক করতে চলেছেন লালবাজারের পুলিশকর্তারা।
পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতার মহিলাদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছে ‘তেজস্বিনী’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় এখনও পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কয়েক হাজার মহিলা। এবার শুধু স্কুলের ছাত্রীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে কলকাতা পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গ সমগ্র শিক্ষা মিশন ও কলকাতা পুলিশের যৌথ উদ্যোগে এবার শুরু হচ্ছে ‘রাণী লক্ষ্মীবাঈ আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ।’ লালবাজারের এক কর্তা জানান, স্কুলে-স্কুলে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ কলকাতা পুলিশের কাছে নতুন নয়। এর আগে ‘সুকন্যা’ প্রকল্পে কলকাতা পুলিশ একের পর এক বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষর সঙ্গে আলোচনার পর ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে। এভাবে ‘সুকন্যা’র আওতায় ৯৬টি স্কুলের ছাত্রীরা প্রশিক্ষণ নেয়। ছাত্রীদের মূলত ক্যারাটে, কুংফু, তাইকোন্ডের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এর ফলও মেলে।
[আরও পড়ুন: ‘নীতি, আদর্শ ভাল’ বলে তৃণমূলে যোগ দিলেন ভাঙড়ের জয়ী আইএসএফ প্রার্থী]
পুলিশ সমীক্ষা করে দেখেছে, বিভিন্ন সময় ভিড়ের মধ্যে ইভটিজিং ও শ্লীলতাহানির আগেই রোমিওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে ছাত্রীরা। এমনকী, কোনও রোমিও বাড়াবাড়ি করলে আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করেছে তারাই। এবার যাতে শহরের প্রত্যেক স্কুলের ছাত্রী রাস্তায় যাতায়াতের সময় আত্মরক্ষা করতে পারে, সেই ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। এই নতুন প্রকল্প ‘রাণী লক্ষ্মীবাঈ আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ’প্রকল্পেও বিভিন্ন ধরনের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কমিউনিটি পুলিশের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে শিক্ষাদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
কলকাতা পুলিশের হাতে এসেছে কলকাতার ২৩৩টি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের তালিকা। এবার ওই ২৩৩টি স্কুলের ছাত্রীদেরই আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার। ইতিমধ্যে স্কুলগুলির সঙ্গে কলকাতা পুলিশ যোগাযোগও করেছে। কলকাতার কমিউনিটি পুলিশ শাখার পরিকল্পনা অনুযায়ী, টানা তিনমাস স্কুলের ছাত্রীদের দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ। প্রত্যেক শনিবার করে ক্লাস নেওয়া হবে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ। তবে প্রথমে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণি ও তার পরের পদক্ষেপে নবম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। স্কুল লাগোয়া মাঠ অথবা স্কুলের নিজস্ব বড় হলঘর থাকলে সেখানেই হবে প্রশিক্ষণ। যে স্কুলে সেই ব্যবস্থা নেই, সেই স্কুল কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নেবে, কোথায় প্রশিক্ষণ হবে। কারণ, একসঙ্গে ক্যারাটে, কুংফু বা তাইকোন্ড শিখতে গেলে পর্যাপ্ত জায়গার প্রয়োজন। প্রত্যেক শনিবার বাইরে থেকে দু’জন করে বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ দিতে আসবেন। তাঁদের মধ্যে থাকবেন একজন মহিলা। তাঁরা স্কুলের শারীরশিক্ষার শিক্ষক বা শিক্ষিকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখবেন। প্রশিক্ষণের সময় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও উপস্থিত থাকবেন।
[আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতি: চাপ দিয়ে মিথ্যে বলাচ্ছে ইডি! প্রমাণ খামবন্দি করে আদালতে হাজির কুন্তল ঘোষ]
আগামী ২৩ আগস্ট আলিপুর বডিগার্ড লাইনের হলে কলকাতা পুলিশের কর্তারা ২৩৩টি স্কুলের প্রধানশিক্ষক, সহ প্রধানশিক্ষক, শরীরশিক্ষার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের এই আত্মরক্ষার প্রকল্প সংক্রান্ত বিস্তারিত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানানো হবে। সেখানেই বলা হতে পারে, কবে থেকে শুরু হবে প্রশিক্ষণ। এর পর কলকাতার বেসরকারি স্কুল ও কলেজগুলির ‘রাণী লক্ষ্মীবাঈ’দের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।