অর্ণব আইচ: ছাগল লুট! তাও আবার একটি, দু’টি নয়, দোকানের গ্রিলের তালা ভেঙে দশটি নধর খাসি লুট করে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। আর সেই খাসির সন্ধানে কলকাতা (Kolkata) ও তার আশপাশের জেলায় তোলপাড় পুলিশের। পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটা, নারকেলডাঙা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঞ্চলের সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশের মতে, ছাগল বা খাসি চুরির পিছনে রয়েছে একটি ‘চক্র’, যা এসব প্রাণী চুরি করে অন্যান্য জেলায় পাচার করে। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ‘চক্র’ এই জন্যই বলা হচ্ছে, রীতিমতো ছক কষে তারা ছাগল ‘লুট’ করে। শুধু কলকাতা নয়, তাদের নজর থাকে বিভিন্ন জেলার দিকেও। একদিকে, তারা নজর রাখে বিভিন্ন বাজারের খাসির মাংসের দোকানের উপর। অনেক দোকানই আগে থেকে খাসি কিনে রাখে। পরপর দু-একদিন মাংস বিক্রি করার জন্য খাসিগুলি দোকান লাগোয়া বা দোকানের তলার দিকে গ্রিলের খাঁচায় রেখে দেন মাংস বিক্রেতারা। সঙ্গে দেওয়া থাকে কাঁঠালের পাতা ও জল। এর আগেও একাধিক দোকানের গ্রিল ভেঙে দুষ্কৃতীরা লুট করে পালিয়েছে একাধিক খাসি। অন্যদিকে, যাঁরা ছাগল ও ভেড়া নিয়ে দোকান বা ডিলারদের সরবরাহ করতে যান, তাঁদের দিকেও নজর থাকে এই দুষ্কৃতীদের। সাধারণত ছাগল ও ভেড়া পালে পালে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কলকাতার ময়দান বা জেলার কোনও ফাঁকা জায়গায় প্রাণীগুলিকে ঘাস খেতে দেওয়া হয়।
তখনই দুষ্কৃতীরা সুযোগ নেয়। একটু দূরে গাড়ি রেখে দিয়ে কয়েকটি ছাগল বা ভেড়া কোলে করে নিয়ে এসে গাড়িতে তোলে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পালিয়ে যায় তারা। এর আগেও কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার পুলিশের কাছেও অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সম্প্রতি নারকেলডাঙার বাসিন্দা এক মাংস ব্যবসায়ী অভিযোগ জানান যে, বেলেঘাটার রাসমনি বাজারের ভিতর তাঁর খাসির মাংসের দোকান রয়েছে। তাই তিনি দেড় লক্ষ টাকারও বেশি দাম দিয়ে, রীতিমতো বাছাবাছি করে, একসঙ্গে দশটি নধর খাসি কেনেন। তার পর তাঁর দোকানের মধ্যেই গ্রিল দেওয়া খাঁচায় সেগুলিকে বন্দি করে বাড়ি চলে আসেন। গ্রিলের খাঁচায় তালা দেওয়া ছিল। সকালে দোকানে এসে তালা খুলতে গিয়েই দেখেন যে, গ্রিলের তালা ভাঙা। দুষ্কৃতীরা লুট করেছে দশটি খাসি। এই ব্যাপারে ব্যবসায়ী বেলেঘাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ তদন্ত শুরু করার পর বাজারের একটিমাত্রই সিসিটিভির ক্যামেরা খতিয়ে দেখে। কিন্তু তাতে কিছু পাওয়া যায়নি। এবার বেলেঘাটা ও নারকেলডাঙা থানা এলাকায় রাস্তার ট্রাফিক পুলিশের বেশ কিছু সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করছেন বেলেঘাটা থানার আধিকারিকরা। আবার নারকেলডাঙায় ছাগলের আড়াতে গিয়েও পুলিশ খোঁজখবর নেয়। কিন্তু ওই খাসিগুলির সন্ধান মেলেনি। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, সম্ভবত দুষ্কৃতীরা প্রাণীগুলিকে হাতিয়ে নেওযার পর কোলে করে বা হাঁটিয়ে নিয়ে যায়নি। কোনও গাড়িতে করে নিয়েই পালিয়েছে। তাই গাড়ির সন্ধান চালিয়েই লুট করা খাসিগুলির খোঁজ চালানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
